চাঁদপুরে ছিন্নমূল পথ শিশুদের বিদ্যালয়ে মাদকসেবীদের আড্ডা ও ভাংচুর কেন?

সম্পাদকীয় …

সমাজে কিছু লোক ক্ষতিকার পোকার মতো মানুষের শুধু ক্ষতিই করতে পারে না। তারা সমাজের বোঝাস্বরূপ, সমাজের কোনো কাজেই তারা লাগে না। তারা সমাজে পরিত্যক্ত। এ জাতীয় মানুষ সমাজের কোনো উপকারে আসে না; বরং ক্ষতিই করে। ওরা পথশিশুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও কুণ্ঠবোধ করে না। নির্লজ্জের মতো তাদের উন্নয়ন বাধা দেয়।

জাতীয় শিশুনীতি ২০১১, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯ এবং শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলা হয়। যেসব শিশু রাস্তায় দিনাতিপাত করে, রাস্তায় কাজ করে, রাস্তায় ঘুমায়, যাদের নির্দিষ্ট কোনো আবাসস্থল নেই, যাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন রাস্তাকে কেন্দ্র করে, তারাই পথশিশু। প্রিয় সময়ে ‘চাঁদপুরে ছিন্নমূল পথ শিশুদের বিদ্যালয়ে মাদকসেবীদের আড্ডা ও ভাংচুর’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি এমনই নির্লজ্জ আচরণের কথা।

আমরা জেনেছি, চাঁদপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত ছিন্নমূল, শ্রমজীবী ও পথ শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে স্থানীয় মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। তাদের মূল উদ্দেশ্য চুরি করা। সেখানে রাখা বিভিন্ন মালামাল তারা সুযোগ পেলে চুরি করবে।

সেখানে স্থানীয় ও বহিরাগত মাদকসেবী ও দুর্বৃত্তরা সারা রাত আড্ডা জমায়। তারা সেখানে মাদক সেবন করে মাতালের মতো আচরণ করে। নেশার টাকা যোগাতেই তারা দেয়াল ভেঙ্গে ইটগুলো খুলে নেয়। তারা চুরির করার জন্যেই এমন সুযোগ সৃষ্টি করছিলো। অতীতেও তারা এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়।

আমরা জানি, যে শিশুরা ছিন্নমূল জীবনযাপন করে। যে জীবন বঞ্চনার, যে জীবন অবহেলার। তাছাড়া ওরা আর সব সাধারণ শিশুর মতো নয়। এ বয়সে ওদের কেউ মায়ের কোলে, কেউ স্কুলে থাকতে পারত। থাকতে পারত পরিবারের অটুট বন্ধনে। কিন্তু নিয়তির ফেরে এসব কিছুই পাওয়া হয় না ওদের। ওরা রাস্তায় ঘুমায়, পথে পথে ঘোরে। ক্ষুধার দায়ে রাস্তায়ই বেছে নেয় জীবিকার পথ। তাই তো ওরা টোকাই, ওরা ছিন্নমূল পথশিশু। আর ওদেরকে নিয়েই এ বিদ্যালয়!

তবে কেনো ওদের বেড়ে উঠায় এমন বাধা আসবে? কেনই বা সেখানে মাস্তানদের, মাদকসেবীদের আড্ডা চলবে? ওরা কী চায়? ওদেরকে কি আইনের আওতায় আনা যায় না? যে কোনো মূলেই হোক ওদের বিবেককে কি জাগিয়ে তোলা যায় না?

ওদেরকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যেন তারা জীবনে বেঁচে থাকতে পারে। যেন তারা স্বাভাবিক ও সুন্দর একটি জীবন ফিরে পারে। অন্য দশ জনের মতো যেন তারা বেড়ে উঠতে পারে। যেন তারা বিভিন্ন জায়গায় বোতল, প্লাস্টিকের টুকরা, ভাঙারি সংগ্রহ ও বিক্রি করে শিশুশ্রমে জড়িত না হয়। ক্ষুধা মেটাতে ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে না পড়ে। এসব থেকে তাদের বাঁচাতেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসবে কোনো ঐ দুষ্ট লোকেরা বাধা হয়ে দাঁড়াবে?

খুব সম্ভবত, দেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখের বেশি পথশিশু রয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক শিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্য পুষ্টিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত; যাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট লঞ্চটার্মিনাল কিংবা বাসস্টেশনে এরা থাকে। ওরা দয়া, মায়াহীন ও ভালোবাসাহীনভাবেই বেড়ে উঠে। ওদের এক একটা জীবন যেন অন্ধকারের জীবন! ওরা ক্ষুধার জ্বালা, একাকিত্বের কষ্ট বা সঙ্গ দোষেই জীবনযাপন করছে। ওদের এই দুর্বলতার সুযোগটা কাজে লাগায় সুবিধাবাদী কিছু লোক। ওরা এই পথশিশুদের বিভিন্ন মিছিল-মিটিং, বিভিন্ন রাজনৈতিক শোডাউনে কিংবা হরতালের পিকেটিংয়ে ব্যবহার করে থাকে। এসব থেকে যেন পথশিশুদের রক্ষা করা যায় সেজন্যেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সত্যিই, এখন দরকার যে যার অবস্থান থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। তাহলেই পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব। পথশিশুদের অনিশ্চিত ও অন্ধকার জীবনের কথা আমরা সবাই জানি। আমাদের মনুষ্যত্ববোধই পারে তাদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে। এসব শিশু ভবিষ্যতে নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত যেন না হয়। সেই সাথে আমরা চাই, প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত পথশিশু ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্যে নির্মিত বিদ্যালয়টিকে রক্ষার জন্যে, তাদের শিক্ষার পরিবেশ যাতে সমুন্নত থাকে সেজন্যে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। আড্ডাবাজদের সেখান থেকে তাড়াতে হবে।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

আপডেট সময় : ১১:৩৮ এএম

০৬ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ২১ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২০ রবিউস সানি ১৪৪২ হিজরি, রোববার