বাঘের কাছে প্রাণভিক্ষা

জি এম মুছা :

ছোট বন্ধুরা তোমরা সুন্দরবনের অনেক গল্প কাহিনী পড়েছো নিশ্চয়ই। সুন্দরবনের কথা মনে পড়তেই কিন্তু সবার আগে মনে পড়ে যায় হালুম -হালুম বাঘ মামার কথা, তখন কিন্তু ভয়ে আমাদের সকলের গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে, ভয়ে একেবারে সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে। তোমরা হয়তো বিভিন্ন বই-পুস্তক এ সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল এর কথা পড়েছো, হলুদ কালো ডোরাকাটা দাগ এর এই বাঘ দেখতে তোমাদের খুব ভালো লাগে, কিন্তু তোমরা কি জানো বন্ধুরা সুন্দরবনের এই হিংস্র প্রাণীর মাংসাশী?খুবই সাহসী হিংস্র ও শক্তিশালী ,একবার যদি কোন প্রাণী তার দৃষ্টিতে পড়ে যায় তার আর কোন রক্ষা থাকেনা। তাকে যেভাবেই হোক সে শিকার করেই তবে ছাড়ে।

তোমরা জেনে আরো খুশি হবে আমাদের বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে প্রাকৃতিক ভাবে বিশাল এক বনভূমি গড়ে উঠেছে, যা আমাদের দেশের সমান। যাকে আমরা (ম্যানগ্রোভ) বলে থাকি। আর এখানেই অন্যসব নানা প্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বসবাস করে, সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো? আমাদের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিশ্বের অন্য কোন জঙ্গলে কিন্তু পাওয়া যায় না এদের নাম বিশ্বব্যাপী। অন্য প্রজাতির বাঘ পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের সুন্দরবনেই পাওয়া যায়, যে কারণে প্রত্যেক দেশেই আমাদের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অনেক বেশি সুনাম। এ তো গেল আমাদের দেশের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা।

এবার আমি তোমাদের ভারতের দিল্লির চিড়িয়াখানার এক বাঘের গল্প বলবো, আশা করি তোমরা কেউ ভয় পাবেনা, তাছাড়াও গল্প পড়ে ভয় পাওয়ার কি আছে? যদিও সত্য ঘটনা , চিড়িয়াখানায় তো আমরা সব সময় বাঘ, সিংহ, হরিণ, চিতাবাঘ, বানর -সহ বিভিন্ন রকমের হিংস্র প্রাণী চিড়িয়াখানায় টিভিতে অনেক চ্যানেলে দেখে থাকি তাই ভয় পাওয়ার কোনো কারণই নেই।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে রহস্যজন কভাবে মাকসুদ নামের ১৬/১৭ বছরের এক যুবক ভারতীয় এক চিড়িয়াখানার উঁচু প্রাচীরে উঠে পড়ে, তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড়, হঠাৎ দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ যুবকটি প্রাচীর থেকে গড়িয়ে প্রাচীরের কাছে যেখানে বাঘ ,সিংহ- অন্যান্য প্রাণীদের জন্য একটা বড়(বড় পরিখা ছিল) পুকুর, সেটা ছিল জল শূন্য তার মধ্যে পড়ে গেল, ঐ সময় চিড়িয়াখানার একটি বাঘ পুকুরটির কাছে বিচরণ করছিল। হঠাৎ বাঘটটি একজন মানুষ দেখতে পেয়ে বাঘটি তার দিকে এগিয়ে গেল, প্রথমে কিছুটা হতভম্ব ও কৌতুহলভরে কিছুক্ষণ মাকসুদের দিকে তাকিয়ে থাকলো, মাকসুদের প্রাণপাখি তখন বেরিয়ে যাওয়ার মত উপক্রম, “ভয়ে তার আতারাম খাঁচায় উঠলো”। বেচারা মাকসুদ খুব অসহায়ের মতো পুকুরের পাড়ে পিঠ লাগিয়ে হাতজোড় করে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার ভঙ্গিতে বসে রইল! সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ংকার মূর্তিমান আতঙ্ক সাদা 🐅 বাঘটি, তারপর মাকেসুদের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বারবার হাত জোড় করে বাঘটির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইল! অনেক কাকুতি- আকুতি-মিনতি জানালো তাকে না খাওয়ার জন্য ,কিন্তু কে শুনে কার কথা। মানুষের কাকুতি-মিনতি সে কি আর বোঝে? বাঘটি তখনও মাকসুদের দিকে স্থির চোখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো!

ঠিক তখনই ঘটলো এক বিপত্তি, চিড়িয়াখানার অন্যান্য দর্শনার্থীরা যুবকটির বিপদ আঁচ করতে পেরে বাঘটিকে দূরে সরানোর জন্য ইট, পাটকেল ,ডালপালা যে যা পেল হাতের কাছে ,তাই ছুড়ে মারতে লাগল বাঘের গায়ে, বাঘটি রাগে ক্ষোভে দাঁতের উপর দাত রেখে কট -মট হা করে দাঁতের পাটি বের করে খেপে উঠলো, সুযোগ বুঝে মাকসুদ দিল এক দৌড়, কিন্তু না মাকসুদের শেষ রক্ষা হল না,

বাঘটি রেগে মেগে একবার ছুটে গিয়ে মাকসুদের ঘাড়ে বসিয়ে দিল জোরে এক থাবা, অমনি লুটিয়ে পড়ল মাটিতে এরপর ঘাড় মটকে কামড়ে ধরে টানতে টানতে বাঘটি মাকসুদকে বাঘের খাঁচার কাছে নিয়ে রেখে দিল। তারপর কি হল জানো কিছুক্ষণ পরে মাকসুদ নীরব -নিথর ও নিস্তব্ধ হয়ে গেল।

পরক্ষণেই সে মারাও গেলো কত নিষ্ঠুর, ভয়ঙ্কর এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বলতো একবার।

বাঘের কাছে যুবক মাকসুদ বাঁচার জন্য হাতজোড় করে হাজার কাকুতি-মিনতি করে বাঁচতে পারল না শেষ পর্যন্ত।

সমাপ্ত: (সূত্র দৈনিক ইত্তেফাক ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ইং)

Gmail: gmabumusa89@gmail.com
jashore /Bangladesh.

তারিখ: ১৫/০৯/২০১৭ ইং।