সদাপ্রভুর ব্যবস্থা (শিক্ষা) গ্রহণ করি

সদাপ্রভুর শিক্ষা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়

ক্ষুদীরাম দাস
মূল পাঠ ঃ হিতোপদেশ ৩ অধ্যায় ১ পদ (বৎস, তুমি আমার ব্যবস্থা ভুলিও না; তোমার চিত্ত আমার আজ্ঞা সকল পালন করুক।)

এই অংশে একজন পিতা তার প্রিয় সন্তানকে আহŸান করেছেন। যে আহŸানে সাড়া প্রদান করলে জীবনে পরিপূর্ণতা আসবে। আসবে নতুন বিষয়; যা জীবনকে সুন্দর ও গতিময় করবে, মনে সর্বদা থাকবে আনন্দ। যে আনন্দে কোনো দুঃখ থাকবে না, থাকবে না কোনো যাতনা, থাকবে না কোনো ঝামেলা, থাকবে না কোনো অভাব-অনটন। আর সেই আনন্দের মাঝে বেঁচে থাকতে আমরা সকলেই আশা করি। তবে আমাদের আশা পূরণ হবে না-যদি না আমরা আহŸানে সাড়া না দিই।

সদাপ্রভু ঈশ^র আমাদের অনেক আজ্ঞা (আদেশ) দিয়েছেন। যে আদেশগুলো আমাদের সকলেরই পালন করা উচিত। কিন্তু সদাপ্রভুর আজ্ঞা আমরা পালন করতে চাই না। আমরা তার কাছে সম্মুখে আসতে চাই না। ঈশ^রের সম্মুখে আসার মতো সময় আমাদের হয় না। যদি আমরা ঈশ^রের সম্মুখে আসি তাহলে আমরা তার আদেশগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারি। তার বাক্য আমাদের সুন্দর সুন্দর আদেশ প্রদান করে।

সদাপ্রভুর আদেশ আমাদের সকলেরই পালন করা উচিত। অথচ সদাপ্রভুর আদেশগুলো আমরা ভুলতে বসেছি। ফলে আমরা বিপথে চলে যাচ্ছি। সদাপ্রভুর আদেশ আমাদের জীবনের চলার পথে আলোর মতো। যে আলো আমাদের চলার পথে পড়লে আমরা সবকিছু পরিস্কারভাবে দেখতে পারি। কিন্তু আমরা সেই আলোতে বা সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে চলতে চাই না।
আমাদের চিত্ত বা অন্তর পাপে পরিপূর্ণ। আমরা পাপ কাজে লিপ্ত রয়েছি। পাপ আমাদের ঘিরে রেখেছে। ফলে আমাদের অন্তরে সদাপ্রভুর আলো প্রবেশ করতে পারছে না। আমাদের অন্তরে বাধা হয়ে রয়েছে পাপের জন্যে। সেই পাপ আমাদের অন্ধ করে রেখেছে। সে কারণে আমরা ভালো মন্দ বুঝতে পারছি না। আর সে ধরনের অন্তরে প্রভু প্রবেশ করবেন কীভাবে? তিনি তো আমাদের দ্বারেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আর আমরা যদি পাপ কাজ ত্যাগ করে প্রভুকে আহŸান করলেই তিনি আমাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তার আগে আমাদের পাপের কাজ ত্যাগ করতে হবে। অথচ আমরা সেই পাপের কাজ থেকে বের হতে পারছি না।

শয়তান আমাদের অন্তরে বসেই রয়েছে। সে কারণে আমরা প্রতিনিয়তই পাপ করছি। কেননা পাপ করতে আমাদের ভালো লাগে। আমরা অন্যরকম পাপময় সুখ খুঁজে পাই। পাপের কাজগুলো আমাদের অসৎ আনন্দে ভাসিয়ে রেখেছে। সে কারণে আমাদের অন্তরচক্ষু কালো কাপড়ে বেঁধে রাখা রয়েছে বলে আমরা বুঝতে চাই না কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। তাই সত্যিকারে ভালোবাসা আমাদের হৃদয় থেকে হারিয়ে গেছে। আমরা ভালোবাসি চুরি করতে, আমরা ভালোবাসি মিথ্যা বলতে, আমরা ভালোবাসি ঠকাতে, আমরা ভালোবাসি মিথ্যা সাক্ষী দিতে, আমরা ভালোবাসি কারো সম্পদ কেড়ে নিতে।

