শুধুই বন্ধু!

অশোক কুমার রায়:

কাউকে ভালোবাসার জন্য কোন উপলক্ষ্য লাগে না, কোন প্রস্তুতিও লাগে না হঠাৎ করেই ভালো লেগে যায়। ভালো লাগা থেকেই ভালোবাসা তৈরী হয়! সেরকম আকাশের সাথে গ্রামের প্রভাবশালী ধনী চৌধুরী পরিবারের একমাত্র কণ্যা গোধূলীর ভালো লাগা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল।

সকালের পরিবার অবশ্য চৌধুরী পরিবারের মতো অত সম্পদশালী না হলেও সম্মানী ও ঐহিত্য মন্ডিত বংশের বিশ^াস বংশের অধিকারী ।

গোধূলী গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে ঢাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য একটা বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে ঐ একই বিশ^বিদ্যালয়ে সকাল পড়া লেখা করে বটে তবে আলাদা বিভাগে। মাঝে মাঝে দেখা হয় তবে কখনও কথা হয়নি। ঐ দেখা সাক্ষাত হয়েছে কিন্তু জানা শুনা হয়নি। চোখের দেখায় কিছুটা ভালো লাগা কাজ করেছে সকালের এর বেশির সুযোগ কখনও অবশ্য তৈরী হয়নি। কিন্ত’ হঠাৎ একদিন ঢাকা হতে তাসরিফ-২ নামক লঞ্চে চেপে মনপুরা স্ব গ্রামে ফেরার পথে সকালের চোখ আটকে যায় লঞ্চের ব্যালকনিতে। এ কি এটা কি সতি না চোখের ধাঁধা। ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে খুবই সাদামাটা সুশ্রী লম্বাটে অতি আধুনিক বিশ^বিদ্যালয়ে প্রায়ই দেখা মেয়েটি! এ এখানে কি করে ভেবে নিজের অজান্তে সকাল মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে।

হ্যালো! আমি সকাল। আপনি মানে আপনাকে তো আমাদের ক্যাম্পাসে প্রায়ই দেখি। নিশ্চয় আপনার সাথে আলাপ না হলেও আপনি আমায় দেখেছেন ক্যাম্পাসে। তো লঞ্চে কেন? কোথায় যাবেন?

হাই! আমি গোধূলী। হ্যা আপনাকে ক্যাম্পাসে দেখেছি। আমি আসলে বাড়ি যাচ্ছি। বাড়ি! বাড়ি কোথায় আপনাদের। এটা তো হাতিয়াগামী লঞ্চ।

হ্যা জানিতো। আমি মনপুরা নামব। মনপুরার দক্ষিণ সাকুচিয়া আমাদের বাড়ি। তো আপনি কেন এখানে? আপনি কোথায় যাবেন?

আমিও মনপুরা যাব। মনপুরাতে আপনাদের বাড়ি। আসলে আমরা দেখছি একই গ্রামের মানুষ! আমাদের বাড়ি হলো বিশ^াস বাড়ি। আমাদের চেীধুরী বাড়ি।

বাহ্ দারুন তো! এতো দিন আমরা একই ক্যাম্পাসে কাটিয়েছি চোখা চোখি হয়েছে অথচ একই এলাকার কি একই গ্রাামের তা জানিনা। এখন কি নাটকীয় ভাবে আমাদের এই লঞ্চে পরিচয়। ভালোই হলো গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে যদি আপনার আপত্তি না থাকে। কি বলেন?

মন্দ হবে না। লঞ্চে আমার এমনি ঘুম হয়না। তাছাড়া আজ পূর্ণিমা আষাঢ়ী পূর্ণিমা, জানেন তো। চাঁদ দেখতে দেখতে আর গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।

সকাল ও গোধূলী পূর্ণিমার চাঁদের জোসনা গায়ে মাখতে মাখতে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করতে করতে সময় পার করল। গোধুলী খেয়াল করল সকালের সাথে সব বিষয়ে বেশ মিল। তাদের ভাল লাগা মন্দ লাগা গুলি প্রায়ই এক।

গোধূলী মনে মনে ভাবল বাহ্ আমাদের গ্রামেই এতো ভালো একটা ছেলে রয়েছে তা কখনও জানতো না কেন? সকাল কে জিঙ্গাসা করে আমি তো আপনাকে কখনও আমাদের গ্রামে দেখিনি কেন?

