সাংবাদিক নির্যাতনের দায় কে নিবে?

মিজানুর রহমান রানা :
চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার। তিনি সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের স্টাফ রিপোর্টার এবং সিটিনিউজ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক।

চারদিন নিখোঁজ থাকার পর রোববার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিরা বাজার এলাকা থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। সে সময়ে তিনি একটি গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। সাংবাদিকতার লেখনির জেরেই তাকে অপহরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়।

এ ব্যাপারে পুলিশ জানায়, কুমিরা বাজারের পাশে একটি ব্রিজের নিচে তাকে পাওয়া যায়। সেখানকার স্থানীয় এক দোকানদার সাংবাদিক সরওয়ারকে খালি গায়ে পড়ে থাকতে দেখে আশপাশের সবাইকে ডেকে আনেন। মানুষজন সেখানে গেলে অজ্ঞান অবস্থায় সরওয়ার বিড়বিড় করে বলতে থাকে ‘আমি আর নিউজ করবো না, প্লিজ আমি নিউজ আর করব না ভাই’।

একজন গণমাধ্যমকর্মী দিনে-দুপুরে নিখোঁজ হয়ে যায় তার লেখনির জন্যে। আর চারদিনেও পুলিশ তাকে খুঁজে পেলো না। অথচ তাকেই ডোবার পাশে পাওয়া গেল অর্ধউলঙ্গ অবস্থায়। পুলিশ খোঁজ করে তাকে পেলো না। কোনভাবেই তা মেনে নেওয়া যায় না। একজন গণমাধ্যমকর্মীর নিখোঁজের ঘটনা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক অশনি সংকেত। বলা যায় এটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার ইংগিত।

এই চ্যালেঞ্জ কারা করছে, এরা সমাজের বিভীষণ। এদের বিরুদ্ধে লিখলে, এরা একজন সাংবাদিককে চরম নির্যাতন, হত্যা পর্যন্ত করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।

অন্যদিকে গত ক’দিন পূর্বে চাঁদপুরেও এমন একটি ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিক কবির মিজিকে একদল হিং¯্র লোক মোবাইল ফোনে তার বাবার বিরুদ্ধে লেখার জন্যে হুমকি ধমকি ও অশ্লীল গালিগালাজ করে। পরে সাংবাদিক কবির মিজি বিষয়টি স্থানীয় থানায় জিডি হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন।

সমাজের কিছু কিছু প্রভাবশালী জমি দখল করেন। খাল-বিল, নদীনালা, বালুমহালসহ সরকারি ভূমিও জোরদখল করেন। চোরাচালানি থেকে সমাজের অনেক অন্যায় কাজ করে তারা। এসব নিয়ে লিখলেই সাংবাদিকদের ওপর ক্ষেপে তারা। সাংবাদিক যখন এসব অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে তথ্যসহ তুলে ধরেন, তখন তাদের আঁতে ঘা পড়ে। ওই সাংবাদিককে নানাভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত, নির্যাতন, হত্যা করতেও তারা পিচপা হয় না। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী সাংবাদিক অনেক সময় ন্যায্য বিচারও পায় না। বরং ওই অন্যায়কারীরাই আবার আইসিটি আইনসহ বিভিন্ন আইনের মারপ্যাঁচে সাংবাদিকদের নানাভাবে নাজেহাল করতে থাকে।

চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারের কথা বিশ্লেষণ করলেই তা বুঝা যায়, কতটা নির্যাতিত হতে হয় একজন নিরপেক্ষ সাংবাদিককে। তিনি উদ্ধার হওয়ার পরও বিশ^াস করতে পারছিলেন না যে, তিনি এখন বিপদমুক্ত। তার মস্তিস্কে তখনও ভয় কাজ করছিলো। কি নিদারুণভাবে তাকে জঘন্য কায়দায় নির্যাতন করেছিলো যে, তিনি উদ্ধার হওয়ার পরও বিড় বিড় করে বলছিলেন, ভাই আর নিউজ করবো না …।

এ ধরনের সাংবাদিক নির্যাতনের দায় কে নিবে? অবশ্যই রাষ্ট্রকে গণতন্ত্রের চর্চার জন্যে সকলের মঙ্গলের জন্যে সাহসী সাংবাদিকতার চর্চার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায়, সমাজ কলুষিত হবে। রাষ্ট্র কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না।

আমরা আশা করবো, রাষ্ট্র এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিবে।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, পাঠকের আস্থাই আমাদের মূলধন

০২ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৭ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, সোমবার