রূপগঞ্জে যুবকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ : বাড়িতো নয়, যেনো মানবতার লাইব্রেরি

নিজস্ব প্রতিনিধি :

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক যুবকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। নিজ বাড়ির সীমানা প্রাচীরে গড়ে তুলেছেন বঙ্গ থেকে বাংলা বিজয়ের ইতিহাসের লাইব্রেরী। এখানে প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। এতে স্বল্প সময়েই ইতিহাসের সঠিক সম্মুক ধারনা পেয়ে প্রশংসা করেন সর্বশ্রেণী পেশার মানুষ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার কেন্দুয়া গ্রামের ৮০ উর্ধ্ব এক বৃদ্ধ একে এম হাসমত আলী। যোদ্ধকালীন সময়ে তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধের একজন সংগঠক। হাসমত আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান শাহীন। তিনি পেশায় একজন চাকুরীজীবী। তার পাশাপাশি একজন সমাজসেবী। বাবার স্বপ্নকে বুকে লালন করে নিজ বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও বাগানে ঘরে তুলেছেন ইতিহাসের তথ্যবহুল লাইব্রেরী। এতে রয়েছে জাতীয় ৪ নেতা, বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান, মতিউর রহমান, মহিউদ্দন জাহাঙ্গীর সহ অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও গুণীজনের ছবি-তথ্য চিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহামানবদের কর্মযজ্ঞ। পাশের বাগানের গাছে গাছে সাঁটানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীমুক্তিযোদ্ধা, বিরাঙ্গণা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সহ বিভিন্ন তথ্য চিত্রের শতাধিক ফেস্টুন। এসব দেখতে প্রতিনিদিন দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, হাবিবুর রহমান শাহীন এ গ্রামেরই ছেলে। তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও বাগানকে করে তুলেছেন ইতিহাসের লাইব্রেরী। তাছাড়া সামাজিক কর্মকান্ডেও তিনি খুবই তৎপর। গেলো ১৭ ডিসেম্বর কাঞ্চন পৌরসভার মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা ও আর্থিক সম্মাননা দিয়েছেন। এছাড়া করোনাকালে এ গ্রামের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিরবে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতা করেছেন। তাছাড়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়মীত খাবার খরচ ও ইতিমখানার অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সহযোগীর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া অসহায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ ও বিবাহ সাধিতে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান শাহীন জানান, আমার বাবা একে এম হাসমত আলী ছিলেন পেশায় ছিলেন একজন সুতা ব্যবসায়ী। তিনি মুক্তিযোদ্ধের একজন সংগঠকও ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তাছাড়া ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছেন। এছাড়া কাঞ্চন বাজার পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাবার কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ হয়েই এদেশের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষন সহ সামাজিক নানা কর্মকান্ড করছেন তিনি।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা যোদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল জব্বার খাঁন পিনু বলেন, হাসমত আলী যোদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা, খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁরই ছেলে এদেশের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যতিক্রমী যে উদ্যোগ নিয়েছে সত্যিই তা প্রশংসনীয়। আমি মনেকরি নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে খুবই কার্যকর হবে।