নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর মা-মেয়ে কুপিয়ে হত্যা মামলা ডিবিতে

নিজস্ব প্রতিনিধি :

নারায়ণগঞ্জ শহরের ডালপট্টি এলাকায় মা ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।

মামলা ডিবিতে হস্তান্তরের তথ্য নিশ্চিত করে এসপি জায়েদুল আলম বলেন, ঋণগ্রস্ত হওয়ার পর হতাশ যুবক টাকা জোগাড়ের উদ্দেশ্যে ওই ঘটনা ঘাটিয়েছেন। তাকে রিমান্ডে আরও ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার ল্যাপটপ, ফেসবুক আইডিসহ ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ১ মার্চ দুপুরে ডালপট্টি এলাকার মাতৃভবন নামে ছয়তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবনের ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে খুন হন গৃহিনী রুমা চক্রবর্তী (৪৬) ও তার ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা কন্যা ঋতু চক্রবর্তী (২২)।

এই ঘটনায় ওই ফ্ল্যাট থেকেই আটক করা হয় আল জুবায়েদ ওরফে স্বপ্নীল (২৬) নামে এক যুবককে। বুধবার তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে আসামি আল জোবায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ইতোমধ্যে তাকে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।


জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু জানান, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিকভাবে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটের বিষয়টি সামনে আসলেও এর পেছনে অন্য কিছু আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিকে অন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থাও জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

রহস্যের ঘেরা ২ চরিত্র :

নারায়ণগঞ্জে মা ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার যুবক জোবায়ের ও নিহতের পুত্রবধূ ফারজানা শিলাকে নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। খুনের সময় একই ফ্ল্যাটে অবস্থানকারী ফারজানার অক্ষত অবস্থায় ফ্ল্যাট থেকে বটি নিয়ে বের হয়ে আসার যে গল্প শোনা যাচ্ছে তা মানতে নারাজ অনেকেই। এছাড়াও এলাকায় ভদ্র ও নামাজি বলে পরিচিত জোবায়ের এমন কাজ করতে পারেন- তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

তবে পুলিশ বলছে- টাকার অভাব মেটাতেই জোবায়ের এই খুন করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। রহস্যে ঘেরা ফারজানা শিলা এখন কোথায় অবস্থান করছেন তা জানাতে পারছেন তার শ্বশুর রাম প্রসাদ।

এই লোমহর্ষক হত্যার ঘটনায় নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ চক্রবর্তী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। বুধবার (০২ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গ্রেপ্তার জোবায়েরকে একমাত্র আসামি করে এই মামলা করা হয়। পুলিশ গ্রেপ্তার জোবায়েরকে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মোহসীন শুনানি শেষে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে শহরের টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সাইদুজ্জামানকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাম প্রসাদ চক্রবর্তী তার ভাড়া বাড়ির পাশেই ‘মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স’ নামে একটি পাইকারি আড়তে ম্যানেজারের চাকরি করছেন বহু বছর ধরেই। তার ছেলে হৃদয় চক্রবর্তী কয়েক মাস আগে ফারজানা শিলা নামে এক মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেন। হৃদয় শহরের মাসদাইর কবরস্থানের পাশে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি ভালোবেসে ওই মেয়েকে বিয়ে করার আগে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন। এ নিয়ে রাম প্রসাদের সঙ্গে হৃদয়ের মনোমালিন্য চলছিল। বিয়ের পর থেকে হৃদয় তার স্ত্রী ফারজানাকে নিয়ে আলাদা থাকতেন, তবে কোথায় থাকতেন তা ঠিক বলতে পারেননি কেউই। ৩/৪ দিন আগে হৃদয় ও তার স্ত্রী রাম প্রসাদের ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকতে আসেন বলে জানিয়েছেন নিচ তলার আশপাশের দোকানিরা।

এদিকে রাম প্রসাদ বলছেন, তার স্ত্রী নিহত রুমা চক্রবর্তী ছেলের বিচ্ছেদ সইতে পারেননি বলে তিনি হৃদয় ও ফারজানাকে এসে থাকতে বলেছিলেন। তবে ফারজানার স্থায়ী বাড়ি কোথায় বা এখানে কোথায় ভাড়া থাকতো সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই রাম প্রসাদের কাছে। এমনকি ঘটনার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ফারজানাকে তার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে তিনি কোথায় আছেন তাও জানেন না বলে দাবি করেছেন রাম প্রসাদ। পাশাপাশি ছেলে হৃদয় কোথায় আছে সেই প্রশ্নেরও উত্তর রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অপরদিকে গ্রেপ্তার জোবায়েরের নিজ বাড়ি পাইকপাড়া এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, জোবায়েরের বাবা আলাউদ্দিন মিয়া একজন লবণ ব্যবসায়ী। নিজেদের ছোট্ট দোতলা বাড়ির ওপরের একটি কক্ষে থাকতেন জোবায়ের। নিচ তলায় আলাউদ্দিন তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন।