পানির অপর নাম জীবন!

সম্পাদকীয় …

আমরা শুনে ও জেনে আসছি যে, ‘পানির অপর নাম জীবন।’ প্রতিটি মানুষের জন্যেই খাদ্যের পাশাপাশি পানি অপরিহার্য। কিন্তু সব পানিই পান করার যোগ্য নয়। একমাত্র বিশুদ্ধ পানিই কেবলমাত্র পানের যোগ্য। পানি প্রতিটি মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তবে পানি যদি দূষিত ও অযোগ্য হয়, তাহলে আমাদের জীবনে প্রতি মুহ‚র্তে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়।

আমাদের চারিপাশি পানির অনেক উৎস রয়েছে। তবে সব পানিই যে স্বাস্থ্যকর তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তুলনামূলকভাবে অনেক পানি কিন্তু বিভিন্ন উপায়ে সরবরাহ করা খাবার পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু বহন করছে। দূষিত ও মানহীন পানি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা খাদ্য সামগ্রীকেও দূষিত করছে। আর সেই দূষিত খাবার আমরা প্রতিদিন গ্রহণ করছি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না যে, আমরা কী খাচ্ছি!

প্রিয় সময়ে ‘অল্প সময়ে শতভাগ মানুষের মাঝে পানি সরবারহ করা হবে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি পানি সরবরাহের নিশ্চয়তার কথা। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ যে, দেশের মানুষ বিশুদ্ধ পানির পান করার সুযোগ পাবে। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ‘স্থানীর সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী বলেছেন, ঢাকাসহ সেইফ ওয়াটার দেওয়া হবে সারা দেশের জন্য। বাংলাদেশে ৯৮ ভাগ মানষের মাঝে পানি সরবরহ করা হয়েছে। আমরা অল্প সময়ে ভেতরে আমরা শতভাগ সকল মানুষের ভেতরে পানি সরবারহ করতে পারব।’ এটা খুবই আশার কথা। কেননা প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে পানির প্রয়োজনীয় অস্বীকার করা যায় না। আমাদের বেঁচে থাকতে প্রতিটি খাদ্য তালিকাতেই কিন্তু পানির চাহিদা সর্বাগ্রে।

সত্যিই একসময় আমাদের যথেষ্ট পান করার মতো সুপেয় পানির বড়ই অভাব ছিলো। অপরদিকে দিনের পর দিন আমরাই বিভিন্নভাবে পানি নষ্ট করছি। যেমন-পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কৃষি জমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিণতি কমবেশি সবাইকেই ভোগ করতে হচ্ছে। অধিক ফসল উৎপাদনের জন্যে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে একাধারে উৎপাদিত ফসল, মাছ, পানি ও জমি মারাত্মকভাবে বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে মানুষের শরীরে সহজেই প্রবেশ করছে এই বিষাক্ত উপাদান। সুতরাং পানিকেই বিশুদ্ধ রাখা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।

তাছাড়া আমাদের দেশে বন্যা, ভূমিধ্বস ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও পানির উৎস দূষিত হয়ে পড়ছে। এসব কারণে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শৌচাগার থেকে ময়লা চারিদিক ছড়িয়ে পানির উৎসগুলো দূষিত হয়ে যায়।

অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যার দ্রæত বৃদ্ধি এবং অধিক সংখ্যায় মানুষ নগরমুখী হওয়ার কারণে এসবের সম্মিলিত প্রভাবে বাংলাদেশে পরিবেশগত দুর্যোগ ঘটে ও পানির উপর চাপ সৃষ্টি হয়। এসব কারণে শিল্পবর্জ্য, অতিরিক্ত মানুষের খাদ্য উৎপাদনের জন্যে সেচের ব্যবস্থায় অতিরিক্ত পানি উত্তোলন ও জমিতে লবণাক্ত পানির কারণে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণও বাংলাদেশে পানির গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সে কারণে বিশুদ্ধ খাবার পানিরও অভাব দেখা দিচ্ছে।

সুতরাং সেদিকটিও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে, ধনী-দরিদ্র ভেদেও মানসম্পন্ন পানি পাওয়ার সুযোগে তফাৎ রয়েছে। ধনীরা নিজেদের বাড়িতেই খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করতে পারে। অপরদিকে সরকারি বা অন্য কোনো উৎস থেকে বিশুদ্ধ পানি আনতে দরিদ্র মানুষরা আলাদা করে সময় ব্যয় করে ও শ্রম দেয়। এটা গরীবদের বাধ্য হয়ে দিতে হয়। আবার যেসব এলাকায় খাবার পানিতে আর্সেনিক রয়েছে সেসব এলাকার কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। তাদের বেঁচে থাকার জন্যেও চিন্তা করার দরকার রয়েছে।

সর্বোপরি ‘পানির অপর নাম জীবন’ কথাটি মাথায় রেখে বিশুদ্ধ পানি অপচয় রোধও আমাদের করতে হবে। কেননা আমরা পানির সঠিক ব্যবহার অনেক সময় করতে পারি না। আমরা যে পরিমাণে পানির অপচয় করছি, তাতে পানির জন্যে আমাদের হাহাকার করতে হবে-এভাবে চলতে সেদিন আর বেশি দূরে নয়!