কবি ও কবিতা : ক্ষুদীরাম দাস

একজন কবি
অদ্ভুত আলাদা ভুবনের বাসিন্দা!
এই ভুবন কেবলই কবির
একেবারে ভিন্ন ভুবন,
যেখান থেকে কবি তার কবিতা ভাসান
সেই কবিতা ভেসে আসে মানুষের হৃদয় তীরে!

একজন কবি
কবির ভুবন আনন্দ বেদনার
আর দুঃখে মিশ্রিত!
কবির একান্তই নিজস্বতার অনুভব।
কবি এ ভুবন থেকেই লেখেন।
কবি কবিতা হয়ে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেন।

কবি কবিতার সাগরে তলিয়ে যান
হঠাৎই তার মনোজগৎ ভিন্নতা খুঁজে পায়.
তখন কবি কবিতার মাঝে
কবিতা সৃষ্টিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
অস্বাভাবিক অনুভূতি.
অস্বাভাবিক কল্পনা,
অস্বাভাবিক ধ্যান,
অস্বাভাবিক উপলব্ধির আঙিনা,
অস্বাভাবিক চেতনা,
অস্বাভাবিক অনুভূতির ভুবন,
অস্বাভাবিক স্বপ্নের ভুবন,
আর অস্বাভাবিক রচনার রহস্য,
রহস্য ভেদ করে কবিতার জন্ম

কবি উপলব্ধির গভীরে তলিয়ে
কবির হৃদয় ক্ষরণে কবিতা প্রসব করেন
দাঁড় করান পাঠকের আঙিনায়।

কবি তার ভুবনে নিঃসঙ্গ
কবি তাঁর ভুবন নিয়েই বেঁচে থাকেন
কবির সৃষ্টি কবিতায় কবিকে খুঁজে পাওয়া যায়
শুধু পাঠকের উপলব্ধি মাত্র,
অথবা আন্দাজ করা মাত্র।

একজন কবির বিচরণের ভুবনে
নিঃসঙ্গ; নিজের সঙ্গী নিজে
লেখক কবিকে খুঁজে পায়,
লেখকের ভুবনকে খুঁজে পায় না.
লেখকের একান্তই বিচরণের ভুবন।

কবি নির্জনে একাকী জন্মাতে ভালোবাসেন
ভুবনের ফটক খুলে বসেন
সেই ভুবনে একাকী প্রবেশ সন্তর্পণে।
ডানে-বাঁয়ে-সামনে-পেছনে নীরবতা,
করো অস্তিত্ব উপস্থিতি অনুপস্থিত
তখন ভাবনার ভুবন সৃষ্টিকে ঘিরে
কী নিখুঁত রচনায় আবর্তিত,
এখনে নেই কৃত্রিমতা,
নেই হেলাফেলা,
নেই দায়সারা,
সর্বোচ্চ মগ্নতা ঢেলে সাজান কবিতার শরীর,
এরপর কবিতার জন্ম-প্রকাশ পায় সবার মাঝে।

কবিতা নিজেই ঘ্রাণ ছড়িয়ে বেড়ান
পাঠকের হৃদয় দুয়ারে কড়া নাড়েন
পাঠকের অন্তর্চক্ষু খোলেন
পাঠকের অনুভূতিকে ধারালো করেন
পাঠক খুঁজে বেড়ান কবিতার অস্তিত্ব
কবিতার ভুবনে প্রবেশ করেন;
সবই ঘুরপাক খেতে থাকে
পাঠকের কল্পনা,
পাঠকের স্বপ্ন,
পাঠকের আশা,
পাঠকের চেতনা;
পাঠক কবিতার আত্ম খোঁজেন,
পাঠক কবিতার শরীর খোঁজেন,
পাঠক কবিতার আনন্দ খোঁজেন।
পাঠক কবিতার মাঝে বিচরণ করেন;
আর বিচলিত হয়ে উঠেন,
পাঠক কবিতার সাথে মিল খোঁজেন,
নিজের অথবা অন্যের
সে-ই কবিতার, নাকি কবিতা তাঁর,
পাঠকের সাথে কবিতা কথা বলেন
পাঠককে ভাবিয়ে তোলেন কবিতা
কবিতা পৌঁছে যান পাঠকের মানসপটে।

