ভূমধ্যসাগরে মৃত সাত বাংলাদেশির ৫ জনই মাদারীপুরের

নিউজ ডেস্ক :

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাবার সময় ভূমধ্যসাগরে প্রচণ্ড ঠান্ডায় মারা যাওয়া সাত বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুরে। এই ঘটনায় দালালদের কঠোর বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, অভিযোগ পেলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
ভূমধ্যসাগরে মৃত সাত বাংলাদেশির ৫ জনই মাদারীপুরের

একমাত্র ছেলে ইমরান হোসেন আর ফিরবে না এ শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মা জামিলা বেগম ও বাবা শাহজাহান হাওলাদার। সুদে টাকা এনে ও গহনা বিক্রি করে দালালদের হাতে ৮ লাখ টাকা দেওয়ার পর ছেলের মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার।

স্বজনরা জানায়, গত ২২ জানুয়ারি অবৈধভাবে সমুদ্রপথে লিবিয়া হয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওয়ানা হয় ২৮০ শরণার্থী। তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে গেলে প্রবল ঝড়ো বাতাসের পর টানা ৬ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। এ সময় নৌকার মাঝি কূলকিনারা হারিয়ে ফেলে। পরে ইতালির পুলিশকে খবর দিলে তারা সবাইকে উদ্ধার করে। এ সময় অসুস্থ বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) মারা যান মাদারীপুরের পেয়ারপুরের জয় তালুকদার। পরে শনিবার মারা যান পশ্চিম পেয়ারপুরের ইমরান হোসেন, ঘটকচরের সাফায়েত, মোস্তফাপুরের জহিরুল, বাপ্পি, সুনামগঞ্জের মাসুদপুরের সাজ্জাদ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সাইফুল। সবার মরদেহ দেশে আনতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালিয়ান দূতাবাস।

স্থানীয়রা জানায়, বড়াইলবাড়ী গ্রামের সোনামিয়া খানের ছেলে জামাল খান ও দক্ষিণপাড়া গ্রামের সলেমান বেপারীর ছেলে সামাদ বেপারী ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে নেন ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা করে। এই ঘটনায় দালালদের কঠোর বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

মৃত ইমরানের বাবা শাজাহান হাওলাদার বলেন, ‘আমি ভ্যানগাড়ি চালিয়ে খাই। আমার একটাই মাত্র পোলা। ধারদেনা কইরা পোলাডারে বিদেশে পাঠাইছিলাম। এখন আমার সংসার চলবে কী করে।’

ইমরানের মা জামিলা বেগম বলেন, দালালদের কাছে দুই দফা ৮ লাখ টাকা দিয়েছি। আমার ছেলে অসুস্থ থাকার পরও লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠায় দালালরা। এই দালালদের কারণেই আমার ছেলে মারা গেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, সবকিছু জেনেও মানুষ অবৈধ পথে ইতালি যাচ্ছে। বার বার মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে, তা না হলে এই প্রবণতা কমবে না।

এদিকে মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।