একমাত্র প্রশাসনই পারে এমন প্রতারকদের উৎখাত করতে

সম্পাদকীয় ….

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় চারিদিকে প্রতারকের ছড়াছড়ি। প্রতারকদের ভিড়ে অনেক সময় মনে হয়, কে যে ভালো মানুষ সেটা চেনা বড় দায়। আমাদের সকলেরই কানে আসে, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রতারকের নতুন নতুন কৌশল। যা শুনলে ও দেখতে গা শিউরে উঠে, ভ্র কুচকে যায়, হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়, হতবিহ্বল হতে হয়।

সত্যিই সত্যিই আমাদের চারিদিকে প্রতারকরা যেন মুখোশ পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের চেনা বড় দায়। দিনের পর দিন ভালো মানুষ সেজে ব্যক্তিটিকে হঠাৎ যদি জানা যায় একজন প্রতারক; তাহলে মানুষের মনের কী অবস্থাটাই না হয়। বিস্মিত, হতচকিত হয়ে যেতে হয়।

প্রিয় সময়ে ‘প্রতারক ‘মহাতান্ত্রিক গুরু’ হাকিম চৌধুরী গ্রেফতার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা’ আমাদের মনকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। সত্যিকারে প্রতারকারা কেমন হতে পারে-সেই পরিচয় আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের প্রতারক থেকে আমাদের সকলকে সাবধান থাকতে হবে। কেননা ওদের কাছ থেকে সতর্ক না থাকলে, তারা দিনের পর দিন বেড়ে উঠবে এবং সমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেবে।

এমনই ধুর্ত প্রতারক যে, টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আজ সেই গুরু হাকিম চৌধুরী গ্রেফতার হয়েছে মাদারীপুর জেলা পুলিশের হাতে। সেই গ্রেপ্তার হওয়ার সাথে সাথে খবর ছড়িয়ে যায় এবং তার সাক্ষাতে যাওয়া মানুষজন এখন সকলের মাথায় হাত পড়েছে ও সকলে হায় হায় করছে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, সেই মহাতান্ত্রিক গুরু টাকার বিনিময়ে সব রোগ সারাতে পারে। সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, ভারতীয় জি-বাংলা ও দেশের বেশ কয়েকটি টিভিতে দীর্ঘদিন ধরে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে একটি প্রতারক চক্র। হায় হায় আজ সে পুলিশের হাতে ধৃত! কিন্তু কেনো? এমন প্রশ্ন এখন সবারই। অথচ ওই চক্র নানা ধরনের রোগ মুক্তির কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর সহজ সরল মানুষগুলো উজাড় করে দিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে বাধ্য হয়েছে; কারণ, তারা সুস্থ থাকতে চায়, রোগ হতে মুক্তি পেতে চায়। কেননা মহাতান্ত্রিক গুরু তাদের সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত রয়েছে। আর এখন যখন পুলিশের হাতে ধৃত সেই মহাতান্ত্রিক গুরু তখন সকলেই হায় হায় করছে আর মাথায় হাত দিয়ে ‘কী ভুলটাই না করলাম’ এমন মন্তব্য করছে বলে মনে করি।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, ‘গত ৯ আগস্ট এই প্রতারক চক্রের কাছে মাদারীপুরের এক গৃহিনী ৫৮ লাখ টাকা খুইয়ে বিচারের আশায় সদর মডেল থানায় একটি মামলা করে। পরে অভিযান চালিয়ে গত ২৬ আগস্ট ৪ লাখ টাকা উদ্ধারসহ এই চক্রের সদস্য জসিম উদ্দিন ও আবদুর রহমান আমানকে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূলহোতা হাকিম চৌধুরীকে রোববার ভোরে একই স্থান থেকে গ্রেফতার করে মাদারীপুর জেলা পুলিশ। হাকিমকে নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের অভিযান শেষে স্থানীয় থানায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে মাদারীপুর নিয়ে আসা হবে।’ সুতরাং এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, সেই প্রতারক চক্র ও মহাতান্ত্রিক গুরু কতোটা শক্তিশালী হলে এমন কাজ করতে পারে।

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, চেহারা পরিবর্তন করে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়া হাকিমকে সহজে কেউ চিনতে পারতো না। চিনবার কথাও নয়। কেননা তার ভেতরে ছিলো প্রচ- রকমের ভ-ামী। এমন ভ- লোকেরা এভাবেই নিজেদের আড়াল করে রাখে। আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় জেনেছি যে, এই চক্রের ১৮ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে। সুতরাং এ থেকে স্পষ্ট যে, তারা কতোটা শক্তিশালী ও দেশব্যাপী তারা প্রতারণার জাল ছড়িয়ে রেখেছে। তাছাড়া তারা সবাই চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে প্রতারণার কাজে লিপ্ত। বিনাপুঁজিতে এদের প্রত্যেকের মাসে আয় ৬ থেকে ১২ লাখ টাকা, যা শুনলে আমরা এখন হতবাক হয়ে যাই। আমরা আশা করি, বাকিরাও পুলিশের অভিযানে ধরা পড়বে এবং আইনী প্রক্রিয়ায় তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।

আমরা আশা করবো, প্রশাসন এ জাতীয় প্রতারকদের খুঁজে বের করে জনগণের সামনে দাঁড় করাবে এবং সাধারণের মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেবে। যেন সাধারণ সহজ সরল জনগণ তাদের থেকে মুক্তি পেতে পারে। এই মহাতান্ত্রিক গুরুকে পরিচয় করিয়ে দেবার মাধ্যমে এটা প্রকাশ হয়েছে, সাধারণ জনগণ নিজেদের এখন ভাবতে শুরু করেছে এতোদিন তারা কতো বড় বোকামীটাই না করেছে। আমরা চাই, এ ধরনের প্রতারকরা দেশ থেকে উৎখাত হবে এবং জনগণ মুক্তি পাবে। একমাত্র প্রশাসনই পারে এমন প্রতারকদের উৎখাত করতে-আমরা সেই প্রত্যাশা করছি।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ০৪ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০১ সফর ১৪৪২ হিজরি, শনিবার