সকাল জানালো আসলে আমার বাবার চাকরীর সূত্রে আমার জন্ম বেড়ে ওঠা সবই দেশের বিভিন্ন শহরে। যে কারণে গ্রামে বেড়ান ছাড়া কখনও থাকার উদ্দেশ্যে যাওয়া হয়নি। আমার বাবার অবসরকালীণ সময় চলছে। বাবার ইচ্ছে সারা জীবন তো শহরে কাটালাম এখন শেষ সময়টা পিতৃ ভ’মিতে কাটাতে চাই। সে কারণে আমাদের পরিবারের সবাই এখন গ্রামে থাকছে যদিও ঢাকাতে আমাদের বাড়ি রয়েছে ওখানে আমার বড় ভাই ভাবীসহ আমি থাকি। যে কারণে আপনি আমাদের ইতিপূর্বে দেখেনি তবে এখন নিয়মিত গ্রামে আসব আশা করি দেখা হবে।

ঠিক আছে। আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসবেন। এই গল্পের ভিতর গোধূলীর ঢাকা ফেরার দিনটি সকাল জেনে নিল বটে কিন্তু সে কবে ফিরবে এটা সঠিক করে বলতে পারল না। কারণ সকাল পারিবারিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসেছে ওগুলো শেষ না করে ফিরতে পারবে না। দুজনে ইতিমধ্যে তাদের সেলফ নম্বর শেয়ার করেছে প্রয়োজন অপ্রয়োজনে যোগাযোগ করার ইচ্ছেয়। এভারে চাঁদের আলোয় এক মায়াময় সৌন্দর্যের মধ্যে মুখোমুখি লঞ্চের ব্যলকোনিতে রাত পার করেছে কেউ আর নিজস্ব কেবিনে যাবার প্রয়োজনটুকু বোধ করেনি। এক অপার ভাললাগা কাজ করেছে তাদের মধ্যে ।

আষাঢ়ী পূর্ণিমার চাঁদ মেঘের সাথে খেলা করছে লুকোচুরি আর মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া

ধূলীর কোমর পযর্ন্ত নেমে যাওয়া খোলা চুল উড়িয়ে নিয়ে সকালের মুখে ঝাপটি মারছে। এই খোলা চুলের বাতাসের সাথে খেলে যাওয়া উড়ো উড়ি খেলা সকালকে বেশ উদ্বেলিত করেছে মাঝে মাঝে। গোধূলীর সাধারণ অবস্থানকে যেন সকালের চোখে এক অপরুপ রুপের সৃস্টি করেছে। হালকা চিবুক, মুখের গড়ন যেন কারুকার্য করা, চোখ যেন সাগরের গভীরতায় পূর্ণ, ঠোঁট যেন রক্ত কোমলের ন্যায় সুশোভিত। শরীরের কোথায়ও কোন গহণা নেই তবুও কি অপরুপা লাগছে। সকাল স্বপ্নের মধ্যে যেন বাস করছে এর মধ্যে কেবিন বয় জানালে মনপুরার নিকটবর্তী চলে এসেছে লঞ্চ, সবাই তৈরী হন। গোধূলী ও সকালের যেন স্বপ্ন ভঙ্গ হলো মনে হলো আজ খুবই দ্রæত লঞ্চ মনপুরায় এলো। দুজনে নেমে এলো লঞ্চ হতে সকাল গোধুলীকে তার ব্যাগ ও ব্যাগেজ নামাতে সাহায্য করল। বাড়ি হতে ছোট চাচা রিক্সা এনেছে গোধূলীর জন্য তাতে চেপে গোধূলীর লঞ্চঘাট হতে প্রস্থান আর সকাল একটি মোটর বাইকে দ্রæত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। গত রাতটি যেন দুজনের স্মৃতির পাতায় অক্ষয় হয়ে পিছনে পড়ে রইল আগামী দিনের একটা নববার্তা দিয়ে।
গত রাতে তো দুজনের কারো তো ঘুম হয়নি স্বাভাবিক ভাবে দিনে গোধূলী ও সকাল ঘুমের মধ্যে কাটাল দুপুর পযর্ন্ত। দুপুরে গোধূলীর কাকিমার ডাকে ঘুম ভাঙল। ¯œান সেরে খেয়ে দেয়ে গোধূলী সকালের ভাবনায় পড়ে গিয়ে মোবাইলের দিকে তাকাল কোন ফোন এসেছে কিনা কারণ সারা বেলা যে কম্ভু কর্ণের ঘুম ঘুমিয়েছে তা

