ডাক্তার নামের গলাকাটা ব্যবসায়ীদের এই অসতর্কতা মেনে নেয়া যায় না!

সম্পাদকীয় ….

অতীতেও ডাক্তারদের অসতর্কতার পরিচয় আমরা পেয়েছি। এর ফলে রোগীদের মৃত্যু পর্যন্তও হয়েছে। অন্তত ডাক্তারদের এ ধরনের অসতর্কতা মেনে নেয়া যায় না। গতকাল প্রিয় সময়ে ‘কুমিল্লায় সিজারের ৫ মাস পর সার্জারি করে পেট থেকে বের করা হলো গজ!’

ঘটনাটির মাধ্যমে আমরা এটা পরিস্কার বুঝতে পেরেছি যে, ডাক্তাররা খুব দ্রæত গতিতে তাদের চিকিৎসা শেষ করতে চান। এতে তারা অন্য রোগীদের দেখার সুযোগ পান। অর্থাৎ কোনো কোনো ডাক্তার রয়েছেন, রোগীদের মুখ থেকে দুই লাইন শারীরিক অবস্থার কথা শুনেই ব্যবস্থাপত্রে ঔষধের নাম লিখে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। তারা চান তাড়াতাড়ি এক রোগী বিদায় করে দিয়েই অন্যরোগীর কথা শুনতে। এতে হুড়োতুড়ি করতে গিয়ে ভুল হয়ে যায়।

তেমনি প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, পেটের ভেতর গজ থেকে যাওয়াটাও ডাক্তারদের হুড়োহুড়ির কারণেই ঘটেছে বলে মনে করছি। কেননা একজনকে তাড়াতাড়ি সিজার করে অন্য আরেকটি মহিলাকে সিজার করতে পারলেই তো টাকা হাতে আসবে। এমন চিন্তা সৎ ডাক্তারদের থাকা উচিত নয় বলে মনে করি।

একজন মানুষকে অপারেশন করাটা ডাক্তারদের জন্যে খুবই স্পর্শকতার ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এটি জীবন-মরণেরও প্রশ্ন বটে। একটু অসাবধানতা বা অমনোযোগী হলেই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সিজারিয়ান অপারেশনের মতো বিষয়টিও অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের জন্যে। কিন্তু আমরা দেখলাম যে, এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পেটে গেজ থেকে গেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো বিষয় নয়। ঐ ডাক্তারদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত। আমরা জেনেছি, ‘কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রায় পাঁচ মাস পর এক নারীর পেট থেকে বের করা হলো গজ (ব্যান্ডেজ)। এই দীর্ঘ সময়ে গজটি ওই নারীর পেটে থাকায় তাতে পচন ধরে তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।’ মানুষ অসুস্থ হলে সুস্থ হওয়ার জন্যেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকে।

অবস্থা খারাপ হলে অর্থাৎ নরকাল ডেলিভারী হওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকলেই কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরী সিজার করতে পরামর্শ দেন। সুতরাং এটা কোনো নরমাল বিষয় নয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, অপারেশেনের কিছুদিন পর থেকেই ঐ মহিলা তার পেটে ব্যাথা ও ক্ষত থেকে পুঁজ বের হতে থাকে। পরে তাকে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিলো। তাতে ঐ মহিলার সুস্থ হওয়ার মতো অবস্থা দেখা যায়নি। অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায়, ঐ মহিলাকে কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে ডা.কর্ণেল আবু দাউদ মো. শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক তার পেটে সার্জারি করে আস্ত গজ (ব্যান্ডেজ) বের করেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলাটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে চারিদিকে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, রোগীর অবস্থা বর্তমানে সঙ্কটাপন্ন রয়েছে।

‘আমরা অনুতপ্ত’ এটুকুই যথেষ্ট নয়। আমরা মনে করি আরো সতর্ক হওয়া উচিত। সেই সাথে এই রোগীর বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত-যেন রোগী বেঁচে যেতে পারে সেজন্যে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও দায়বহন করা দরকার বলে মনে করছি। অন্তত সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সেক্ষেত্রে যেন ভবিষ্যতে এভাবে আর কোনো মহিলা এমন ভুক্তভোগীর শিকার না হতে পারে। কেননা এই অসতর্কতা মেনে নেয়া যায় না!