সত্যি আমরা ঈশ^রের ব্যবস্থা (শিক্ষা) ভুলে গেছি। আমরা অনেকেই গীর্জায় যাচ্ছি, বাইবেল পড়ছি ঠিকই; কিন্তু বাইবেলের শিক্ষা আমাদের অন্তরে থাকে না। আমাদের গর্ব আর অহঙ্কার সেই শিক্ষা থেকে আমাদের দূরে রেখেছে। আমরা ঈশ^রের সত্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। আমরা যতদিন ঈশ^রের ব্যবস্থা ভুলে থাকবো ততদিন আমাদের কোনো মুক্তি আসবে না।
আজ আমাদের কারো কারো জীবনে অশান্তি, নানা সমস্যায় আমরা জর্জরিত। এর কারণ হলো আমরা ঈশ^রের শিক্ষা ভুলেই আছি। যে শিক্ষা আমাদের সঠিক দিকনিদের্শনা দেয় সেই শিক্ষা থেকে আমরা অনেক দূরে রয়েছি। কেননা আমরা পবিত্র শাস্ত্র পাঠ করি না, পবিত্র শাস্ত্র আমরা শুনতে গীর্জায় যাই না, প্রার্থনা করি না, প্রশংসা গান করি না। এসব আমাদের ভালো লাগে না। ভালো লাগার জায়গাটি দখল করে আছে শয়তান।

কোনো সন্তান নষ্ট হয়ে যাবে-এটা কোনো পিতা বা মাতা আশা করে না। যখন কোনো সন্তান অসৎ হয়ে যায় বা সঠিক পথে চলে না; তখন পিতামাতার মনে খুবই কষ্ট হয়। আর পিতামাতা তাকে সঠিক পথে আনার জন্যে অনেক শিক্ষা প্রদান করেন। যখন কোনো সন্তান খারাপ পথে দূরে সরে যায় তখনই পিতামাতা হিসেবে তাকে আহŸান করে যেন সে তাদের শিক্ষা ভুলে না যায়। এখানে সদাপ্রভু আমাদের পিতা! তিনি আমাদের আহŸান করছেন যেন আমরা তার ব্যবস্থা (শিক্ষা) ভুলে না যাই।

কিন্তু আমাদের জীবনে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা (শিক্ষা)’র প্রদীপ নিভু নিভু কোথাও কোথাও। আর কোথাও একেবারেই নিভে গেছে। প্রতিনিয়ত প্রভুর শিক্ষা গ্রহণ না করলে প্রভুর শিক্ষা আমাদের অন্তর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সুন্দর গীর্জা আছে, কিন্তু মÐলীতে উপাসনায় মানুষ নেই। এ কারণে তারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সম্পর্কেঙ দিন দিন ভুলতে বসেছে। সত্যি সত্যি এটা অত্যন্ত কষ্টকর যে, রবিবার বা প্রভুর দিনে উপাসনালয়ে খ্রীষ্টভক্তদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে! প্রভুর দিনে প্রভুর উপাসনালয়ে অনেকের অনুপস্থিতিতে প্রভুকে কষ্ট দেয়। আর অনুপস্থিত থাকে বলে তারা প্রভুর ব্যবস্থা (শিক্ষা) তাদের অন্তরে নেই। সত্যিই, উপাসনালয়ে খ্রীষ্টভক্তদের সংখ্যা দিন দিন কমেই যাচ্ছে। এটি চোখে পড়ার মতো! তাই প্রশ্নটা চলে আসে যে, কেনই বা মানুষ গীর্জায় আসছে না বা উপাসনা করতে আসছে না! মানুষ এখন আর গীর্জায় আসতে চায় না। কোনো আগ্রহ নেই মানুষের মধ্যে। তাহলে কোথায় যায় মানুষ!

