সুখেন দাশ যে আসলে মানুষ

যুবক অনার্য :

সুখেন দাশ, বন্ধু আমার, কতোদিন দেখি না তোকে
তুই, সেই যে গেলি অভিমান নিয়ে দূরে – সাড়াশব্দ
নেই তারপর।
তুই চেয়েছিলি লিখতে কবিতা গাইতে গান
এবং লিখেছিলি।
দুই একজন শিল্পী করলো প্রতারণা তোর সঙ্গে,
তুই সহজ সরল চিরদিন। একজন কবি
যাকে নিয়ে তুই লিখেছিলি আস্ত একখানা বই;
কিন্তু সেবার সেই কবি মিথ্যে অজুহাতে
তোর কাছে বিশাল একটা অ্যামাউন্ট নিয়ে
পালিয়ে গেলো। তোর স্বভাব সুলভ আচরনহেতু
বোল্লি না কিছুই, শুধু বোলেছিলি –
‘উনি আমার সঙ্গে এমনটা না করলেও পারতেন।’
আসলে তুই অভ্যস্ত ছিলি ঠ’কে যাওয়াতেই।
অদ্ভূত হলো ঠ’কে যাওয়াকে তুই
কখনোই মনে করিস নি ঠ’কে যাওয়া
যেনো বা তোর হারাবার কিছু নেই!

তৃষিতা তোকে কিক দিয়ে চলে গেলো
তুই একটি বারও করলি না অভিযোগ ;
বোল্লি – তুই নাকি তৃষিতার যোগ্য নোস!
পৃথিবীতে সুখেন দাশদের সংখ্যা খুব বেশি নেই
তুই সনাতন ধর্মের বোলে
বইমেলায় তোর প্রথম বইটি
কতিপয় ধর্মান্ধ প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলেছিলো!
তুই কেবল তাকিয়ে দেখছিলি
আর ওদের অভিজ্ঞ মুর্খতায়
হো হো হাসছিলি- এই হলো তুই।

সুখেন,শুধু একটি ইস্যুতেই তোর
আফসোস দেখতে পেতাম – তুই
লিখতে চেয়েছিলি আবুল হাসানের মতো ;
হয় নি ব’লে লেখাটাই ছেড়ে দিলি
গানটানও উবে গেলো।

তারপর একদিন সেই যে গেলি
আর তো এলি না নতুন মানচিত্রের মতো ফিরে।
প্রিয়তম সুখেন আমার,
এই দেশে অসংখ্য কবি আছে কন্ঠশিল্পী গীতিকার, আছে আরও কতোশতো প্রতিভার
” মাটিতে পা পড়ে না ” রকমের অহমবেষ্টিত
কুৎসিত কোলাহল
শুধু একজন সুখেন দাশ
এ দেশে খুব বেশি বিরল।

রাজা আসে রাজা যায় – তাতে
পাখিদের কিছুই যায় আসে না
কিন্তু একজন সুখেন দাশ চলে গেলে
পাখিরা গাইতে ভুলে যায়,
ফুরিয়ে যায় সমগ্র জোছনা ভরা চাঁদ!

সুখেন, তোর আর হলো না তো জানা
দেখা হলো না তো : বই মেলায়
যারা তোর বইটি পুড়িয়ে ফেলেছিলো,
এখন তারাও আজিজ সুপারে গিয়ে
লুকিয়ে লুকিয়ে তোর বইটি কিনে নিয়ে যায়।

পৃথিবীর জরায়ু ধার্মিকদের জন্য প্রশস্ত খুব,
শুধু মানুষ প্রসবের বেলাতেই যেন
ডায়াগনোসিসে ধরা পড়ে- জরায়ু মুখ ক্যন্সার!
সুখেন, তুই, দুরারোগ্য ক্যান্সার মাড়িয়ে
বেরিয়ে এসেছিলি অবাধ্য স্প্লিন্টারের মতো।

আজ বড়ো মনে হয়- মানুষজন্মের জরায়ুটি
খুব নষ্ট হয়ে গেছে
তবু অপেক্ষায় গুণি প্রহর -পৃথিবী
প্রসব করবে নতুন কোনো সুখেন-
যার কাছে মানুষের বিকল্প কেবলি মানুষ,
ধার্মিক বা অন্য কিছু নয়।