 করে কেউ ফোন করলে সেটা শোনার কথা নয়। এছাড়া সকালকে একটা ফোন করা উচিৎ কারণ গত দিনের জার্নিতে বেশ টেক কেয়ার করেছে যার জন্য একটা স্বরণীয় জার্নি হয়ে রইল তার জীবনে। তাছাড়া ফোন নম্বর নিয়েছে যেহেতু সৌজন্যতা বলে একটা কথাতো রয়েছে শহরের ছেলে কি না কি ভাবে এটা ভেবেই ফোন করার জন্য গোধূলী উদ্বত হলেও কেন যেন হঠাৎই অজানা লজ্জা তার কারুকার্য খচিত ফর্সা মুখটি লালবর্ণ ধারণ করে উঠল এবং ফোন করা হতে বিরত থাকল বটে কিন্তু মনটা উসখুস করতে লাগল।

অন্যদিকে সকাল সারাদিনই ঘুমিয়ে কাটিয়েছে কারণ মাকে আগেই বলেছে সে না ওঠা পযর্ন্ত যেন তাকে ডাকা না হয় কারণ সে ঘুমাতে চায়। কেউ আর ডাকেনি বটে তবে অধিক বেলা পযর্ন্ত ঘুমিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে চাচাত ভাইয়ের সাথে বিকালে স্থানীয় বাজারে বেড়াতে যায় এখানে তার কোন বন্ধু নেই কাকাত ভাইয়েরা ছাড়া। সারা বিকালটা গ্রামের রাস্তায় ও বাজারে ঘুরে বাড়িতে এলো। গ্রামের রাতের খাওয়া দাওয়া নয়টার মধ্যেই সাধারণত শেষ হলেও সকাল দশটায় খেয়ে নিজ রুমে এল বটে কিন্তু হঠাৎই গোধূলীর কথা মনে এলো এবং ফোনটা হাতে নিতেই দেখে বেশ রাত হয়েছে এখন ফোন করা সঙ্গত নয় ভেবে কিছুটা নিজের উপর বিরক্ত হলো। আহারে বেচারি আমায় কি ভাবছে একটু খোঁজ নেওয়া হলো না সারাদিন নিশ্চয় অভদ্র ভেবে বসে আছে। আবার এতো রাতে গ্রামের বাড়ি ফোন করা নিশ্চয় শোভনীয় নয় এটা ভেবে ফোনের দিকে চেয়ে ফোন রেখে জানালা দিয়ে চাঁদ আর মেঘের খেলা দেখে মনের মধ্যে গোধুলীর কথা ধারন করে।

