চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের স্বামী পরিত্যক্ত প্রতিবন্ধী পারভীনের নিজের কোনো ঘর নেই!

জহিরুল ইসলাম জয় :
জন্ম থেকে দুই পা ল্যাংড়া, প্রায় ৩৫ বছর পূর্বে বাবা মাকে হারিয়েছে। ল্যাংড়া পা নিয়ে ছোট বেলা থেকে মানুষের বাড়ীতে ছোটখাটো কাজে সহযোগিতা করে বেড়ে উঠা। ভাই বোনের অভাবের সংসারে শুধু অভাব আর অভাব। তার পর থেকে যে যার মত করে নিজ নিজ জীবন সংগ্রামে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। একটা সময় প্রতিবন্ধী পারভীনও উপায় অন্ত না পেয়ে দেশের দূরবর্তী স্থানে গিয়ে এক প্রকার ভিক্ষা ভিক্তিতে শারীরিক ভাবে বড় হয়ে উঠলে বিয়ে হয় এক আধপাগলার সাথে। সেই ঘরে এক সন্তান নিয়ে প্রতিবন্ধী পারভীন বাবার বাড়ীতে ভাইদের কুড়ের ঘরে বসবাস এক যুগ ধরে।

সরেজমিনে গিয়ে এমন কথাগুলো জানা যায় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের মনতলা সর্দার বাড়ীতে।

বাড়ীটির চার পাশে মাঠ, চলাচলের রাস্তা নেই। বাড়ীতে প্রায় ৭/৮ টি পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন মৃত নুরুল ইসলাম সর্দারের ছোট মেয়ে প্রতিবন্ধী পারভীন বেগম (৩৮)।

বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে আধপাগলা স্বামী রিপন মিয়ার কোন খবর নেই। এক সন্তান বুকে লালন করে প্রতিবন্ধী পারভীন মানুষের বাড়ীতে কাজ করে রাত্রি যাপন করছে ভাইয়ের ভাঙ্গা চুরা বসত ঘরে।

স্থানীয় বিল্লাল সর্দার, মিজান মিজি, হোসেন মিজি বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকে দেখেছি প্রতিবন্ধী পারভীনের সংগ্রামী জীবন। এক সন্তান নিয়ে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে দিন শেষে ভাইয়ের ভাঙ্গা ঘরে রাত্রিযাপন। একটু বৃষ্টি হলে ঘরে পানিতে একাকার হয়ে যায়। আমরাও চাই প্রতিবন্ধী পারভীন সরকার কিংবা কোন দানশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে একটি নতুন ঘর পাক।

প্রতিবন্ধী পারভীন বেগম বলেন, জন্মগত ভাবে আমার দুই পা খোড়া হয়ে হাটতে হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী কার্ড পাইনি। তবে মাঝে মধ্যে চাল আনতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খুব কষ্ট করে আনতে হয়।

শুনেছি সরকার গরিব মানুষকে থাকার জায়গা ও ঘর দেয়। আমার তো কোনো থাকার জায়গা নাই। ভাইয়ের পরিবার পরিজন নিয়ে বছরে মাঝেমধ্যে বাড়ীতে আসলে আমরা মা ছেলে বাহিরে ঘুমাতে হয়। আমি একজন প্রতিবন্ধী হিসাবে সরকারের কাছে থাকার জন্য ছোট একটা ঘর চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন পাটোওয়ারী বলেন, প্রতিবন্ধী কার্ডের বিষয় আমার জানা নাই, পূর্বের মেম্বাররা যদি না করে থাকে তাহলে আমি ব্যবস্থা করে দিব। ঘর সরকার দিচ্ছে তা চেয়ারম্যান তদারকি করেন, তবে আমিও চাই প্রতিবন্ধী পারভীন একটি ঘর পাক।

সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাও শারাফত উল্ল্যাহ বলেন, মুজিবর্ষ উপলক্ষে সরকার ঘর দিচ্ছে, আর তা তদারকি করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিষয়টি ইতিপূর্বে আমার নজরে আসলে ভূমিহীন তালিকায় নাম দেওয়ার সুযোগ ছিল, তার পরেও আমি চেষ্টা করবো প্রতিবন্ধী পারভীনেরর জন্য নতুন ঘরের বিষয়ে।