আগেকার মানুষদের মুখে শোনা যায় যে, তারা যখন গীর্জায় আসতেন তখন দলে দলে পরিবারের সকল শিশুরাও গীর্জায় ছুটে আসতো। তখন মানুষের মধ্যে গীর্জায় আসার জন্যে আলাদা একটা আগ্রহ ও আনন্দ ছিলো। রবিবারের জন্যে পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতো মানুষ। সমস্বরে দূর হতে গান শোনা যেতো ‘আহা! কী মধুর তব প্রেম পরশ।’ সাথে বাদ্যযন্ত্র তো ছিলোই। এখন আগেকার মানুষদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তারা বলে থাকেন, কোথায় গেলো সেই দিনগুলো?

গীর্জায় কেনো মানুষের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে?-এ ধরনের প্রশ্ন হতাশার, বড় দুঃখের প্রশ্ন। এর উত্তর খুঁজে পাওয়া আরো বড় দুঃখের। যে কোনো খ্রীষ্টভক্তদের হৃদয় হু হু করে কেঁদে উঠে যখন গীর্জায় মানুষের উপস্থিতি নেই। মানুষকে ডেকেও পাওয়া যায় না। হয়তো বিরক্তও হয় কেউ কেউ, যখন কেউ তাদের গীর্জায় আসার জন্যে উৎসাহিত করে। কারণ, গীর্জায় আসতে তাদের মোটেও আগ্রহ নেই। কোনো এক অদ্ভুত আকর্ষণে তারা হারিয়ে যায়, ভিন্ন জগতে। সেখানে মেতে উঠে ক্ষণিকের আনন্দ ধ্বনিতে।
অনেক আগের কথা চিন্তা করি, যখন কোনো গ্রামে মাত্র একটি সাদা কালো টিভি ছিলো। সেই টিভি দেখার জন্যে ভিড় লেগে যেতো। অনেক দূর থেকেও মানুষ ছুটে আসতো। ঠেলাঠেলি করে বসতো মানুষজন। উদ্দেশ্য টিভি দেখা, টিভি দেখতেই হবে। আর এখনকার কথা চিন্তা করুন, যদি একটি সাদা কালো টিভি একই গ্রামের উঠোনে দেখার জন্যে রেখে দেয়া হয় তাহলে দর্শক পাওয়া যাবে না। সেখানে রঙিন টিভি রাখলেও কেউ তাকাবেও না। আবার কোনো বাড়িতে যদি রঙিন টিভি থাকতো তাহলে অন্যান্য পরিবারের লোকজন সেই টিভি দেখার জন্যে ভিড় জমাতো। কিন্তু এখন কেউ কারো বাড়িতে অন্তত টিভি দেখার যায় না। টিভি দেখার জন্যে মানুষ মানুষের বাড়িতে যায়, এটি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে হাস্যকর বিষয় হবে। কিন্তু গীর্জায় খ্রীষ্টানদের অনুপস্থিতি কোন ধরনের হাস্যকর পরিস্থিতি!

আগে বাইবেল ও গানবই হাতে নিয়ে গীর্জায় যাওয়া অন্যরকম আকর্ষণের বিষয় ছিলো। এতে হৃদয়ে ভক্তি চলে আসতো। বাইবেল ও গানবই হাতে করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও ছিলো চমৎকার। কিন্তু এখন সে রকম দৃশ্য চোখে পড়ে না। কারণ, স্মার্ট ফোনে অ্যাপ আছে। বাইবেল ও গানবই অনায়াসে পাওয়া যায়। তাই বাইবেল ও গানবই নিয়ে গীর্জায় যাওয়ার প্রয়োজন মনে করে না কেউ। তবে যারা বয়স্ক তারাই হয়তো বাইবেল ও গানবই ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়, কারণ তারা স্মার্ট ফোন হয়তো ব্যবহার করতে জানে না, তাই তাদেরকে নিয়ে যেতে হয়।অপরদিকে আমরা আমাদের শিশুদের বা আত্মীয়স্বজনদের যে কোনো উপলক্ষে বাইবেল বা গান বইও উপহার হিসেবে দিই না। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের হাতে স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ কিনে উপহার দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি বেশি। অথবা কারো কারো কাছে এসব উপহার হাস্যকরও বটে! খোঁজ করলে হয়তো জানা যাবে যে, বাইবেল ও গানবই বিক্রিও কমে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। তাই বলে গীর্জায় উপস্থিতি কেনই বা কমে যাচ্ছে!