গোধূলীর রাতে যেন এক অস্থিরতা মনের মধ্যে কাজ করছে আবার কারো অপেক্ষায় যেন প্রহর গুনছে প্রেম বিরহিনী মতো এক মাদকতা কাজ করছে নিজের মধ্যে যেকারণে বেশ বেশামাল ভাব লক্ষ করল তার কাকাত বোন মেঘা। গোধূলীর সাথে মেঘা ছোট সময় হতে একই রুম শেয়ার করে।মেঘা গোধুলীর একমাত্র বোন বন্ধু সবই। একে অন্যে অন্ত প্রাণ। মেঘা যেকারণে বুঝতে পারছে গোধূলী নিশ্চয় কোন ঝামেলায় আছে। সে জানতে চায় কি হয়েছে গোধূলী? তোর ঘটনা কি এতো উসখুশ কিসের? গোধূলী গতরাতে সকালের সাথে পরিচয়ের সব ঘটনা চেপে যেতে গিয়ে না পেরে সবটা খুলে বলে এবং একটা ফোন না করার জন্য নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে বলে জানায়।

মেঘা বলে হ্যা আমিতো ওদের চিনি ওর এক কাকাত ভাই আমার সাথে পড়ে। শুনেছি সকাল দাদা অনেক ভাল ছাত্র । তার বাবা সরকারি বড়কর্মকর্তা ছিলেন। ওনার কাকারা তো আমাদের বাড়ি নিয়মিত আসেন। তো! এতে উসখুশ করার কি আছে ফোন কর। এতো রাতে পাগল!

বাহ্ ফোনও করবে না আবার অন্তর জ¦ালায় মরবা না তাতো হয়না। ফোন কর রাত বেশি হয়নি আর এত সে খুশিই হবে। সাহস যোগায় মেঘা। বেশ তাহলে ফোন দেই বলে গোধূলী ডায়াল করতেই ওপাশ হতে ওত পেতে থাকা শিকারীর মতো দ্রুত ফোনটা পিক হয়। হ্যালো!

হাই! আরে মহাশয় সারা দিন যে গেল একটা ফোন দিলেন না। কেমন আছেন কি করছেন? তাছাড়া আমি বাড়িতে ভালোভাবে পৌছেছি কিনা? এতোটুকু সৌজন্যতা কি প্রাপ্য ছিলনা আমার?

সকাল কি বলবে ভেবেই পাচ্ছিল না। আসলে আপনি কি ভাববেন এটা ভেবেই ফোন দেইনি। তাছাড়া আমি দিনে বেশ ঘুমিয়েছি এবং বিকালে কাকাত ভাইয়ের সাথে বেড়াতে গিয়ে এইমাত্র এসে দেখি অনেক রাত হয়েছে। যেকারণে ফোন দেওয়া হয়নি। দুঃখিত! তবে আপনাকে ভেবেছি।

হয়েছে, হয়েছে ব্যাস! ফোন করলে আমি যদি কিছু ভাবব তবে নম্বরটা নিলেন কেন? আর আমি যদি ভাবতামই তাহলে কি ফোন নম্বর আপনাকে দিই? তাতো ঠিকই। তা ভুল করে ফেলেছি । ক্ষমা করেন! এবার বলেন কেমন আছেন? আছি তো ভালোই। তবে কেন যেন আজ মনটা বড় অস্থির লাগছে জানেন। তাই, বলেন কি? অস্থিরতাতো আমার মধ্যেও আজ ঢুকেছে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না। তাহলে আর কি এবার ঘুমান। অস্থিরতা কেটে যাবে।

তাতো ঘুমালাম। আপনি কি আগামী কাল ফিরি আছেন? যদি থাকেন আমরা কাল বিকালে দখিনা হাওয়া বীচে দেখা করতে পারি।
তা মন্দ বলেননি। অনেকদিন বীচে যাওয়া হয়না। ঠিক আছে বিকাল চারটায় দেখা হবে। বাই!
ব্ইা! ভালো থাকবেন।

পরদিন যেন দুজনের কারোরই সময় কাটছে না। দুপুরের খাওয়ার পর হতে গোধূলী মোবাইলে চোখ রাখছে বার বার কখন চারটা বাজবে! প্রতিটি মিনিট যেন ঘন্টা মনে হয়ে উঠছে।

