শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে বলাৎকার!

সম্পাদকীয় …

শিশুদের বলাৎকার করাই হলো শিশু নির্যাতন। অর্থাৎ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা তাদের পছন্দ নয় এমন আচরণ শিশুদের সাথে করা যাবে না। শিশুদের প্রথম আশ্রয়স্থল বা শিক্ষাকেন্দ্র হলো পরিবার; এরপর শিক্ষাকেন্দ্র। আর সেই শিক্ষাঙ্গনে শিশুরা সবচেয়ে বেশি জ্ঞান অর্জন করে থাকে।

আমরা জানি শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু সেই শিক্ষক যদি হয় মানুষ মারা কারিগর তখন সেখানে আর ভরসার জায়গা থাকে না। শিশুদের জন্যে সেই জায়গা হয়ে যায় ভয়ের একটি জায়গা। প্রিয় সময়ে ‘গৌরীপুরে দুই শিক্ষার্থীকে নিয়মিত বলাৎকার করতেন শিক্ষক: পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি শিক্ষকের কুরুচির কাহিনী। যা আমাদের কষ্ট দেয় ও আমরা শিক্ষকের সমালোচনা করতে বাধ্য হই। সংবাদের মাধ্যমে জানতে পালাম যে, ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শিক্ষার্থীদের বলাৎকারের অভিযোগে উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তাছাড়া মাদ্রাসার ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ওপর পাশবিকতা চালিয়ে আসছেন দিনের পর দিন।

শুরুতে এই অভিযোগ এক ছাত্রের বাবা করেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের করফুলনেছা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদরাসায় নূরানী শাখার প্রধান শিক্ষক মোঃ বাকি বিল্লাহ্ মানিক (৩৮) নামে সেই শিক্ষকদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। জানা গেছে, এই শিক্ষক দিনের পর দিন মাদ্রাসায় শিশুদের প্রায়ই বলৎকার করতেন। এ কারণে একজন ছাত্র মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সেই ছাত্রকে তার বাবা বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসলেও সে বাড়ি ফিরে যায়। এতে সেই ছেলের বাবা অবাক হয়ে যান। তার মনে ছেলের ফিরে আসায় প্রশ্ন জাগে। তিনি বাড়ি ফেরার কারণ জানতে চাইলে, বলাৎকারের ঘটনা তার বাবাকে ও পরিবারকে জানায়। পরে ছাত্রের বাবা গৌরীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করোয় রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। জানা গেছে, শুধু ওই শিক্ষার্থীই নয়, আারেক শিক্ষার্থীকেও নিয়মিত বলৎকার করতেন সেই শিক্ষক।

এমন অভিযোগ নতুন নয়, অতীতেও আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি বলাৎকারের বিভিন্ন কৌশল। এ ধরনের ঘটনা ছাত্র-ছাত্রীদের মনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিন্ন চিন্তার উদয় ঘটায়। তাদের মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয় শিক্ষকদের সম্পর্কে। অতীতেও আমরা জেনেছি যে, ছাত্রকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বলাৎকার করতেন শিক্ষক, জুস খাইয়ে বলাৎকার, শ্রেণিকক্ষে শিশুকে বলাৎকার, মাদ্রাসাশিক্ষক আটক-ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিছু কিছু কুরুচিপূর্ণ শিক্ষক রয়েছেন যে, পেশা শিক্ষকতা হলেও নেশা তাদের ভিন্ন। তারা ছোট ছেলে শিশুদের প্রতি প্রবলভাবে যৌনাসক্ত হয়ে পড়েন। বিকৃত এই যৌন কামনা চরিতার্থের ক্ষেত্রেও আবার অদ্ভুত ভাবনা। এক শিশু দিয়ে টানা একাধিক রাত তৃপ্তি খুঁজে পান না এ জাতীয় মানুষরা। প্রতি রাতের জন্যই চাই নতুন মুখ, ভিন্ন ভিন্ন শিশু। কিন্তু তাদের এ ধরনের আচরণ যে, কুরুচিপূর্ণ ও শিশুদের প্রতি নির্যাতন সেটা তারা বুঝেন না।

শিক্ষকতার মহান পরিচয়ের আড়ালে বলাৎকার করা মোটেও কাম্য নয়। তাছাড়া আমরা কোনো কোনো ঘটনার মাধ্যমে জেনেছি যে, কোনো ছাত্র রাজি না হলে বা প্রতিবাদ করলেই তার ওপর অমানসিক নির্যাতনের খড়গ। এতে শিশুমনে আঘাত পেলেও বাধ্য হয়ে রাজি হতে হতো শয্যাসঙ্গী হতে কোমলমতি শিশুরা। এসবই হচ্ছে শিশুদের প্রতি নৃশংস নির্যাতনের বর্ণনা।

আমরা মনে করি, এ ধরনের খারাপ মানুষদের অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হোক। ধর্ষণ বলাৎকারের প্রতি জিরো টলারেন্সের কথা জানিয়ে এগুলো রোধে সামাজিক সচেতনতার ওপর জোর দেয়া খুবই প্রয়োজন। সেই সাথে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। তারা ঘন ঘন তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলবেন ও তাদের খোঁজ খবর নেবার পাশাপাশি সার্বিক দিক সম্পর্কে জেনে নিবেন। তাছাড়া একটি পরিবারের এটি অবশ্য দায়িত্ব। আমরা মনে করি, এভাবেই বলাৎকারের ঘটনাগুলো এড়িয়ে চলা যাবে।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

আপডেট সময় : 11:17 AM

৩০ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪২ হিজরি, সোমবার