একটি মজার কথা বলি, এই তো বেশি দিন আগের কথা নয়-যখন গীর্জায় তাড়াতাড়ি বাইবেলের পদ খুলে বাইবেল পড়াটা ছিলো বড়ই আনন্দের। কিন্ত এখন একজনকে বাইবেল ধরিয়ে দিয়ে কোনো পুস্তকের অংশবিশেষ পাঠ করার জন্যে বললে হয়তো বাইবেলের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হাতড়াতে থাকবে, কিন্তু সেই অংশটুকু খুঁজে পাবে না। কারণ, তার বাইবেল পড়া ও ঘাঁটাঘাঁটি করার অভ্যাস নেই। তবে সে স্মার্টফোনে তাড়াতাড়িই বের করে দিতে পারবে ও পড়তে পারবে। সুতরাং বাইবেল কেনার দরকার কী?

একবার কোনো এক অনুষ্ঠানের বই বিক্রির স্টলে গিয়ে দাঁড়ালাম নতুন কোনো বই পাওয়া যায় কিনা। সেখানে দু’জন ব্যক্তির মধ্যে কথা হচ্ছে। একজন স্টলে থাকা ম্যাগাজিন সম্পর্কে মন্তব্য করলেন, ‘এখন আর আগের মতো ম্যাগাজিন কিনতে মানুষ চায় না। ধীরে ধীরে ম্যাগাজিন কেনা বন্ধ হয়ে যাবে, কেউ আর কিনবে না।’ তখন অন্যজন প্রতিউত্তরে বললো, ‘কেনই বা কিনবে, ইন্টারনেটে সবকিছু পাওয়া যায়; বই কিনে দু’দিকে টাকা খরচ করবে কেন?’

তবে কথা হলো, গীর্জায় ভক্তদের আসা বন্ধ হলো কেন? এটাও কি সে ধরনের কিছু! ভিন্ন কোন আকর্ষণে মানুষ গীর্জামুখী হচ্ছে না?

অন্যকে এই প্রশ্নটি করার আগে, নিজেকেই প্রশ্নটি করলাম, ‘আমি কেন গীর্জায় যাই না?’ (প্রিয় পাঠক, মাঝে মাঝে আমিও গীর্জায় যাই না, তাই প্রশ্নটি আগে নিজেকেই করলাম।) উত্তরে আমি যা পেলাম, তাহলো-আমি ব্যস্ত, ক্লান্ত, বিরক্ত, বিশ্রামের দরকার, সময় নেই অথবা আত্ম ইচ্ছুক বটে; কিন্তু মাংস দুর্বল। যদিও এগুলো সবই অজুহাত; তবে আমার মতো অসংখ্য ব্যাক্তি রয়েছেন বৈকি।

আসুন আমরা একটু জানার চেষ্টা করি, কেন মানুষ গীর্জায় বা উপাসনালয়ে যায় না বা উপাসনালয়ে মানুষের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে কেনোঃ

কারণ- ১ ঃ ঈশ^র ভয় কমে যাওয়া ঃ আমরা এখন ঈশ^রকে ভয় পাই না। কারণ আমরা ঈশ^রকেই ভুলে গেছে। ঈশ^রের পরাক্রম, ক্ষমতা, দয়া সম্পর্কে আমরা জানি না। ঈশ^রের ক্রোধ সম্পর্কে ও এর ফলে যে ভয়াবহ পরিণতি আসতে সেটা আমরা মোটেও উপলব্ধি করতে পারি না। আমরা ঈশ^রকে খুঁজি না-কারণ আমাদের র্ঈশ^র ভয়শীল জীবন নেই, কমে গেছে। এ কারণে রবিবারের উপাসনায় আমাদের উপস্থিতি নেই।

