জনপ্রতিনিধির অনৈতিক খায়েশ ও কিশোরীর তালাক

মিজানুর রহমান রানা :

একজন জনপ্রতিনিধি (চেয়ারম্যান) তৃণমূলের মানুষের আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল। সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানায় এলাকার সমস্যা দূর ও সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলার জন্য। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কানায় একজন জনপ্রতিনিধির অসীম গুরুত্ব। এদেশে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরূপী জনপ্রতিনিধি এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, দারিদ্র দূরীকরণ, যৌতুক প্রকার দূরীকরণ, ভিক্ষাবৃত্তি দূরীকরণসহ সামাজিক নানা সমস্যায় জনগণের পাশে থাকার কথা। কিন্তু মাঝে মাঝে এমনসব ঘটনার অবতারণা হয় যা দেখে ও শুনে মানুষের মধ্যে একপ্রকার ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ হয়।

বলছিলাম, পটুয়াখালীর বাউফলের কথা। ওই এলাকায় শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের অনৈতিক কাÐ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তিনি এলাকার জনগণের স্বার্থ দেখবেন, সেখানে তিনি নিজের স্বার্থের বিভোর হয়ে ওই কিশোরীকে একদিনের বিয়ে করে ফেললেন, যা মানুষের কাছে হাসি ও ঘৃণার পাত্র হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই ইউনিয়নে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই কিশোরীর। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে তারা দুজন পালিয়ে যায়। বিষয়টি কিশোরীর বাবা কনকদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান। এরপর চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়ার কথা বলে শুক্রবার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে ছেলে ও মেয়ের দুই পরিবারকে যেতে বলেন।

সেই অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউপি কার্যালয়ে যান। সেখানে মেয়েটিকে দেখে চেয়ারম্যানের খায়েস সৃষ্টি হয়ে যায়। রক্ষক হয়ে যান ভক্ষক। তিনি তার খায়ের পূরণে মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। শুক্রবার দুপর ১টায় স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেককে বাড়িতে ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার।

বিয়ের পর তা জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। গত শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ৫ লাখ টাকা দেন মোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেছিলেন। শনিবার ওই একই কাজীর মাধ্যমেই তালাক সম্পন্ন হয়। প্রেমঘটিত সালিশ বৈঠকে মেয়েকে দেখে বিয়ের খায়েস হওয়ার পর তাৎক্ষণিক বিয়ে করা সেই চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে গেছে কিশোরী। শনিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় তাদের তালাক সম্পন্ন হয় বলে মেয়ের বাবা নিশ্চিত করেছেন। কিশোরীর বাবা জানান, তার মেয়ে এখন তাদের বাড়িতেই আছেন।

তবে এ ব্যাপারে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার জানান, ওই মেয়ে তাকে স্বামী হিসেবে মেনে না নেয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্তমানে মেয়েটিকে তার বাবার সঙ্গে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

সাধারণ মানুষের অভিমত, একজন জনপ্রতিনিধিরূপী চেয়ারম্যান যেখানে মানুষের হিতকরণে এগিয়ে আসবেন কিন্তু তিনি তা না করে হাস্যস্পদ কাÐ করে এলাকায় মানুষের কাছে হাসির পাত্র হয়েছেন।