সবাইকে অশ্রুসিক্ত করে চলে গেলেন দোহারের এসিল্যান্ড জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র

মাকসুমুল মুকিম, দোহার-নবাবগন্জ প্রতিনিধি :

নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র ২৮ জুলাই বুধবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন তিনি।

জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র ৩৪ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন সদস্য। ২০১৯ সাল থেকে দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে দোহারবাসীর ভালোবাসা জয় করে বিদায়লগ্নে প্রশংসায় ভাসলেন তিনি।

বিশেষ করে দোহার উপজেলার কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি উদ্ধার, নামজারি জমাভাগ খারিজ সংক্রান্ত মামলা শুনানির মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি, ভূমি নিয়ে স্থানীয় বিরোধের অবসান, স্বচ্ছতার সঙ্গে ভূমি সেবা প্রদান, সহজীকরণ, সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা, ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে খাস জমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।

মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে সম্মুখসারি তে থেকে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মোবাইল কোট পরিচালনা করে
দোহার উপজেলায় ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে হতদরিদ্র গৃহহীন পরিবারের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ প্রকল্পে কঠোর নজরদারি, কাজের স্বচ্ছতা, টেকসই, মজবুত ও দুর্যোগসহনীয় গুণগতমান ঠিক রেখেছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ভেজালবিরোধী অভিযান, পরিবেশ রক্ষায় অভিযান, অবৈধ বালু উত্তোলনে অভিযান, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং প্রতিরোধে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

এসিল্যান্ডের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি ভূমি অফিসে স্বচ্ছ পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। করেনাকালে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে তার ভূমিকা ছিল অসীম।

করোনকালে সরকারের ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নও সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে দিনরাত এক করে কাজ করেছেন তিনি। মাঠ পর্যায়ে তার কর্মকাণ্ড অতুলনীয়।তার কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের দূরত্ব অনেকটা কমে গেছে।

দোহার বাসী মনে করছেন, মাঠ পর্যায়ে একজন সৎ, দক্ষ, পরিশ্রমী ও পরোপকারি মানুষ এসিল্যান্ড জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র । তিনি সততা দিয়ে দোহারবাসীর ভালোবাসা জয় করেছেন। জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র চলে গেলেও তার কর্মকাণ্ড থেকে যাবে দোহারবাসীর হৃদয়ে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে দোহার উপজেলার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন এসিল্যান্ড জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র তিনি দোহারবাসীর মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তিনি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার মহিষবান্দী গ্রামের পূর্ণ চন্দ্র বর্মনের ছেলে শিশুকাল থেকে বাল্যকাল কাটে গ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে। ২০০২ সালে স্কুল সেরা জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে গাইবান্ধার একটি স্বনামধন্য বেসরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক এ ভর্তি হন। সেখানেও কলেজের সেই ব্যাচে ৪.৪০ জিপিএ নিয়ে সেরা কৃতি ছাত্র হিসেবে ভূষিত হন জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র। উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। সেখানেও কৃতিত্বের সাথে সফল হোন এই কর্মকর্তা। মাস্টার্স পরীক্ষা সম্পন্ন করেই চাকরি নেন গার্মেন্টস এর ডাইং ফ্যাক্টরি পাকিজা গ্রুপে। দীর্ঘ চার বছর আট মাস চাকরি করেন পাশাপাশি চলে বিসিএস প্রস্তুতি। বিসিএস ৩৩ ৩ম ব্যাচের সকল ধাপ উত্তীর্ণ হয়েও নন ক্যাডার হিসেবে সিলেক্ট হোন।

অবশেষে বিসিএস ৩৪ তম ব্যাচে সফলভাবে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এর জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত হোন। ২০১৬ সালে ১ জুন বিভাগীয় কমিশনার ঢাকা মহোদয় এর কার্যালয়ে যোগদান করে তাকে পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখান থেকে আবার পাঠানো হয় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডারদের সাথে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে। প্রশিক্ষণ কোর্সে তিনি ৩য় স্থান অধিকার করে স্বর্ন পদক অর্জন করেন। তাকে আরো উচ্চতর বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এর জন্য পাঠানো হয় মালয়েশিয়া তে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ৩ বছর সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনডিসিসহ বেশ কয়েকটি শাখার দায়িত্ব পালন করেন। এর পর সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঢাকায় ২০১৯ সালের ১৪ মে থেকে আজ অবধি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নিরলস ভাবে সততার সাথে কাজ করে গেছেন তিনি।