অন্যদিকে সকাল তো আরেক কাঠি সরেষ তার কাছে প্রতিট্ িসেকেন্ড ঘন্টা মনে করে গোধূলীকে ফোন করতে গিয়ে নিজেকে সংবরন করেছে লজ্জায়। অতপর কাকাত ভাইকে নিয়ে তিনটায়ই দখিনা হাওয়া বীচের কাছের টং দোকানে গিয়ে হাজির হয়ে গোধূলীর অপেক্ষায় বসে রইল।

কিছুক্ষণ পর গোধূলী চারটা বাজার অপেক্ষা না করে মেঘাকে সাথে নিয়ে বীচে এসে হাজির হলো বটে আর মনে মনে নিজেকে লজ্জাহীনা বলে গালি দিল। সকাল গোধূলীকে দেখে সী বীচে দ্রæততার সাথে নেমে গেল এবং লজ্জিত ভঙ্গিতে কাছে গিয়ে সুধাল কেমন আছেন?

ভাল আছি।দুজনেই যে নিদ্ধারিত সময়ের পূর্বে এসেছে কেন তার ব্যাখা দিতে গিয়ে গোধূলী লজ্জিত ভঙ্গিতে জানালে, ও আমার কাকাত বোন মেঘা স্থানীয় কলেজে গ্রাজুয়েশন করছে। পাশেই ওর বান্ধবীর বাসা ওখানে একটা কাজের জন্য এসেছিল যা দ্রæত শেষ হওয়ায় এখানে দ্রুত আসা।

সকাল জানাল, ও এসেছে এখানে কাকাত ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিতে তো আপনাদের দেখে চলে এলাম যদিও চারটা বাজতে বেশ একটু বাকী।

মেঘা বলল ভালোই হয়েছে দ্রæত এসেছেন বেশি সময় গল্প করা যাবে কিরে গোধূলী, ঠিক না। আপনারা গল্প করেন আমি একটু ও দিকটা ঘুরে আসি। এই বলে ওদের আপত্তি সাত্বেও মেঘা দূরে চলে গেল। সকাল গোধূলীকে বলে কেমন কাটছে আপনার?

আমার তো গ্রাম আমার ভালোই কাটে। এ প্রকৃতির মধ্যেই তো আমার আজন্ম বাস, এ সবই আমার প্রাণশক্তি,ছোট হতে এ পযর্ন্ত বড় হয়েছি এ প্রকৃতি ভালোবেসে। ভালো না লাগার প্রশ্নই আসেনা। আপনার কেমন লাগছে সেটা বলেন? আপনি শহরের বাবু মহাশয়!

সকাল এবার বলল, আমার মনে হয় খুব অল্প সময়ে আমরা যে মনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি সেটা কিন্তু আমাদের আলোচনায় প্রকাশ পাচ্ছে না। মানে!আমরা মনে হয় নিজেদের বেশ দূরত্ব রেখে কথা বলছি।
সেটা কেমন বলেন তো?

এই যে, আপনি আপনি করে আমরা কথা বলছি। তুমি করে বললে মনে হয় আমাদের আলাপটা বেশ সহজ হতো। আচ্ছা আপনাকে তুমি বলার অনুমতি দেওয়া গেল। সে নয় আমার অনুমতি পেলাম। এখন তুমি কি করবে? আপনি কি আমায় অনুমতি দিয়েছেন কি?

আমিতো প্রস্তাব রেখেছি মানে অনুমতি প্রার্থনার পূবেই তো তোমাকে তুমি বলার অধিকার দিয়েছি। আচ্ছা ঠিক আছে এবার তুমি বলো, তোমার গ্রাম কেমন লাগছে? তুমিতো ইতিমধ্যে জেনেছো আমি ছোট হতেই শহরে বড় হয়েছি শহরে থাকি। ঐ যান্ত্রিক শহরের ইট পাথর থেকে নিজেকে বড় যান্ত্রিক মনে হয় তাইতো এই প্রকৃতির টানে মাঝে মাঝে ফিরে আসি রিফ্রেসার্স হতে। তবে এখানে থাকার জন্য বড় কস্টকর কারণ আধুনিক পৃথিবীতে জীবন ও জীবিকার কথা চিন্তা করলে আমার শহরই বড় প্রয়োজন মনে হয় তবে, গ্রামের সহজ ও সরলতা আমায় মুগ্ধ করে। সেজন্য প্রকৃতির উদারতাকে বড় শ্রদ্ধা করি বলে বার বার ছুটে আসি এ গ্রামের মাটিতে।

