জাটকা নিধনকারীরা কি লাভ ক্ষতি বুঝে না?

সম্পাদকীয়

জাটকা নিয়ে অসংখ্যবার বার কথা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ঠিকই; কিন্তু জেলেদের জাটকা নিধন বন্ধ হয়নি। গোপনে কিম্বা প্রকাশ্যে তারা জাটকা নিধন করেছেই। ধরা পড়ার পর কারেন্টজালও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। তবুও তারা পুনরায় জাটকা নিধন করেছে। এই জাটকা বড় হলে তাদেরই লাভ হবে, দেশের লাভ হবে, মাছের চাহিদা পূরণ হবে-তবুও তারা এসব বুঝেও না বোঝার মতো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলেছেই। এখন শুধু প্রশ্ন থেকেই যায় যে, তাদেরকে আরা কীভাবে বোঝালে তারা বুঝবে?

প্রিয় সময়ে ‘চাঁদপুরে যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে ১শ’ ১০ মন জাটকাসহ আটক ২’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি দুইজনকে আটক করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে। ওরা ধরা পড়েছে, কিন্তু গোপনে হয়তো আরো অনেকে জাটকা নিধন করে চলেছে তবে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, একশত দশ মন জাটকা আটক করা হয়েছে। এই জাটকা বড় হলেই নয়শ মনেরও বেশি মাছ হতো। কিন্তু এসব জেলেরা এই লাভের হিসাবটা বুঝতে চায় না। তারা নগদে যা’ পায় সেটাকেই লাভ বলে মনে করে।

আমরা মনে করি, এভাবেই অভিযান পরিচালনা করা উচিত। তাহলে দুষ্টু প্রকৃতির জেলেরা জাটকা নিধনে সুযোগ পাবে না। তাছাড়া কঠোর আইনে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে পুনরায় এভাবে জাটকা নিধন করতে সাহস পাবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যদি পুনরায় আইনের অমান্য করে জাটকা নিধন করে তাহলে তাদেরকে আরো দ্বিগুণ কঠোর শাস্তি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

অপরদিকে বাজারে যেন জাটকা বিক্রি না হয় সেদিকেও নজর রাখা দরকার। ক্রেতারা বা সচেতন মহল যদি জাটকা ক্রয় না করে, তাহলেই জেলেদের শাস্তি হবে। এটা অন্তত করতে সাধারণ জনগণ চিন্তা করে করতে পারলে জাটকা নিধন বন্ধ হবে। কিন্তু সেটাও আধো সম্ভব হবে কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন!

তবে দুঃখজনক কথা হলো, এভাবে গোপনে বা প্রকাশ্যে জাটকা নিধন করলে ইলিশের পরিমাণ কমে যাবে অচিরেই। এমনিতেই ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ কথাটি রূপকথার গল্পের মতোই হয়ে গেছে। বাঙালি হিসেবে এখন আমরা আর আগের মতো মাছ সহজে খাওয়ার সময় পাতে পাই না। ধানি জমিতে যত্রতত্র মাছ পাওয়া চিন্তাই করা যায় না, অথচ পূর্বে স্বাভাবিক বিষয় ছিলো; কিন্তু এখন খুবই দুর্লভ।

সরকারি বা বেসরকারি ভাবে মাছে চাষে জেলেদের উৎসাহিত করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। সেই সাথে ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। বাংলাদেশের সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ। অন্তত এই ইলিশের বংশ যেন ধ্বংস হয়ে না যায় সেই জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে সরকারিভাবে। কিন্তু এ বিষয়ে জেলেদের ও সচেতন মহলের একটু সচেতনতাই ইলিশকে বাঁচাতে পারে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ‘চাঁদপুরে যাত্রীবাহী লঞ্চে অভিযানা চালিয়ে ৪৪শ’ কেজি (১শ, ১০ মন) জাটকাসহ দুই জনকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। সোমবার মধ্যরাতে মেঘনা নদীর মোহনায় এই অভিযান চালানো হয়। আটককৃতরা হলেন-এমভি জামাল লঞ্চের সুপারভাইজার টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার টেংগুরিয়া পাড়া এলাকার মো. ফরিদ উদ্দন ও একই লঞ্চের স্টাফ পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার সরোয়ার আলম।’ এটা অন্তত দুঃখজনক। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে অভিযান চালানো হয়েছিলো। সে সময় ঢাকার উদ্দেশ্যে পটুয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা এমভি অ্যাডভাঞ্চার-১১ ও এমভি জামাল-২ লঞ্চে তল্লাশী চালিয়ে ৪হাজার ৪শ’ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। যা প্রচুর জাটকা ইলিশ বটে। এসব জাটকা একসময় প্রচুর পরিমাণে বড় ইলিশে পরিণত হতো। কিন্তু সে বিষয়টি তারা মোটেও চিন্তা করে না।

আমাদের সকলেরই বোঝা উচিত যে, জাটকা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ও আইনত দÐনীয় অপরাধ। ইলিশকে বড় হতে দেয়া উচিত। জাটকা ধরা নিজের পায়ে নিজেরই কুড়াল দেয়ার সামিল। জেলেরা কেনই বা এভাবে জাটকা নিধন করবে? ওরা কি লাভ ক্ষতি বুঝে না?