কারণ-২ ঃ রবিবার ছুটির দিন নয় ঃ আমাদের কর্মক্ষেত্র ও আমাদের সন্তানদের স্কুল কলেজ রবিবার ছুটি থাকে না। এটি একটি দারুণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্যে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সন্তানদের রবিবারের উপাসনায় অনুপস্থিত থাকা ও তাদের মা বাবা বা অভিভাববদের উপাসনায় না আসাটা স্বাভাবিক বিষয়। হয়তো ইচ্ছা থাকলেও তারা গীর্জায় উপাসনা করতে আসতে পারেন না বা তাদের সন্তানদেরও গীর্জায় পাঠাতে পারেন না। ফলে উপাসনায় একাংশের অনুপস্থিত লক্ষণীয়।

কারণ-৩ ঃ ব্যস্ততা ও ক্লান্তি ঃ আমরা বর্তমানে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছি; সত্যিই আমরা খুবই ব্যস্ত। বাঁচার জন্যে ছুটে চলেছি কাজের দিকে-চারিদিকে। তাই আমরা খুবই ব্যস্ত। আমাদের উপাসনায়ও সময় দেয়ার মতো সময় নেই। তাছাড়া এই ব্যস্ততার কারণে আমরা এতোটাই ক্লান্ত থাকি যে, অন্তত রবিবারে আমরা বিশ্রাম আশা করি। আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্যে ঘরে থাকি, অথবা মনের ক্লান্তি দূর করবার জন্যে দূরে কোথাও ছুটে চলি। তবুও গীর্জায় উপাসনায় আমরা আসি না। এ কারণে গীর্জায় উপস্থিতির পরিমাণ এতো কম।

কারণ-৪ ঃ আধুনিকতা নেই ঃ আগে আমরা বাড়িতে মাটিতে বসে, চাটাইতে বসে খেতাম। কিন্তু এখন আমরা সেভাবে খাই না। আমরা টেবিল চেয়ারে বসে খাই। এটি আধুনিকতার জন্যে হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং আমাদের উপাসনালয়ে কেনো এই পরিবর্তন আসবে না! আমরা উপাসনায় কীভাবে বসি সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোথাও কোথাও উপাসনায় চাটাইতে বসে দীর্ঘসময় উপাসনা করে থাকে। এটি কারো কারো জন্যে খুবই কষ্টের বিষয়। আবার কারো কারো শারীরিক সমস্যাও রয়েছে। আর এসব কারণেই উপাসনায় উপস্থিতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

কারণ-৫ ঃ মÐলীতে দলাদলি ঃ উপাসনায় খ্রীষ্টভক্তদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার জন্যে মÐলীতে দলাদলি কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। হয়তো মÐলীতে এমনই দলাদলি যে, কখনো কখনো কোনো কারণে মারামারি হয়েছে; কিম্বা মারামারির উপক্রম। আর সেই রেষ দীর্ঘদিন ধরে বয়ে চলেছে। এ কারণে একটি দল গীর্জায় যাওয়া হয়তো বন্ধ করেই দিয়েছে। তাছাড়া আজকের গীর্জা অমুকের। তাই ঐ লোকের উপাসনা পরিচালনাকারীর উপাসনায় যাবো না। এমন কটাক্ষ মনোভাবের লোকেরও কিন্তু অভাব নেই। অথবা মÐলীতে দল আছে কয়েকটি। তাই কোন্দলের কারণে একদলের গীর্জায় উপস্থিতি দেখা যায় না।

কারণ-৬ ঃ ওল্ড ফ্যাশন ঃ ঘৃণিত স্মার্ট ব্যক্তিদের নোংরা মনোভাব রয়েছে যে, গীর্জায় যাওয়াটা ওল্ড ফ্যাশন। তাদের ধারণা গীর্জায় যাওয়ার দরকারই বা কি? রবিবার অন্য কোথাও গেলেও তো ভালো। সে ধরনের মানুষের কাছে গীর্জায় অনুপস্থিত থাকাটা আধুনিক। তারা মনে করে, ঈশ^র সম্পর্কে জানার দরকার হলে তো, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানা যায়। তাই তারা গীর্জায় উপাসনা করতে আসে না।

