অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা মানুষ মোটেও মেনে নিতে পারে না

সম্পাদকীয় …

অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা মানুষ মোটেও মেনে নিতে পারে না। কেননা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ভাবনারও অতীত। অথচ কোনো কোনো সময় এমন ঘটনা ঘটে যায়। আর তখন দুঃখ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রিয় সময়ে ‘রায়পুরে বিয়ের দিনেই পুকুরে ভাসল বরের লাশ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের কাঁদিয়েছে। কেননা এমন ঘটনার জন্যে বাড়ির লোকজন প্রস্তুত ছিলো না মোটেও। বড়ই অবিশ্বাস্য এই ঘটনা!

সাধারণত আমরা জানি যে, সাঁতার না জানা শিশুরাই সবার অলক্ষ্যে পানিতে ডুবে মরে যায়। খেলতে খেলতে খেলার সঙ্গীদের অগোচরে পুকুরে পড়ে যায়, এবং মরে যায়। শিশুটি সাঁতার জানতোই না-তাই এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একজন বড় মানুষ, সে জানে যে আমি সাঁতার জানি না, পুকুরে গেলে আমি মরে যাবো-এটা ভেবে সে কখনো পুকুরে গেলেও অগভীর স্থানে যাবে না। তাহলে পুকুরে ডুবে মরে যাওয়ার বিষয়টি কাকতালীয় আমাদের সবার কাছেই।

বরযাত্রার প্রস্তুতি সকলেই আনন্দে মেতে থাকে। এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। এতে সকলেই আনন্দ করে থাকে। হয়তো সকলেই ভাবছে, কিছুসময় পরেই বরকে নিয়ে কনের বাড়ি যাত্রা করবে। সেই প্রস্তুতি চলছিলো পরিবারের মধ্যে। সকলে মানসিকভাবে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছিলো বিয়ের জন্যে যেতে। কিন্তু বরের মর্মান্তিক ও রহস্যজনক মৃত্যুতে বিয়ের সমস্ত আনন্দ মুহূর্তেই মাটি হয়ে গেলো। বিয়ের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেলো। তখন প্রতিটি মানুষ পরিণত হলো বেদনায় ভেসে চলতে।
ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের রিয়াজ উদ্দিন খলিফার বাড়িতে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা গেছে, ‘নিহতের নাম আব্দুল কাদের (৩২)। বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সে ওই বাড়ির জয়নাল আবেদীনের বড় ছেলে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।’ পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সকলেরই আশা ছিলো তার উপর। দুই বছর কাদের সৌদি আরব থেকে ছিলো। ২৫ দিন আগে স্থায়ীভাবে বাড়িতে ফেরে সে। আসার পর থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। বিষয়টি পরিবারের কেউ জানতো না। দিনে ভালো থাকলেও রাতে অস্থির থাকত ও ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তাকে চিকিৎসা করাতে গেলে ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দেন। কিন্তু রাতেও ঘুম হতো না তার। অবশেষে তার ইচ্ছাতেই পারিবারিকভাবে চরমোহনা ইউপির চালতাতলী এলাকার সুমি আক্তারের সাথে বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। মেহমানও বাড়িতে আসতে শুরু করে। কিন্তু ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। চারিদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাচ্ছিলো না কেউ। প্রায় তিন ঘণ্টা পর একই এলাকার সুপারি বাগানের ভেতর পরিত্যক্ত একটি পুকুরে কাদেরের লাশ ভেসে ওঠে। দেখা গেছে, তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। সুতরাং মৃত্যুটি রহস্যজনক বলেও মনে হচ্ছে।

আমরা কিছুই জানি না, তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। তবে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে মনে হচ্ছে, যেহেতু সে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেই মানসিকভাবে অস্থির ছিলো, রাতে তার ভালো ঘুম হতো না; সেহেতু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা যায় যে, বিদেশে তার কোনো কিছু হতে পারে। অথবা এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে, যার জন্যে সে সবসময় অস্থির ছিলো। সে তার মনের কথা কাউকে বলতে পারছিলো না। অপরদিকে তার মৃত্যুটাও রহস্যজনক বলে মনে না করার কোনো কারণ নেই। সেই দিকটাও আমাদের ভেবে দেখা দরকার যে, প্রকৃত ঘটনাটি কী-যা হয়তো আমরা কেউ জানি না।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

০৯ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ২৪ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২১ সফর ১৪৪২ হিজরি, শুক্রবার