বন্যার কারণে খাদ্যের উপর চাপ পড়বে

০৩ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
১৯ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
১২ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি

সোমবার

সম্পাদকীয়…

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে ক্ষতি হয়েছে খাদ্য শষ্যের। বহু একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই হিসেবে একদিকে ফসলের ক্ষতি হওয়া, অন্যদিকে কৃষকের জমিতে পানি হওয়ার কারণে পরবর্তী মৌসুমের ফসল উৎপাদন করতে না পারা, ফসল ক্ষতি হওয়ার কারণে বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে খাদ্যের উপর নিদারুণভাবে চাপ পড়বে। অপরদিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কৃষক পরিবারগুলোতে খাদ্যের অভাব দেখা দেবে।

এরই মধ্যে আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হওয়ার কারণে জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয়ার নেয়ার জন্যে দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ আবার আশ্রয় কেন্দ্রে, কেউবা কোথাও যাবার সুযোগ না পাওয়ার কারণে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। একদিকে অভাব অনটন, অন্যদিকে বৃষ্টিতে কৃষক পরিবার দারুণভাবে মার খেয়েছে।

আমরা প্রিয় সময়ে ‘নবীগঞ্জে বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে অগণিত মানুষের ধানক্ষেত ও মৎস্য খামার’ শিরোনামে সংবাদে সেখানকার করুণ পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেছি। মানুষের ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মৎস্যখামারগুলোও পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের পাঠানো প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন স্থানে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ প্রতিনিয়ত জানতে পারছি, দেখতে পাচ্ছি অগণিত কৃষকের জমির ফসল নষ্ট হওয়ার সংবাদও।

আমাদের মাছে ভাতে বাঙালি বলা হয়। কিন্তু জমির ফসলের মাধ্যমে ভাতের উৎপাদন ক্ষেত্র এবং মাছের খাবার নষ্ট হওয়ার কারণে মাছের ভেসে যাওয়াতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। সেসব এলাকাগুলোতে কিছুদিন আগেও সবুজ শ্যামলে ভরা ধান ক্ষেত দেখা গিয়েছে, কিন্তু সবকিছু বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার কারণে কৃষকের মাথায় হাত পরেছে। বন্যার কারণে হঠাৎই কৃষকের মুখে নেই কোনো হাসি, চোখে ঝরছে পানি। মৎস্য খামারীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নিদারুণভাবে। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন মাধ্যম থেকে লোন গ্রহণ করে মাছের চাষ করেছেন; তারা এখন উভয় সঙ্কটে ভুগছেন। কৃষকদেরও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এটা সত্য যে, হঠাৎই কোন বছর বন্যার পানি বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষকের ফসল ও মৎস্য খামারীদের মাছ ভেসে যাবে-সেটা কেউ বলতে পারে না। যদি কোনোভাবে জানা যেতো তাহলে এভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। সুতরাং এটা ঐ এলাকার মানুষের জন্যে দুর্ঘটনা, যা তাদের মুখবুজে সহ্য করতে হচ্ছে।

আমরা মনে করি, খাদ্যের পর্যাপ্ততা বজায় থাকলে বাঁচবে দেশের মানুষ। তাহলে দেশের কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না। সুতরাং খাদ্যের কথা চিন্তা করে সর্বাগ্রে কৃষকের কথা চিন্তা করা উচিত। কৃষক ও মৎস্যখামারীদের সুদবিহীন অথবা কম সুদে লোন প্রদান করা যায় কিনা সে ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে এ বছর যারা বন্যায় ক্ষতি হয়ে লোনের বোঝা মাথায় চেপে দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত তাদের কথা অবশ্যই চিন্তা করা উচিত।

এখানে আরেকটি কথা বলা যায় যে, একদিকে বন্যার পানি, অন্যদিকে মহামারী করোনাভাইরাসের আক্রমণে কৃষকদের আর্থিক সমস্যা, সেই সাথে খাদ্যের তীব্র সঙ্গট দেখা দিতে পারে। সুতরাং সেই দিক চিন্তা করে আমরা বলবো, কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।