আর কতো অমানবিক ঘটনা!

 

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ, ০৪ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২৮ জ্বিলহজ্ব ১৪৪১ হিজরি, বুধবার

সম্পাদকীয়

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা মৃত্যুকে মোটেও ভয় পাই না; আবার মানুষ হয়ে একজন মানুষকে মারতেও ভয় পাই না। আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া এমন কিছু ঘটনা আমাদের জানান দেয় যে, আমরা ‘ভয়’ নামক শব্দটির সাথে মোটেও পরিচিত নই। কিন্তু এভয়ই যে আমাদের অনেক ক্ষেত্রে মানবতার দিক থেকে রক্ষা করে সেই ‘বোধ’ আমরা হারিয়ে ফেলেছি।

গত ১৬ আগস্ট প্রিয় সময়ে ‘আড়াইহাজারে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার মরদেহ ফাতেমার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের পীড়া দেয়। কারণ, ফাতেমা (২২) একজন স্বামী পরিত্যক্ত। অর্থাৎ স্বামী তাকে ত্যাগ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি মেয়ে বড়ই অসহায় জীবনযাপন করে সমাজের মধ্যে। তখন ঐ মেয়েরা বাঁচার জন্যে লড়াই করে চলে আজীবন। হয়তো অন্যরা তাদের অবহেলা করে, সমাজে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সবসময়। আবার কারো কারো লোভের বস্তুতে পরিণত হয়!

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে মনে হচ্ছে, অসহায় মেয়েটি কারো লালসার বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এতে সে আর নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি মানুষরূপী হিং¯্র হায়েনাদের হাত থেকে। তারা তাকে ব্যবহার করার পর তার লাশ গুম করে রাখা হয়েছে। একটি অসহায় মেয়েকে এভাবে হত্যা করতে তাদের বুক একটুও কাঁপেনি। দীর্ঘদিন পর মেয়েটির মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যায়, আমরা এক কঠিন সময়ের মধ্যে অবস্থান করছি।

প্রকাশিত সংবাদে আমরা জেনেছি, ‘কাজ করার একপর্যায়ে মৃত মানুষের গন্ধ সন্দেহ হয়’ এমন একটি বাক্য বেরিয়ে এসেছে কাজ করতে আসা লোকদের মুখ থেকে। আর আমরা সন্দেহ করি, আমাদের প্রতিদিনের ঘটনায় মানুষের মানবতা হারিয়ে দুষ্টু গন্ধ বের হচ্ছে; আর চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে দুর্গন্ধ। যে গন্ধে আমরা মোটেও প্রশান্তিতে থাকতে পারছি না। যে গন্ধের প্রতিফলন আমাদের কান্নায় জড়ে পরছে, যে গন্ধের প্রমাণ আমাদের প্রতিদিনের ঘটনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের মলিন চেহারায়। যে গন্ধ আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের হাহুতাশ করা মুখের আওয়াজে আমাদের দীর্ঘশ^াস আমাদের আনন্দে গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে।

এভাবে আর কতোদিন আমাদের অসহায় স্বামী পরিত্যক্ত বোনেরা জীবন দেবে? প্রশ্নটা হয়তো বিবেকবান মানুষের! থানা পুলিশ আটদিন পর মরদেহ উদ্ধার করেছে। কিন্তু আমরা কি সবাই মিলে মানবতা উদ্ধার করতে পারছি কি? যদি মানবতা উদ্ধার করা যেতো তাহলে এভাবে মা বোনরা জীবন হারাতো না। আমরা সুখেই থাকতাম। ফাতেমাকে হত্যা করে তার মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘরের নিচে পুঁতে রেখেছিলো অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। কিন্তু জ্ঞাত ব্যক্তি হয়েও আমরা কেনো দুষ্টচক্রের দলকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে পারছি না, কেন সমাজ থেকে কলুষিত মানুষের মানসিকতাকে পুঁতে ফেলতে পারছি না?

প্রতিদিনের এসব ঘটনা আমাদের কাঁদায়। বাঁচার স্বপ্নকে নষ্ট করে, নষ্ট করে সুখ ও শান্তিতে থাকার প্রতিটি ক্ষণকে। প্রতিটি পদক্ষেপে শুধু ভয় আর ভয় কাজ করে, এই বুঝি আমরা হারিয়ে গেলাম কোনো অমানুষের থাবায়।

সত্যিই আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি এমন অমানবিক ঘটনা শুনতে শুনতে। আমরা আশা করবো, আইনের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলেই এসব ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাছাড়া সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষাও প্রতিটি ঘরে ঘরে দরকার। তবেই আমরা অমানবিক ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো।