দুষ্টচক্রের কুপ্রস্তাবে রাজ না হওয়ায়!

সম্পাদকীয়….

আমরা এক অসহনীয় যাতনার মধ্যে ভেসে চলেছি

খারাপ লোক খারাপ কাজ করতে না পারলে দিশেহারা হয়ে যায়! মন্দ শক্তির অহঙ্কার তার মধ্যে চেপে বসে। তখন তার চাহিদা না মিটলে পাগলের মতো কা-কীর্তি করতে থাকে। তার চাহিদামতো আশা পূর্ণ করতে না পারলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে, দুষ্টরা সে রকমই হয়ে থাকে। দুষ্টতা তাদের মানসিকভাবে ঘিরে রাখে। তাদের মধ্যে এমন একটা ভাব যে, তারা যাচ্ছেতাই করে বেড়াবে, কোনো বাধা আসতে পারবে না। আর যদি বাধা আসে তাহলে সেটাই তাদের আত্মসম্মান নষ্ট হয়েছে বলে মনে করে। সেই বাধা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। তখই তাদের ক্রোধ বৃদ্ধি পায় ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আর তখন তারা নোংরা আচরণ বা কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। প্রিয় সময়ে ‘যে কারণে নোয়াখালীর গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি একটি নির্মম ঘটনা। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কতোটা চরিত্রহীন, কতোটা দু:সাহস ও কতোটা রুচিহীন মানুষ হলে এমনটি আচরণ করতে পারে। তার একটি বাস্তব ঘটনা আমরা জেনেছি।

এসব ঘটনা সমাজ মেনে নিতে পারে না। সমাজকে নোংরা নর্দমায় পরিণত করার জন্যে এধরনের ঘটনাগুলো দায়ী। সমাজকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দিচ্ছে এ জাতীয় জঘন্য মানুষগুলো। আমরা কখনো কখনো ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে উঠি মাত্র, কিন্তু কোনো কুলকিনারা আমরা খুঁজে পাই না। কেননা দুষ্টচক্রের মানুষগুলো খুবই শক্তিশালী ও তাদের পিছনে শেল্টার দেয়ার মতো লোক থাকে। আর তাদের ইন্দনের মাধ্যমেই সমাজ কলুষিত হয়।

উক্ত শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, ‘কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানোর কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা।’ বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ঘটনাগুলো আমাদের লজ্জায় মাথা ঠেকিয়ে দেয়। কিন্তু যারা এমনটি করে থাকে তাদের লজ্জার মৃত্যু হয় বিধায় তারা মুখ দেখিয়ে মাথা উঁচু করে সমাজে চলাফেলা করতে পারে। ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যের বউকে বা গৃহবধূকে বিবস্ত্র করার মতো জঘন্য কাজ চরিত্রহীন হলেই তো করতে পারে। মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে যদি বিকৃত মনের অধিকারী হওয়া যায় তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে কুৎসিৎ মানুষের দ্বিধা জাগে না হৃদয়ে।

সাংসারিক বিষয়ে সংসারের কোনো দুর্বলতা দেখা দিলে বাইরের আক্রমণ তখন খুব সহজেই সংসারে ঢুকে যায়। যেহেতু তখন সেই সংসার নড়বড়ে থাকে। সেই সুযোগটি দুষ্টরা গ্রহণ করে ও সংসারের উপর আঘাত হানে। কেননা তখন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার সৃযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় এবং কোনো এক সময় মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যায়। আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি যে, ঐ নারীর সাথে তার স্বামীর সাংসারিকভাবে সমস্যা চলছিলো। তাদের বিভিন্ন সাংসারিক বিষয় নিয়ে বনিবনা হচ্ছিলো না। এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে নরপশুর দল। আর মাদক ব্যবসায়ী দেলোয়ার ও তারই সহযোগী ৩/৪ জন হায়েনা মিলে ঐ নারীকে উত্যক্ত করতে থাকে ও কুপ্রস্তাব দেয়। এতে সেই গৃহবধূ রাজি না হওয়াতে খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় তার উপর। সেই নারীকে তখন বিবস্ত্র করে মারধর করতে থাকে ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। তারা এই নির্যাতনের কথা স্বীকারও করেছে। শুধু তাই নয়, তারা সেই গহবধূর ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে ছড়িয়ে দিয়ে দু:সাহস ও নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়েছে। অবশেষে মামলার প্রধান আসামী বাদল ঢাকা হতে এবং দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ কয়েকজনকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে আটক রহিম। বর্বর এ ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।’

এসব ঘটনা আমাদের কোন নোংরা যুগের ইঙ্গিত করে সেটাই ভাবার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যিই আমরা এক অসহনীয় যাতনার মধ্যে ভেসে চলেছি। সমাজের প্রতিটি মানুষ সেই দুঃখজনক ঘটনাগুলো জানতে জানতে, শুনতে শুনতে আমাদের মানসিক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। সমাজ কলুষিত হতে শুরু করেছে। অতএব, আমরা আশা করবো, এ জাতীয় ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দেয়া হোক। তাহলে অন্তত সমাজের নোংরা মানুষেরা সুন্দর সমাজ থেকে দূরে থাকবে ও সমাজ শান্তিতে চলতে পারবে।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

১১ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ২৬ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২৩ সফর ১৪৪২ হিজরি, রোববার