কারণ-৭ ঃ কাজের অজুহাত ঃ যখন উপাসনায় আসার সময় হয় তখন অনেক কাজ এসে জমা হয়। সে সময় আমরা আমাদের কাজটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। উপাসনায় যাওয়াটা তখন আমাদের জন্যে গুরুত্ব হয়ে দাঁড়ায় না। এটাকে কাজের অজুহাত দেয়া বলা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।

কারণ-৮ ঃ নেতাদের দাপট ঃ দুষ্ট নেতাদের হুংকার বা দাপটের কারণেও অনেকে উপাসনায় উপস্থিত থাকতে চায় না। যাদের নেতৃত্বে রয়েছে স্বার্থপরতা, অভদ্রতা। আবার কিছু নেতা রয়েছে যে, তাদের থাকে সবসময় তারা মÐলীর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে; অন্যেরা থাকতে পারবে না। তারা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করেই যাবে। তাই অনেকেই মানহানির কারণে উপাসনায় আসতে চায় না, উপাসনায় আসা প্রয়োজন মনে করে না। তাই মÐলীর একটা বড় অংশ তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে থাকে; এ কারণে তাদের কাছাকাছি আসাটা পছন্দ করে না। ফলে ক্রমেই উপাসনায় উপস্থিতি কমতে থাকে।

কারণ-৯ ঃ দায়িত্ব পালনে অনীহা ঃ স্বেচ্ছায় মÐলীর দায়িত্ব পালনে অনীহাও একটি অন্যতম কারণ। অপরদিকে মÐলীতে পালকীয় দায়িত্ব পালন করবার মতো যোগ্য ব্যক্তি বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পালক না থাকাও একটি বিষয়। আত্মীক শক্তিশালী নেতৃত্ব না থাকাও প্রধান বিষয়। ফলে গীর্জায় আহŸান করার মতো পালক না থাকায়ও ধীরে ধীরে গীর্জায় উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।

কারণ-১০ ঃ স্বেচ্ছাসেবক ঃ ইচ্ছা করলে শক্তিশালী মÐলীগুলো দুর্বলগুলো মÐলীগুলোকে সাহায্য করতে পারে। তারা একটি পরিকল্পনা করে দুর্বল মÐলীর পাশে দাঁড়িয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ, দুর্বল মÐলীগুলো পরিচালনার জন্যে লোকের বড়ই অভাব। আর সেখানে গীর্জাও নিয়মিত হয় না। কারণ, গীর্জায় উপস্থিতি কমে যাচ্ছে, বা কেউ উপস্থিত হয় না। আমাদের অনেক মÐলী রয়েছে, যে মÐলীগুলো সত্যিই আত্মীকভাবে খুব শক্তিশালী। তাদের গ্রামীণ মÐলীগুলোর জন্যে সাড়া দেয়া উচিত। যেন গ্রামীণ মÐলীগুলোতে বা দুর্বল মÐলীগুলোতে উপাসনায় উপস্থিতি বাড়তে পারে। তারা যেন প্রতি রোববার নিয়মিত উপস্থিত হয়, সেজন্যে আকর্ষণীয়ভাবে নতুন কিছু করতে পারে।

কারণ-১১ ঃ ভিন্ন চিন্তা ঃ আমাদের পরিবারগুলো আমাদের শিশুদের গীর্জায় বা উপাসনায় যেতে খুব একটা উৎসাহিত করে না। অথবা তারা নিজেরাও গীর্জায় আসে না; এমনকি তাদের সন্তানদেরও পাঠাতে চায় না। কিন্তু অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে বেশ উৎসাহের সাথে সেখানে যায় ও নাচানাচি করে আনন্দ করে থাকে।

কারণ-১২ঃ অলসতা ঃ আমরা অত্যন্ত অলস প্রকৃতির। আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্বল। হয়তো আমাদের মন চায়; কিন্তু আমাদের শরীর সইতে পারে না; অলসতা আমাদের শরীরে ভর করে। তাই উপাসনায়ও যাওয়া হয় না। এভাবে ধীরে ধীরে উপাসনায় উপস্থিতিও কমে যাচ্ছে।

