দোহারে ফের জমে উঠেছে অবৈধ চায়না জাল প্রস্তুত কারখানা

মাকসুমুল মুকিম, দোহার নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :

ঢাকার দোহারে বর্ষা মৌসুম কে সামনে রেখে ফের জমে উঠেছে অবৈধ নিষিদ্ধ চায়না জাল কারখানা গুলো। উল্লেখ্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ চায়না জাল কারখানা বন্ধ ঘোষনার পর ও অবৈধ জাল উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। এতে স্থানীয় মহলে মাঝে সৃষ্টি হয়েছে নানান গুঞ্জন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জয়পাড়া বাজারে হাজেরা ম্যাশন মার্কেটের ২য় তালায় অবস্থিত কারখানা এখানে জনবল ২০ থেকে ২৫ জন কাজ করছে। আর একটু এগিয়ে অবকাশ সিনেমা হলের পেছনে গিয়ে দেখা মেলে প্রায় শতাধিক পুরুষ ও নারী অবৈধ চায়না জাল উৎপাদন করছে। এছাড়াও জয়পাড়া লটাখোলায় চায়না জালের কারখানায় অভিযান চালালেও সেটাও আবার চলছে পুরোদমে। এই উৎপাদিত জাল দোহারের বিভিন্ন স্থানে পৌছানোর কাজে বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছেন মালিক পক্ষ ও পুরুষেরা। এ সব জালের কাঁচামাল লোক চোক্ষুর আড়াল করে কারখানায় আনা হয় গভীর রাতে। এই কারখানা গুলো বাহির থেকে তালা বদ্ধ করে ভিতরে লোক দিয়ে কাজ করানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কারখানার মালিক গুলো সব জায়গা ম্যানেজ করেই তাদের এই অবৈধ চায়না জালের কারখানা চালাচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে অধিক লাভ বান হওয়ার জন্য গত কয়েক মাস যাবত দোহারের বিভিন্ন স্থানে এই অবৈধ চায়না জাল উৎপাদন কাজ শুরু করা হয়েছে। আর এসব কারণে নিধন হচ্ছে দেশীয় ছোট প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।

মাহমুদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আলমাস বলেন, আমরা আগে বাজারে গেলে ৫০ টাকার গুরা মাছ কিনলে এক দিন বা দুই দিন খেতে পারতাম। কিন্তু এখন এই চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারনে মাছ শূন্য হয়ে পরছে আর এ কারনেই এখন সেই ৫০ টাকার গুড়া মাছ ২০০ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হচ্ছে। এই চায়না জাল যদি ধ্বংস না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে চকের দেশীও মাছ খাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অবৈধ চায়না জাল উৎপাদনরত ফ্যাক্টরির চলে কিভাবে? চায়না জাল উৎপাদন ও বিক্রি সরকারি ভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এ কাজে যারা জড়িত তারা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন। অপরদিকে এ অবৈধ চায়না জাল উৎপাদনকারী মালিকদের পেছনে যারা মদদ যোগাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি এবং আমরা খুব দ্রুত কারখানাগুলো বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

তারা আরো বলেন, এই কারখানা গুলোর মালিকেরা রাষ্ট্রের বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে এই চায়না জাল তৈরী করে বাজারে বিক্রি করছে। এগুলো এখানে প্রস্তুত করে আবার বিভিন্ন চায়না মোড়কে তা বাজারজাত করতেছে তারা।

এ বিষয়ে জয়পাড়া বাজারে হাজেরা ম্যাশনের ২য় তালায় কারখানা মালিকে খোঁজ করলে তাকে না পেয়ে মেনেজার ঈশ্বর কুমারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা লোন নিয়ে এই কারখানা তৈরি করেছি। আমরা তো ছোট পরিসরে কারখানা তৈরি করেছি। অন্যরা বড় ধরনের কারখানা তৈরি করছে সেটায় তো কোন দোষ নাই?

গতবছর তো আপনাদের এই কারখানায় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় তো এখন কেন আবার চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সবাই সমিতির মাধ্যমে এই চায়না জাল তৈরী করতেছি। আমাদের সব সুবিধা অসুবিধা সমিতির লোকেরাই দেখে।

জয়পাড়া অবকাশ হলের পিছনের নিলু শেখের কারখানার মেনেজারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা অল্প কিছু দিন ধরে এই কারখানা দিয়েছি। আমরা অনেক টাকা রিন করে এই কারখানা দিয়েছি। আমরা যে জাল তৈরী করতেছি সেটা বৈধ কারন একটা ফাঁকা আগেরটার থেকে বেশি যার ফলে মাছের ডিম আঁটকে না শুধু মাছই আটকে। আপনাদের এই চায়না জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয় কিছু জানেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আমরা সমিতির অধিনে আছি যা দেখার তারাই দেখে।

ঐ কারখানা শ্রমিক ইউনুস (৫৮) বলেন, চায়না থেকে জালের মাল সরকারকে টাকা দিয়েই দেশে আসে আগে সেখান থেকে বন্ধ করেন তাহলে আর এইখানে এই জালের মাল আসবে না। অবৈধ কিছু কি আপনারা বন্ধ করতে পেরেছেন?

আপনি এখানে কত দিন ধরে কাজ করতেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরের তিনি বলেন আমি গত মাসে কয়েকদিন কাজ করেছি আর এ মাসে কয়েকদিন কাজ করতেছি।

এবিষয়ে দোহার উপজেলা সেই সমিতির সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন মাঝির সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, না আমাদের কোন কমিটি নাই আর আমি এবিষয়ে কিছু জানি না। আপনিই নাকি এই জালের বিষয় দেখিতেছেন জালের কারখানায় থেকে বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে বলেছে সে ভুল বলেছে। তাহলে আপনি তো জয়পাড়া বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেক্ষেত্রে এই অবৈধ জাল কি ভাবে জয়পাড়া বাজারে উৎপন্ন হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান অভিযান তো আর আমরা করি না করে প্রশাসন তাই সেটি দেখার দায়িত্ব প্রসাশনের আমাদের না।

এ প্রসঙ্গে দোহার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, চায়না জাল যেহেতু সরকার অবৈধ ঘোষণা করেছে সে জন্য আমরা সব সময় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেখানে যেখানে চায়না জাল উৎপন্ন হচ্ছে সেই স্থান গুলো তথ্যদেন আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। উপরের মহল মেনেজ করেই তারা এই চায়না জাল উৎপন্ন করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এবিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম বলেন, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। জয়পাড়ায় বিভিন্ন স্থানে এখনো চায়না জাল উৎপন্ন হচ্ছে সেই স্থানে কেনো অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমরা মৎস্য বিভাগের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।