এক পা নিয়েই জীবন সংগ্রামে টাঙ্গাইলের রিকশাচালক রফিকুল

বিশেষ সংবাদদাতা :
‘চাচা, বৃষ্টি জোরে নামছে। আইস্যা পড়েন।’ রাজধানীর শাহবাগ শিশু পার্কের বিপরীতে ঢাকা ক্লাবের অদূরে মধ্যবয়সী এক রিকশাচালককে উদ্দেশ্য করে একজন যাত্রীকে এ কথা বলতে শোনা যায়।

এ সময় রাস্তায় থাকা অন্যান্য রিকশাচালক বৃষ্টিতে কাকভেজা হওয়া থেকে রক্ষা পেতে দৌড়ে যাত্রী ছাউনির নিচে ছুটে আসলেও মধ্যবয়সী ওই রিকশাচালককে হ্যান্ডেলে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা দুটি হাঁটার ক্র্যাচ খুলতে দেখা যায়।

একটু ভালো করে খেয়াল করতেই দেখা যায় রিকশাচালকের একটি পা নেই। ক্র্যাচে ভর দিয়ে যখন যাত্রী ছাউনির নিচে পৌঁছান তখন তিনি কাকভেজা হয়ে গেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারঘোষিত লকডাউনে বৃহস্পতিবার (২৯জুলাই) দুপুরে হঠাৎ করে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে এ প্রতিবেদকের চোখে এমন দৃশ্যে ধরা পড়ে।

কৌতূহলবশত তার নাম পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রফিকুল ইসলাম নামে ওই রিকশাচালক জানান, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল। রাজধানী মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় গত ১৭/১৮ বছর যাবত পরিবার নিয়ে থাকছেন। কয়েক বছর আগেও তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন না। তিনি গাড়ির বডি চেসিস বাঁধাইয়ের কাজ করে বেশ ভালোভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন।

একদিন মাছের কাটা পায়ে ফুটে গেলে শুরুতে আমলে নেননি। পরবর্তীতে পায়ে পচন ধরলে অস্ত্রোপচার করে একটি পা কেটে ফেলা হয়। পা হারিয়ে প্রথমে পান সিগারেটের দোকান ও পরবর্তীতে টাকা পয়সা জমিয়ে তরকারি বিক্রি করতেন।

ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও আশপাশে কর্মীদের বাসা থাকায় বেচাকেনা ও আয় রোজগার বেশ ভালোই হত। কিন্তু বছর তিনেক আগে থেকে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হতে থাকে। ফলে তরকারির ব্যবসায় আয় রোজগার কমতে থাকায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে নতুন সংগ্রামে নামেন।

ওই রিকশাচালক জানান, করোনার শুরু থেকে ভয়ে ভয়ে রাস্তায় রিকশা নিয়ে নামেন। তাছাড়া লকডাউনসহ নানা কারণে শহরে লোকজন কম থাকায় আগের মতো যাত্রীও পান না। দুটি ছেলে স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করায় সংসার ও তাদের খরচ চালাতে নিত্যদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফেরেন। একটি পা না থাকলেও তার দুঃখ নেই। সারাদিন পরিশ্রম করলেও গায়ে লাগে না। হালাল রোজগারে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোই আছেন বলে জানান।