মনপুরায় ২ মাস পর ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা

রাকিবুল হাছান, মনপুরা প্রতিনিধি :

দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভোলার মনপুরার জেলেরা।

শনিবার গভীর রাত থেকেই জেলেরা ট্রলার নিয়ে ছুটবেন মেঘনা নদীতে। আবারও জেলে পাইকার আড়তদারদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠবে মনপুরা উপজেলা মৎস্য ঘাট গুলো।নিষেধাজ্ঞা শেষ মূহুর্তে মৎস্য ঘাটে জাল, নৌকা ও ট্রলারের ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করছেন ২মাস নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা।

অভাব অনটনের মধ্যে বেকার সময় কাটানোর পর কোনা বাধা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে তারা নদীতে মাছ ধরতে যাবেন, তাই হাসি ফুটেছে জেলেদের চোখে-মুখে। জেলে পাড়াতেও যেন উৎসবের আমেজ। মাছ বিক্রির টাকায় মহাজনের দাধন আর ধার-দেনা পরিশোধ করার চিন্তাও করছেন জেলেরা। এতে করে সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করছেন বেশিরভাগ জেলে।

মনপুরা মৎস্য অফিসার সূত্রে জানাজায়, ইলিশের অভয়াশ্রমে ইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।জেলেরা অপেক্ষায় ছিলেন কখন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আর কখন তারা নদীতে নামবেন। অবশেষ সেই প্রতিক্ষার পালা শেষ করে শনিবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে মাছ শিকার।

উপজেলার মৎস্য ঘাট গুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য জেলেরা প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই করেছেন। এখন জাল, খাবার পানি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে তাঁরা ট্রলার প্রস্তুত করছেন।
আবার মেঘনা পাড়ে জেলেদের জাল বুনছেন। অন্যদিকে কেউ ট্রলারে রং দিচ্ছেন। কেউ বা নতুন করে নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামত করছেন। মাছ ধরতে যাবেন এমন প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।

জনতা বাজার মাছ ঘাট এলাকায় বাসিন্দা, মোঃরফিক মাঝি বলেন, দুই মাস নদীতে মাছ ধরতে যাইনি, বেকার বসে ছিলাম। এখন মাছ ধরার শুরু হবে, তাই জাল বুনছি। নদীতে যাবো, ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে দেনা পরিশোধ করবো।এবং সামনে ঈদুল ফিতর। কোন আয়ের উৎস না থাকায় হতাশায় দিন কাটা চাচ্ছি। দুই দিনে যদি ভালো মাছ পাই তা হলে ভালোভাবে ঈদ টা করতে পারবো পরিবার পরিজন নিয়ে।

এইদিকে নিষেধাজ্ঞা মনপুরার ১০ হাজার ৫শত জেলের মাঝে সরকারের বরাদ্দকৃত চাউল পেয়েছেন ৭ হাজার জেলে পরিবার। একমাসের ৪০ কেজি করে চাউল।নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও এখনো চাউল পায় নি অন্যন জেলেরা।মৎস্য অফিস থেকে প্রাপ্তি তথ্য মতে জানাজায়,দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা সরকারি ভাবে জেলের জন্য ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি চাউল বিতরণ করা হবে।কিন্তু জেলেরা এক মাসের চাউল পেয়েছে ৪০ কেজি।

তালতলা ঘাটের বশির মাঝি বলেন, দুই মাস নদীতে যেতে পারিনি। এখন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়ে পুরাতন নৌকা মেরামত করছি, নদীতে যাবো, মাছ পেলে সেই টাকা দিয়ে দেনা পরিশোধ করবো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ না পেলে আবারো সংকটে পড়তে হবে।

মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মৎস্যঘাটে জেলে, পাইকার ও আড়ৎদারদের হাক-ডাকে সরগরম হয়ে উঠবে, ইলিশ ধরায় সেই চির চেনা দৃশ্য মিলবে ঘাটগুলোতেও।

মনপুরা জনতা বাজার মৎস্য আড়ৎদার অলিউল্লাহ কাজল বলেন, জেলেরা নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাছ ধরার শুরু হলে জেলেদের পাশাপাশি মৎস্য আড়ৎদাররাও লাভের মুখ দেখতে পাবেন।

মনপুরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, আমাদের ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল হয়েছে। মধ্যরাত থেকে জেলেরা আবার নদীতে মাছ শিকার যেতে পারবেন কোন বাঁধা ছাড়াই। তবে জেলেদের পরের মাসের চাউল বিতরণ জন্য চিঠি দিয়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান এর কাছে।তাদের সময় অনুযায়ী তারা জেলের মাঝে সেই চাউল বিতরণ করবে।