চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স দালালদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগীরা

কবির হোসেন মিজি :

আড়াইশ’শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এবং বাউন্ডির ভেতর দিন দিনই বেড়ে চলছে বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য।

যার কারণে পথচারীসহ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন রোগীরা। এ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী নেয়ার বিষয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া ঝাটি করে বিভেদের সৃষ্টি হয়। এমনকি এ্যাম্বুলেন্স মালিকপক্ষ ও চালদকের মধ্যে ভাড়া কম বেশি এবং রোগী আনা নেয়া নিয়ে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটে থাকে।

১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরেও এ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিকদের মধ্য এমনই একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে করে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে রোগীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

এসব ব্যবসায়ীদের রুখতে এখন কৃর্তৃপক্ষও অনেকটা ব্যর্থ প্রায়। কারন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে এবং বাউন্ডারির ভেতর এ্যাম্বলেন্স না রাখতে বার বার নিষেধ করা হলেও তারা ঘুরে ফিরে সেখানেই গাড়ি পাকিং করছেন। আর সেখানে গাড়ি পাকিং করার কারনে একদিকে যেমন রোগীদের চলাচলে বিঘ্নতা ঘটে অন্যদিকে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে নিজেদের যে কোন বিভেদের ঘটনা সেখানেই ঘটিয়ে থাকেন।

সরজমিনে দেখা গেছে হাসপাতালের বাউন্ডারির ভেতর এবং তার বাইরের রাস্তায় বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রোগীদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। হাসপাতালের ভেতরে কোন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স এবং ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কোন মোটর সাইকেল পাকিং না করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার তা নিষেধ করলেও তা কর্ণপাত করেননি চালক ও হেলপারা।

কর্তৃপক্ষের এমন নিষেধের পরেও দিনে এবং রাতের বেলায় হাসপাতালের বাউন্ডিরর ভেতর যেখানে সেখানে গাড়ি পাকিং করছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপাররা। এমনও অভিযোগ রয়েছে যে বিভিন্ন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও হেলপাররা রাতের বেলায় বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি পাকিং করে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ফিরে রোগীর লোকজনের সাথে ইভটিজিংয়ে লিপ্ত হন। এমন কি এদের ভেতর অনেকে হেলপার ও চালক সুযোগ পেলে হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং রোগীদের মোবাইল সেট চুরি করেও থাকেন।

দিন দিনই চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের সামনে বেড়ে চলছে এসব প্রাইভেট অ্যাম্বলেন্সের দৌরাত্ব। কেউ কেউ লাইন্সেস বিহিন ও ফিটনেস বিহিন গাড়ীকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন। চাঁদপুর শহর এবং বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের আশপাশের অনেক রোগীই চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন কবি নজরুল সড়কস্থ এ সরকারি হাসপাতালে।

এখান থেকে অনেক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা ঢাকায় প্রেরণ করেন। আর কোনো রোগীকে ঢাকায় প্রেরণ করার কথা শুনলেই সেই রোগীর লোকজনের কাছে দৌড়ে এগিয়ে যান প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপাররা।

অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী ও চালকরা রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় পৌঁছে দিতে ৪/৫ হাজার টাকা কন্ট্রাক্ট করে চালক ও হেলপাররা। যাদের সাথে কথা মিলে যায় তারাই রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও রয়েছে অনেক রোগীর নানা অভিযোগ।

কোনো কোনো অ্যাম্বুলেন্স চালক যেখানে রোগীকে রেফার করা হয় সে হাসপাতালে না নিয়ে তাদের পরিচিত হাসপাতালে নিয়ে যান। তার বিনিময়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক ওই হাসপাতাল থেকে ভালো কমিশন পান। এমনকি চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীকে ঢাকায় আনা-নেয়ার ব্যাপারে অনেক সময় ওই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের নিজেদের মাঝে তুমুল ঝগড়ার সৃষ্টি হয় বলেও জানা যায়।

খবর নিয়ে জানা গেছে, এর পূর্বেও গত কয়েক বছরে রোগী নিয়ে এসব অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বেশ কয়েকবার হাসপাতালের সামনে মারামারি এবং ঝগড়া করার ঘটনাও ঘটিয়েছে। তাদের এ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার আড়ালে দালালিতে রোগীরা ঢাকায় গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রতিদিন হাসপাতালের বাউন্ডারির ভেতর এবং তার বাইরে রাস্তার উপর হাসপাতালের গেট থেকে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের গেট পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে অ্যাম্বুলেন্স রাখার কারণে যানবাহনসহ অসুবিধার মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারী এবং হাসপাতালে আসা রোগীদের।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সুজাউদৌলা রুবেল জানান, এসব অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি পাকিং করার বিষয়ে তাদেরকে বার বার নিষেধ করা হয়েছে। তারপরেও তারা যখন সে নিষেধ অমান্য করে বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি পাকিং করেছে তখন এ ব্যাপারে বেশ, কয়েকবার থানায় জানানো হয়েছে। এখন ভেতরে গাড়ি পাকিং অনেকটা কমে এসেছে।

তবুও তারা আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝে মধ্যে এখানে গাড়ি পাকিং করে থাকেন। আজকের মারামারির বিষয়টিও আমি শুনেছি তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানায় কল করেছি।