কবির পথ এক,
হারিয়ে যাওয়া ভাবনার ভুবনে,
কতো পথ কবিকে ডাকে
এক পথে তার ছুটে চলা
কবিকে যেতে হয় ধীরে
অতি ধীরে!
অতি ধীরে!
নীরব!
নিস্তব্ধ!
নিঃসঙ্গ!
সন্তর্পণে!
অনেক কষ্টের!
কবির পথ অনেক দীর্ঘ!
অনেক ত্যাগের!
অনেক অপেক্ষার!
অনেক সাধনার!

কবি কবিতা খোঁজে হৃদয়ের পরতে পরতে
কবিতাকে খুঁজে বেড়ায় মনের আঙিনাজুড়ে
কবিতাকে খোঁজে শরীরের গোপন কণিকায়
কবিতাকে খোঁজে জীবনের বাঁকে বাঁকে।
কবিই কবিতার
-একমাত্র সঙ্গী
-একমাত্র বন্ধু
-একমাত্র প্রেমিক।

পাঠক কবিতার প্রেমে মজে যায়
তাই কবিতার প্রেমিক হয়ে উঠে
হয়ে উঠে কবিতার ঘনিষ্ঠজন।

কবিতার ভুবন কবির আনন্দের ভুবন
কবিতার ভুবন কবির বেতনার ভুবন
কবিতার ভুবন কবির স্বপ্নের ভুবন
কবিতার সাথে কবির অভিমান
কবির ঘুম-জাগরণ কবিতার সাথে
কবিরর সময়-অসময় কবিতার সাথে
কবির আহার-বিহারে সর্বত্র কবিতার ছাপ স্পষ্ট
কবি বাইরে সাধারণ কবিতার ভেতরে সৌন্দর্যে মগ্ন
কবি ও কবিতার বিচ্ছিন্নতার দেয়াল তুলে থাকতে নেই
কবি স্বপ্নে বিভোর কবিতার মাঝে
কবি ও কবিতার ভুবন চিরকালই নান্দনিক
কবি কবিতাকে নিয়ে যায় মহাকালের অন্দরে।

কবিতাকে ভালোবাসতে হয় হৃদয় জুড়ে,
হৃদয়ের পুরোটা দিয়ে,
বুকজুড়ে কবিতার ঘর বাঁধতে হয়,
মনজুড়ে রাখতে হয় কবিতার সংসার
সারাটা চেতনাজুড়ে বিস্তার করতে হয়
বিস্তার করতে হয় কবিতার ভুবনে;
তবেই কবিতা ভেসে উঠে পাঠকের হৃদয় দুয়ারে।

কবিতা জেগে উঠে কবির অন্তরের বাসনা থেকে
কোনো আগ্রহ-উচ্ছ¡াস নেই,
হৃদয়ের প্রবল ভালোবাসা থেকে,
কবিতার জগতে খোলা নেই ভালোবাসার বিকল্প পথ,
সমর্থনও থাকে না,
কবির প্রেমেই মজে থাকে কবিতা,
কবি কেবল কবিতাকেই ভালোবাসে।
কবিতার চলাফেরা সবই নিঃশব্দতার প্রাচীর বেয়ে,
কবিতার আগমন-নির্গমন।

কবিতার আশ্রয় পাঠকের হৃদয়
কবিতার গ্রহণযোগ্যতা শুধু পাঠক
কবিতা পাঠককে জীবনের অর্থ বোঝায়
কবিতা পাঠককে ভিন্নভাবে দেখায়
কবিতা পাঠকের রহস্যের দরজা চিনিয়ে দেয়
কবিতা পাঠকের চেতনায় সৌন্দর্য আনে