প্রেয়সীর ডাক : নুরউদ্দিন তালুকদার

তোমারে স্মরণ করি
স্বপ্নসারথি, স্বপ্ন সহযোগি
ওগো, আমার আগত প্রিয়া,
সহজে না-পাওয়ার বুকে ভালবাসার তৃষ্ণা-জাগাইয়া!
তোমার স্মরণ করি….
হে আমার রুপসীনী,
মায়াপরী, সৌন্দর্যের কুমারী, তুমি মোর অর্ধাঙ্গিনী।
তোমারে স্মরণ করি
প্রিয় নামে ডাকা, বারেবারে কাছে আসা, কাছে ডাকা;
আমার স্মরণ করা তোমার শ্রবণে লহ, লহ অফুরন্ত ভালবাসা…..
কিছু জানিয়ে দেয়া, আবার কিছু গোপন-কামিনীর স্বভাবে আবদ্ধ রাখা, ওগো মোর চির চেনা প্রেয়সী!

বোধশক্তি হতে ‘কাঁদ বাসনার অন্তরালে বসি’-
যেন, এমন এক দেয় ঔদার্য মন, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করো বসি।
প্রথমে ধরা নাহি দিল সে;
তোমার জীবন-মঙ্গলে প্রদীপ জ্বলিল না
প্রদীপ জ্বলে-নেভের মোহে;
তবুও ক্লান্ত এলো না তোমার সীমারেখার-পারে!
স্বপনে পাও মোরে ; আবার স্বপনে হারাও বারেবারে
মায়াপরী গো! আচমকা হয়ে এলে মোর মনে,
সতী হয়ে এলে মোর ঘরে।
প্রিয় হয়ে এলে প্রেমে,
ভার্যা হয়ে এলে অধরে।
কম্পিত বুকে গোপনে দিলে তুমি চুমুক দেওয়ার সুযোগ,
চায়ের কৌটায় এলে!-
‘দু পাণির মধ্যস্হলে’-
ইচ্ছে হয় মোর এক উতাল বাসনা!
মায়াপরী! প্রেয়সী! কাছে আসো’- ভালবাসার নিকটে আসো।

তুমি নহ নিভে যাওয়া জ্যোতি, নহ সর্বশুচি।
তুমি বাস্তববাদী,
তুমি দুর্বার উদ্ভাসিত।-
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি ধরি এমনিতো খুঁজি, প্রশস্ত প্রান্তরে তোমায় করেছি আরতি,
বারংবার এই জন্মে হাজারবার করি!
তারপর যেখানেই দেখেছি তোমার রুপ, প্রেয়সী তোমারই স্মরণ করি।
রুপে রুপে, সৌন্দর্যের অপরূপা, পেয়েছি তোমায়,
তরঙ্গের যৌবনের পাল যত উঠাই তত বেড়ে যায়!
যখনি তুমি বিরহের কান্না করে তৃপ্ত শ্রুতি মোর ভরি’
বারংবার বিস্তার করিয়াছ হৃদয়ের মেলবন্ধন,
তুমি শূন্যের-পরী
প্রিয় সখী!
ধরা দিয়েছো-তুমি মিলায়েছ মোরে সাথে নিয়ে দূর জলতরঙ্গে
অফুরন্ত ভালবাসার রাণী মোর, এলে কথার সাগর হয়ে।

সবসময় কাছে থাকা, কাছে পাওয়ার কথা ব্যাপ্ত করা!
মোর বুকে ঠাঁই খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা
এপার হতে ওপারে নিয়ে যাও মোরে।
আনন্দের বিহ্ববলে আত্মহারা হয়ে
জন্ম লভি প্রশস্ত প্রান্তরে!
প্রশস্ত বুকে মোর ছিল অতৃপ্ত যৌবন-ক্ষুধা
ছিল উদগ্র বাসনা,
জন্ম তাই লভি বারংবারে,
সব জনমে তোমারে পাওয়ার করি আরাধনা!….
তোমার সবকিছুই সুন্দর, করেছি চুম্বন,
চুম্বন দিয়ে আবার সবি করেছি সুন্দর-
সে সবার মাঝে যেন এক ক্ষুদ্র মোম
গিয়েছি কাছে!- ছুঁয়েছি অধর
পর্যায়ক্রমে ধীরে, ধীরে!
তোমারে যে করেছি চুম্বন
প্রতি সকাল-রজনীতে তোমার ঠোঁটে
প্রকাশ গোপন।

