শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং, অশ্লীল নৃত্য ও ডিজে পার্টি বন্ধ হোক

বন্ধু হোক। বন্ধু হওয়া উচিত। যা বন্ধ হলে আমাদের সকলের জন্য মঙ্গল ও উন্নতি হবে তা বন্ধ হওয়া দরকার। দ্রæতই বন্ধ হওয়া জরুরী। কেননা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নৈতিকতা দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। কিছুতেই যেন তা রোধ করা যাচ্ছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে আমাদের সন্তানদের দিকে তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং, অশ্লীল নৃত্য ও ডিজে পার্টি বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের’ শিরোনামে সংবাদটি অত্যন্ত উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। এটাকে আমরা সময়ের উপযোগী ও উপযুক্ত সিদ্ধান্তই বলে সুশীল সমাজ সাধুবাদ জানাচ্ছে।

আমরা জানি, পরিবার হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে নির্ধারিত হয় একটি শিশু কেমন মানুষিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আচার-আচারণ, বৈশিষ্ট্য, অভ্যাস সব কিছুুর প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বেড়ে ওঠে। সন্তান জন্ম হওয়ার পরপরেই অতি আদরে তাকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। শাসনের লাঠিটা সব সময় হাতেই রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন সন্তান বিপথগামী না হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে পরিবারকে। মাঝে মাধ্যেই পত্রিকার পাতায় বেশ অবাক করা সংবাদে চোখ আটকে যায়। সন্তানের হাতে পিতা অথবা মাতা খুন! অথবা তথাকথিত শিক্ষিত ছেলে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে। নয়তো পরিবারের অন্য সদস্যদের ঠকিয়ে পিতা-মাতার সব জমি নিজের নামে লেখে নিয়েছে। এমন শিরোনামে আমরা যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই ঘটনাগুলো আমাদের মনে এতটুকু দাগ জন্মায় না। অথচ একটা সময়ে আমাদের দেশে এসব ঘটনা কালে-ভদ্রে ঘটতো। এখন তো এমন ঘটনা পান্তা-ভাতের মতো। তবে আমরা মনে করি, এভাবে কোনোভাবেই আর চলতে দেয়া ঠিক হবে না।

আমাদের সকলেরই উচিত, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তোলা। সুশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা বোঝা জরুরি। এমন বাস্তবতার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যালয়ে চিন্তা করা দরকার ও এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত উপযুক্ত হয়েছে বলতেই হবে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে দেশে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে! বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাপশি আমাদের দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এতে করে আমাদের ভবিষৎ কর্নধার হারিয়ে যেতে বসেছে। তাছাড়াড় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের ছড়াছড়ি তো রয়েছেই। মাদক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। মাদক নেয়া থেকে আরম্ভ করে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে এরকমও আছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে তাদের নৈতিক স্খলন হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এমন অনৈতিক কাজের কারণে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে। এতে করে জাতির ভবিষৎ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। তাদেরকে এক্ষুণি থামাতে হবে। এসব শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমী ও গুণসম্পন্ন শিক্ষা দিয়ে এদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীকে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত।

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, ‘দেশে ৩০ দিনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‍্যাগ ডে’র নামে ডিজে পার্টি, উদ্দাম নৃত্য, বুলিং, অশ্লীলতা ও নগ্নতাসহ সব অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’ আমরা স্যালুট জানাই এমন একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে। আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আরো জেনেছি যে, ‘রিট আবেদনে র‌্যাগ ডে’র নামে অশ্লীলতা বন্ধে নির্দেশনার চাওয়ার পাশাপাশি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজে পার্টি, বুলিং অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে রুল জারির আরজি জানানো হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি র‌্যাগ ডে’র নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ও ডিজে পার্টির স্থির চিত্র ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক জীবন মান ও সুকুমার বৃত্তি সৃজনের কারিগর হওয়ার কথা সেখানে আজ সেই শিক্ষা প্রশাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তাদের উপস্থিতিতে চরম নৈতিক অবক্ষয়মূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের অজান্তে নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হচ্ছে। আবেদনে আরো বলা হয়, যেহেতু দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগ শিশু-কিশোর ও তরুণ এবং দেশের আগামী ভবিষ্যৎ, সেহেতু আমাদের আগামী প্রজন্মকে এ ধরনের অপসংস্কৃতির হাত থেকে রক্ষার জন্য র‌্যাগ ডে’র নামে অশ্লীলতা, ডিজে পার্টি ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়মূলক এসব কার্যক্রম সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ করা প্রয়োজন।’

সুতরাং আমরা এখন অপেক্ষা করতেই পারি যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সুদিন ফিরে আসবে ও আমরা সরাসারি দেখতে পারবো। আর আমরা সুশিক্ষিত নাগরিক পাবো বলে প্রত্যাশা করছি।