এ সময় আমাদের সকলেরই সাবধান থাকা উচিত!

২৬ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ : রোববার

সম্পাদকীয়…

‘শেরপুরের শ্রীবরদীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু’
এখন বর্ষাকাল। চারিদিকে পানি। নিচু স্থানগুলো বৃষ্টির পানিতে ভরে গেছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তি বিশেষ করে শিশুদের জন্যে এখন ঝুঁকি বেশি। গত ২১ জুলাই প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘শেরপুরের শ্রীবরদীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু’ সংবাদটি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমাদের সকলকে আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমরা সকলে এখনো অতিরিক্ত সাবধান হতে পারিনি, বিশেষ করে আমাদের শিশুদের ক্ষেত্রে। যেহেতু শিশুরা অবুঝ, সেহেতু তারা ভালো মন্দ বুঝে না। ওরা বুঝে না আগুনে গেলে কী হবে। কিন্তু আমরা যারা বড় আছি, আমরা কিন্তু সবই বুঝি। শিশুরা বর্ষাকালে পানি নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। তবে সেটা যেন হয় বড়দের সামনে। চোখের আড়াল হওয়া যাবে না মোটেও। একটু অসতর্ক হলেই ঘটে যেতে পারে মর্মান্তিক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। যে ঘটনাটি আমরা শেরপুরের হতে শুনেছি।

রাব্বী নামে শিশুটি অত্যন্ত ছোট। মাত্র তার বয়স চার বছর। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, সে এলাকায় বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে খেলতে গিয়ে পানিতে পরে যায়। তখন কেউ দেখতে পায়নি। অথবা সে যেহেতু খুবই ছোট ছিলো, তাই সে চেঁচাতেও পারেনি। বাঁচার জন্যে সে হয়তো চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু তার সেই চেষ্টা বৃথা ছিলো। অপরদিকে রাব্বী নামের শিশুটি অন্যান্য শিশুদের সাথে বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে খেলতে যায়। এ সময় সবার অজান্তেই রাব্বী পানিতে ডুবে যায়। পড়ে যাওয়ার সময় কেউ তাকে দেখতে পায়নি। ঘটনা এভাবেই ঘটে। আর এ ধরনের ঘটনার সংবাদ আমরা অতীতে অনেক শুনেছি।

এভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা যে কতোটা মারাত্মক ও মর্মান্তিক, এটা শুধু যাদের শিশুদের ক্ষেত্রে হয়েছে তারাই জানে। আদরের সন্তানকে হারিয়ে তারা ব্যথিত ও মর্মাহত। এই ঘটনা তারা কোনোদিন ভুলতে পারবে কিনা সন্দেহ। নিজের সন্তানকে ডোবার পানিতে ভাসতে দেখা যে কতোটা কষ্টদায়ক! আমরা এমন ঘটনা মোটেও আশা করি না।

আমাদের যেসব পরিবারে শিশু রয়েছে তাদের বিষয়ে আরো সতর্ক থাকা উচিত। চোখ কান খোলা রাখতে হয়। চিন্তা করতে হয় যে, অবুঝ শিশুরা কোন কোন বিষয়ে দুর্বল আছে। তাদের বিপদ কিসে হতে পারে সেটা খুঁজে দেখা দরকার। অতীতে আমরা শুনেছি নিরাপদ ঘরের বাথরুমে একটি বালতিতেও শিশুরা মারা যেতে পারে। তাছাড়া বর্ষাকালে তো আরো মারাত্মক অবস্থার শৃষ্টি হতে পার!

বিশেষ করে আমাদের গ্রামের বাড়িগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। দরকার হলে শিশুদের রক্ষার জন্যে বাড়ির চারিদিকে নিরাপত্তার জন্যে বেড়া দেয়া যেতে পারে। যদি ছোট ছোট গর্ত থাকে তাহলে সেগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলতে হবে। কারণ, একটু বৃষ্টি হলেই সে গর্তগুলো ভরে যায়। আর সেখানে শিশুরা খেলতে খুবই পছন্দ করে। তারা হয়তো দলবেঁধে খেলতে থাকে। তখন সবার অলক্ষ্যে এমন ঘটনা ঘটে যায়। যেহেতু সবাই শিশু; সেহেতু কেউ কারো দিকে নিরাপত্তার দৃষ্টিতে খেয়াল করে না। কারণ, তখন তারা মহানন্দে থাকে।

আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। আর যেন কোনো শিশু এভাবে মারা না যায়। এসব ঘটনাগুলো আমাদেরকে আঙ্গুল দিয়ে শিক্ষা দিয়ে যায়। কিন্তু আমরা কিছুদিন পরেই ভুলে যাই। তাছাড়া এতো বেশি এ ধরনের ঘটনা ঘটে যে, এগুলো আমরা শুনতে শুনতে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিই। কিন্তু যাদের আদরের ধন রয়েছে, তারা কোনোভাবেই তাদের ধন হারাতে চায় না। সুতরাং তাদেরকে রক্ষা করতে হলে আমাদের আরো সাবধান হতে হবে। অতএব প্রত্যাশা যে, এ সময় আমাদের সকলেরই সাবধান থাকা উচিত!