মানুষ কেন আত্মহত্যার মতো নরকযন্ত্রণার পথ বেছে নেয়?

সম্পাদকীয় …

মানুষ কেন আত্মহত্যার মতো নরকযন্ত্রণার পথ বেছে নেয়-এটা ভাবলেই মানুষ ব্যথিত ও মর্মাহত হয়! তারা কেন অসহায় মা বাবার কথা একটি বারও চিন্তা করে না। কেন চিন্তা করে না বাড়ির ছোট ভাই বোনটির কথা, আত্মীয়স্বজনের কথা, সমাজের কথা; যারা নিজেদের সুখ বিলাস বির্সজন দিয়ে অনেক কষ্ট করে বড় করেছে, মানুষ করেছে। কী এমন জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হয়তো পার পেয়ে যায়, কিন্তু যারা বেঁচে থাকে তারা তো তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে। কী এমন দুঃখ থাকে যে, ‘আত্মহত্যা মহাপাপ, নরকে গমন’ কথাটি ভুলে গিয়ে আত্মহত্যা করে বসে!

প্রিয় সময়ে ‘সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে স্কুলশিক্ষিকা জিনিয়ার আত্মহত্যা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, সুইটি খান জিনিয়া নামের মাত্র ত্রিশ বছর বয়সী এলাকার সানফ্লাওয়ার স্কুলের স্কুলশিক্ষিকা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক! মেয়েটি গত ১১ অক্টোবর বিকেলে উল্লাপাড়ার পৌর শহরের কলেজ পাড়া মহল্লার নিজ বাড়িতে ঘরের ফ্যানের সাথে ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে এটা জানতে পারিনি যে, মেয়েটি কী কারণে আত্মহত্যা করেছে। তবে কোনো না কোনো কারণেই তো আত্মহত্যা করেছে-সেটা নিশ্চিত না হওয়া গেলে বোঝা যাবে না।

আমরা বলতে চাই যে, ‘জন্মিলে মরিতে হইবে।’ অর্থাৎ জন্ম মৃত্যু যেন দুই সহোদর। কিন্তু তাই বলে এমন কোনো অপ্রত্যাশিত, অকল্পনীয়, অস্বাভাবিক, মনুষ্যসৃষ্টি, অসময়োপযোগী মৃত্যুকে কি সহজভাবেই মেনে নেয়া যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ সত্যি সত্যিই ভীষণ চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। দিন যতোই যাচ্ছে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় ততোই বাড়ছে। ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, এমনকি বৃদ্ধ বৃদ্ধারাও রয়েছে। কবিগুরু রবী ঠাকুরের ভাষায়, ‘মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবনে।’ অথচ সামাজিক অস্থিরতা, যৌতুক, অভাব-অনটন, অসহনীয় পারিবারিক অশান্তি, প্রেমে ব্যর্থতা, প্রতারণা, দাম্পত্য কলহ, বেকারত্ব, ধর্ষণ, ডিভোর্স আর মান অভিমানের কারণে প্রতিদিন অকালে ঝরে যাচ্ছে বহু মূল্যবান জীবন।

প্রতিদিন গণমাধ্যমে আমাদের চোখে পড়ে এমন সব করুণ দৃশ্য। কখনই গণমাধ্যমে দেশের সকল স্থানের আত্মহত্যার সব খবর প্রকাশ পায় না, গণমাধ্যম পর্যন্ত পৌঁছে না হয়তো। কারণ অনেক আত্মহত্যাই সামাজিকভাবে কিংবা লোকচক্ষুর আড়ালে গোপনে নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আত্মহত্যার চেষ্টায় সফল হয়েছে যারা তাদের বেশীরভাগ মানুষই দীর্ঘদিন ধরে খুব বিষন্নতায় ভুগেছে।

দেখা যায় যে, সাধারণ মানুষের চেয়ে ডিপ্রেশনে ভুগছে এমন মানুষের আত্মহত্যার সম্ভাবনা কোনো অংশে কম নয়। আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যধি-অপরাধ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আত্মহত্যার এই ভয়াবহতা নিয়ে আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত তেমন কোনো জোরালো সচেতনতার সৃষ্টি হয়নি। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে সচেতনতা আরো বাড়ানোর দরকার রয়েছে।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

১৮ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ০২ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ৩০ সফর ১৪৪২ হিজরি, রোববার