কারণ-১৩ঃ ঈশ^রকে গুরুত্ব দেয়া না বোঝা ঃ আমরা জগতের সবকিছুকে গুরুত্ব দিই। সেটাকেই বেশি প্রয়োজন বলে মনে করি। কিন্তু ঈশ^রকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। তাছাড়া নতুন প্রজন্ম বা শিশুদের চার্চমুখী না করা বা সাÐেস্কুলে না পাঠানো। অথবা মÐলীতে সাÐেস্কুলের ব্যবস্থা না থাকা। কিন্তু তারা গুরুত্ব দিচ্ছে প্রাইভেট, কোচিং, গান বা নাচের স্কুল তাদের জন্যে গুরুত্ব পেয়েছে। সে কারণে উপাসনায় যাওয়াটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। আবার রবিবার হলো, ঈশ^রের উপাসনা করার দিন, বিশ্রাম দিন। খ্রীষ্টভক্তদের মিলনের দিন বা সহভাগিতার দিন। আগে এমন সহভাগিত ছিলো। কিন্তু এখন রবিবারের উপাসনায় আনন্দ নেই; কারণ, বিনোদন এখন বাইরে রয়েছে। কেননা বাইরে বিনোদনের অনেক ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া হাতে রয়েছে ফোন, ইন্টারনেট। তাই এসবকেই বেশি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আবার আমাদের এমন অনেক শিশু সন্তানরা রয়েছে, যারা স্কুলে পড়াশোনা করলেও সুযোগের অভাবে পাঠ্য হিসেবে খ্রীষ্ট ধর্মীয় বই পড়ছে না বা পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। তাকে বাধ্য হয়ে অন্য ধর্মের বই পড়তে হচ্ছে। এতে খ্রীষ্টধর্মের বিষয়ে শিশু বেলা থেকেই অজানাই থেকে যাচ্ছে।

কারণ-১৪ঃ বিশ^াসে অপরিপক্কতা ঃ আমরা অনেকে খ্রীষ্টিয় বিশ^াসে স্থির নেই; আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। জগতের বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে বা নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারণে আমাদের ভেতর থেকে বিশ^াস ভেঙ্গে গেছে। আর আমরা উপাসনায় যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

কারণ-১৫ ঃ উপাসনায় একঁেগয়েমী ঃ কারো কারো কাছে উপাসনার নিয়মকানুন গতানুগতিক একগেঁয়েমী। তাদের কাছে এক তরকারি প্রতিদিন খেতে ভালো লাগে না-সে ধরনের কিছু। তারা উপাসনায় ভিন্নমাত্রা যোগ করতে চায়। তারা হয়তো আধুনিকতা আশা করে উপাসনায়। সে রকম কিছু পায় না বলে উপাসনায় আসতে চায় না। জাগতিক চাকচিক্যে তাকিয়ে মনোনিবেশ করা ও ধর্মের প্রতি বিমুখ হওয়া। তাছাড়া উপাসনায় ভক্তরা নতুন মুখ আশা করে। সবসময় এক রকম লোকের বক্তব্য ভালো লাগে না। আবার কোনো কোনো বক্তা রয়েছেন যে, পুলপীঠে দাঁড়িয়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্যে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে বেশি কথা বলেন। বা প্রচারকের পুলপীঠে কথা বলার মতো প্রস্তুতি থাকে না। সে ক্ষেত্রে বাইবেলের সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে সঠিক বিষয় শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে না। এতে শ্রোতারা বা সদস্যরা আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া বক্তব্যও যুগোপযোগী হয় না বা আকর্ষণীয় নয়। অর্থাৎ আজ থেকে ৫০ বছর আগে যে রকম প্রচার সে রকমই রয়ে গেছে; আধুনিকতা বা নতুনত্ব নেই। তাই সদস্যরা বোর্রিং ফিল করে ও গীর্জায় উপস্থিত হতে চায় না। আর ধীরে ধীরে উপস্থিতি কমতে থাকে।