যে কেহ তার প্রেয়সীরে চুম্বিয়াছে ঘুম-ভাঙ্গা রাতে,
অমা-জাগা তন্দ্রা-লাগা নিদ্রা পাওয়া প্রাতে,
মনে হবে সে যেন, সুখের সাগরে বীচির মত ভাসছে।
তরু, লতা, পশু, পাখি সকলের বাসনার সাথে
আমার বাসনা জাগে, আমি থাকি বিশ্ব বাসনার কামনাতে!
বঞ্চিত যাহারা প্রেমে,
মোর প্রেমের মত হয় যেন, তাদের গতি।
যেদিন স্রষ্টার জেগেছিল আদি সৃষ্টি-কাম,
সেদিন স্রষ্টা সাথে তুমি এলে, আমি আসিলাম।
আমি ছিলাম ঔদাসিন্য, তুমি হলে মোর পথের রথী,
এভাবেই আমাদের অল্প জীবনের এক অপরুপ গতি।

কী যে তুমি, কী যে নহ, কত ভাবি – কত দিকে চাই!
মাঝে-মাঝে খুঁজে বুঝেছি এগুলো খুঁজানো বৃথাই।
বৃথাই বাসিনী ভালো
আপন ভেবে যখন বুকে চেপে ধরি, তুমিও ধরো তখন মোরে।
এটাই মন-বিনিময়, এটাই হৃদয়ের কম্পন-
যারে ভালো বাসিলাম, স্বার্থক হয়েছে
বুঝেছি গোপনে।
তুমি অনেক সুন্দরতর – আরো আরো মধু!
আমারি ঘরের বুকে হাসো তুমি হয়ে নববধূ।
মোর বুকে শুধু তোমারি পাই,
আমার বুকে তোমার শয্যায়
যখন তুমি না পেয়ে মোরে, কাঁদো একাকিনী,
ওগো মোর প্রেয়সী।…..

বারে বারে চাও, বারে বারে মন যেন কহে পাশে এসে বসো!
ওগো মোর ছায়ালোক! কোথায় তুমি? দেখা পাব কবে?
জন্মেছিলে জন্মিয়াছ কিংবা আবার জন্ম লবে!
কথা কও, কও কথা মোর প্রিয়,
তোমার সহজে না পাওয়ার বুকে তৃষ্ণা-জাগাইয়া!
কহিবে কথা তুমি আজ! বলতেই হবে তোমার
মোর প্রেম সত্য চিরন্তন
জন্ম মোর তোমার জন্য ঐ একই বীজে
বাসনারই মাঝে সে যে বেড়ে যায় কল্পতরু নিজে।
চতুর্দিকে তোমার শাখা করে বিচরণ
এ ভালবাসা যেন পূর্ণ হবে অভ্রের যত বায়ু প্রাণ।
গগনতলে ছেয়েছে তার পাখা
কামনা-বাসনার এক লাল পতাকা!

প্রেম সত্য, প্রেম পাত্র বহু অগণিত,
যা চাই তাই পাই, তবু কেন মোর মন উদ্ভলিত?
তোমার প্রেম সত্য, পাত্র সত্য নয়!
যে পাত্রে ঢালিয়া খাও সেই নেশা হয়!
চির-সহচরী! তোমারে স্মরণ করি
এতদিন দিয়েছিলে ডাক, মরি মরি!
আমারি প্রেমের মাঝে তুমি রয়েছ গোপন,
বৃথা আমি খুঁজি অন্যদিকে, অন্যমনষ্কে, করেছি রোদন।
তুমি প্রতি রুপে, অপরূপা হয়ে ডাক মোরে,
সত্যিই সর্বদিকে এখন চিনেছি তোমায়,
যাহারে বাসিব ভালো সে-ই তুমিই প্রেয়সী,
ধরা দিয়েছিলে অনেক আগে,
মোর এখন প্রেম এক, প্রেয়সী এক
এক পাত্রে ঢেলে পান করব এক প্রেম-
সে সরবত লোহু।
তোমারে করিব পান, প্রেয়সী, হাজারো বাসনায়, সাড়া দিয়ে, চায়ের কৌটায়, দু বাহুর মধ্যস্হলে, তবুও পেয়ালায়।

লেখক পরিচিতি :

নুরউদ্দিন তালুকদার

অধ্যয়নরত বৃন্দাবন সরকারি কলেজ হবিগঞ্জ (ইতিহাস বিভাগ ৪র্থ বর্ষ)

ধরমন্ডল, নাসিরনগর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া