ভারতীয় মরিচের দাপট

সম্পাদকীয়

দেশের প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকে আমাদের চলার জন্যে আমদানি করতেই হবে। আবার আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে তবেই আমরা আমাদের কোনো জিনিস রপ্তানি করতে পারি। এটা যেমন দু’দেশের জন্যে লাভজনক; তেমনি মানুষও বেঁচে থাকার জন্যে গ্রহণযোগ্য একটি উপায়-স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু আপত্তিটা দাঁড়ায় তখনই যখন অসৎ উপায়ে কোনো কিছু আমাদের দেশে আমদানি হয়; অথবা আমাদের দেশের কোনো কিছু রপ্তানি হয় তখনই। এতে কিছু মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায় বটে; ক্ষতির সম্মুখীন হয় আমাদের দেশের অনেক দরিদ্র ব্যবসায়ীরা। তখন তাদের মাথায় হাত দিতে হয়। অপরদিকে আমাদের দেশীয় পণ্যের গুরুত্ব একেবারে কমে যায় মানুষের কাছে। কমমূল্যে যদি হাতের কাছে কোনো কিছু পাওয়া যায় তখন আর দেশী পণ্য কেনো দাম দিয়ে কিনতে হবে-এমন একটি সত্য ধারণা আমাদের সকলেরই আছে। কিন্তু ক্ষতির সম্মুখীন হয় যারা কঠোর পরিশ্রম করে দিনের পর দিন উৎপাদন করেছে তারা, অথবা পুঁজি খাটিয়েছে তারাই ক্ষতির শিকার হয়।

প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘ভারতীয় মরিচের দাপটে দেশি মরিচের বাজার মন্দা: লোকসানে ব্যবসায়ীরা’ শিরোনামে সংবাদটি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। দারুণ একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে কাঁচা মরিচ। এটা স্পষ্ট যে, আমাদের দেশের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। জমি চাষাবাদে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। নিজেকে খাটতে হয়। পাশাপাশি কৃষাণ দিয়েও চাষাবাদ করতে হয়। তাছাড়া সারেরও প্রচুর দাম। সবমিলিয়ে যে পরিমাণ খরচ চাষাবাদে করতে হয়, তা ফসল বিক্রি করে তুলতে পারে না কৃষকরা। একদিকে কৃষকরা উৎপাদনের টাকা তুলতে পারছে না, অপরদিকে ঋণগ্রস্থ কৃষকরাও মাথায় হাত দিতে হয়। যদি এককেজি কাঁচা মরিচ চাষ করতে খরচ পড়ে দেড়শত টাকা; সে হিসেবে কৃষককে বিক্রি করতে হবে একশত আশি টাকা করে। তাহলে কৃষকের কিছুটা লাভ হবে বলে মনে হয়। তাদের কাছ থেকে আড়তদাররা কিনে নেয়, অর্থাৎ মধ্যস্বত্তভোগীরা। এরপর খুচরা বিক্রেতারা ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করে ভোক্তার কাছে। ভোক্তা হয়তো কেজি প্রতি দুইশত টাকা হিসেবে কাচা মরিচ কিনবে। তাহলে সবদিকে সমানভাবে লাভবান হবে। কিন্তু যদি এর মধ্যে ভারতীয় কাচা মরিচ এসে হানা দেয় এবং তার দাম যদি তুলনামূলকভাবে কম হয়, তখন ক্রেতারা দেশী মরিচের দিকে তাকাবে না-এটা স্বাভাবিক। অতএব, দেশী মরিচের দাম সাথে সাথে কমিয়ে দিতে হবে। সেই সাথে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তেমনি আমাদের দেশের কৃষকরাও দারুণভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়ে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, কুমিল্লার নিমসার কাঁচা বাজার দেশের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ পাইকারি আরদ। এটা আমাদের জন্যে অন্তত গর্বের একটা বিষয় যে বড় একটি ব্যবসার জায়গা এটি। ভালোই চলছিলো আমাদের দেশীয় কাচা মরিচ। হঠাৎ করে রাতের বেলা ভারতীয় মরিচ সেই বাজারে চলে আসায় দেশী মরিচের দাম সাথে সাথেই প্রতি কেজি সত্তোর থেকে আশি টাকা কমে গেছে। এটা বিশাল একটি ধাক্কা ব্যবসায়ীদের জন্যে। জানা গেছে, ভারতীয় কাচা মরিচের দাপটেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আরো জেনেছি যে, ‘একরাতেই কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দর পতনের ফলে পাইকারি বিক্রেতাদের অনেক টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে।’ যে ক্ষতি হয়তো সেই ব্যবসায়ীদের পূরণ করতে অনেক দিন সময় কেটে যাবে। কারণ তারা তাদের পুঁজি হারিয়েছে, ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। হয়তো কোনো কোনো ব্যবসায়ী লোনও করে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের সেই লোন পরিশোধ করতে আরো ক্ষতি হয়ে যাবে।

আমরা বলতে চাই যে, আমাদের দেশের কৃষকদের কথা অন্তত চিন্তা করা উচিত। আর সেটা চিন্তা করে অসৎ ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করা দরকার। এজন্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অবশ্য জরুরী। কোন পথে আসে, কারা কারা এর সাথে জড়িত তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে আমরা মনে করি। অর্থাৎ সবকিছু যদি সমঝোতা করে, কারো যেন ক্ষতি না হয় সেদিকটা অন্তত চিন্তা করেই আমাদের রপ্তানি, অথবা আমদানির সিদ্ধান্তটা নেয়া দরকার। অন্যথায় নিজের দেশের ক্ষতিই আমাদের দেখতে হবে-যা আমরা মোটেও কামনা করি না।