কারণ-১৬ঃ খ্রীষ্টীয় আদর্শ নেতৃত্বের অভাব ঃ এটিও গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষণীয়। মÐলীতে আদর্শ নেতৃত্ব না থাকায় মানুষজন উপাসনায় যাওয়াতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। হয়তো মÐলীর নেতৃত্বে এমন একজন রয়েছে, যার মধ্যে আত্মীক ভালো জীবন নেই। মÐলীগুলোতে খ্রীষ্টীয় নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে। নেতৃত্ব নিয়ে মÐলীগুলোতে প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে অনেক সদস্যরা উপাসনায় উপস্থিত হয় না।

কারণ-১৭ঃ দারিদ্রতা ঃ ‘ক্ষুধার রাজ্যে পূর্ণিমার চাঁদ যেন জলসানো রুটি’ প্রবাদটি আমাদের সবারই জানা। আর আমাদের গ্রামীণ মÐলীগুলোতে দারিদ্রতা রয়েছে বৈকি। ‘নুন আনতে যেখানে পানতা ফুরায়’ সেখানে তারা ধর্মের কথা শুনতে চায় না। এসব ঐ দরিদ্র লোকদের কথা। তারা ক্ষুধা নিবারনের জন্যে কাজকেই গুরুত্ব দেয়। এই অজুহাতে তারা উপাসনায় আসতে চায় না। তারা সময় দিতে চায় না ঈশ^রের উপাসনা করবার জন্যে। তারা খাদ্যের যোগানের জন্যে কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

কারণ-১৮ ঃ গীর্জা অনেক দূরে ঃ এটিও একটি অজুহাত। তারা বক্তব্য হলো, আমার গীর্জায় যেতে অনেক সময় লাগে। যাতায়াত খরচ বেশি। অনেক দূরের পথ, তাই গীর্জায় যাওয়া হয় না। এ কারণে যাদের বাড়ি গীর্জা থেকে দূরে তারা গীর্জায় আসে না বা খুবই কম আসে। এ জন্যে গীর্জায় উপস্থিতি কম।

কারণ-১৯ ঃ উপাসনা ঘর নেই ঃ কারো কারো কথা হলো, আমাদের ভালো কোনো উপাসনা ঘর নেই। তাই উপাসনা করতে পারি না। ঈশ^রের উপাসনায় অনুপস্থিতির জন্যে বা মিলত না হওয়ার জন্যে একটি বড় অজুহতা।

কারণ-২০ঃ যুবক-যুবতীদের অনীহা ঃ যুব সমাজ শক্তিশালী একটি দল হতে পারে মÐলীর জন্যে। কিন্তু তাদের উপস্থিতি রবিবারের উপাসনায় তেমন একটা দেখা যায় না। খ্রীষ্টীয় জীবন তাদের খুবই দুর্বল। পরিবারগুলোও তাদের খ্রীষ্টীয় জীবনযাপনে উৎসাহিত করে না; তাদেরকে বাইরের জগতে পাঠানো হয় অথবা যুবকরাই বাইরের জগতকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।। আবার হতে পারে উপাসনায়ও যুবকদের তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। কারণ, তাদেরকে উৎসাহিত করার মতো কেউ নেই। অথবা, নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্যে তাদের আহŸান করা হয় না। রবিারের উপাসনায় তাদের অনুপস্থিতির জন্যে এগুলো কারণ হতে পারে।
কারণ-২১ঃ পেইড পালক না থাকা ঃ মÐলীর সদস্যরা প্রত্যাশা করে যে, যেন পালক সদস্যদের জন্যে প্রার্থনা করেন ও তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নেন বা ভিজিট করেন। কিন্তু সেটা পালকরা করেন না, কারণ তাদের কথা হলো আমি এজন্যে কোনো বেতন পাই না। এ কারণে অনেক সদস্যরা উপাসনায় অনুপস্থিত থাকে।

অতএব, আসুন আমরা সকলে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা (শিক্ষা) গ্রহণ করি। সদাপ্রভুর শিক্ষা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। সমস্ত অন্তর দিয়ে সদাপ্রভুর আজ্ঞা (আদেশ) পালন করা উচিত। সকলে ঐক্যমতে ঈশ^রের আরাধনায় ঈশ^রকে সময় দিই। তিনিই আমাদের রক্ষাকর্তা। আমেন।