তাহলে তো তোমার সাথে আমার বেশ কিছু জায়গায় বেশ মিল রয়েছে। হ্যা আমরা দুজনেই প্রকৃতি প্রেমিক! ওরা দুজনে বালিয়াড়িতে কিছু সময় প্রবল জোয়ারে ভেসে আসা জলে পা ডুবিয়ে পাশাপাশি হাটাহাটি করল। প্রকৃতির ,মেঘনার প্রবল জোয়ারের ছবি ও একে অপরের ছবি তুলে দিল বটে কিন্তু একসাথে ছবি তুলল না।

ইতিমধ্যে মেঘা এসে বলল আপু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আজকে চলো। দুজনে বিদায় নিয়ে গোধূলী বাড়ির পথে আর সকাল গ্রামে কোন বন্ধু নাথাকায় কাকাত ভাইয়ের সাথে নিকটবর্তী পথে এলো মেলো কিছু সময় কাটিয়ে বাড়ি এলো বটে কিন্তু মনটা যেন কেমন উসখুশ করতে লাগল, মন যেন আর নিজের কাছে নেই।

রাতের খাবার গ্রামে একটু আগেই সবাই সেরে ফেলে সে সুবাদে সকালও দ্রæত রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে চলে এলো। জানালার ধারে বসে বাইরে চাঁদের সাথে মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখছে আর গোধূলীর গ্রামকে ভালোবাসার মতো একটা ছোট বিষয়কে খুবই গৌরব ও আশ্চার্য বিষয় মনে করছে। গোধূলীর সব কিছুতেই যেন একটা সৌন্দর্য ওর ভাবনায় চলে এসেছে। আর অতি অল্প সময়ে কত আপন মনে হতে লাগল ওর।

ওদিকে গোধূলী বিছানায় শুয়ে শুয়ে সকালের বাস্তবতার নিরীখে সকালের গ্রামের প্রকৃতিকে ভালোবাসা ও শহরের প্রয়োজন বোধকে ব্যাখ্যা করাকে একদম বাস্তব মানুষ হিসাবে মনে হয়েছে। আবেগে আবেশে এটা কি প্রেমের সূত্র কিনা এটা ভাবতেই হঠাৎই ফোন কল! হ্যালো! কি করছো গোধূলী? না । কিছু না। কেন ঘুম নেই? না, ঘুমাব । তবে, একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি। কি ভাবছো? সতি বলতে কি তোমার কথাই ভাবছিলাম।

ও আমিও তাই ! বাইরে চাঁদের আলোতে তোমার প্রকৃতিকে ভালোবাসার কথা চিন্তা করেই তোমাকে ভাবছি এবং কথা বলার লোভ সামলাতে না পেরে ফোন দিলাম। বিরক্ত হওনি তো? না। তোমার ফোন পেয়ে আমার ভালোই লাগছে। তোমার প্রতি আমার একটা টান অনুভব করছিলাম। তাহলে তো আমরা একে অপরকে অনুভব করছি। মানে আমরা বন্ধুত্বের পথে হাটছি! জি জনাব, সে রকমই!

তাহলে তো আমরা একে অপরের বন্ধু হলাম। হ্যা। তাতো হলামইm তো। এই বন্ধুত্বে কি আমাদের মন ভরবে? দেখা যাক আপাতত শুধু বন্ধুই থাকি তাহলে আমরা দুজন শুধু বন্ধুই হলাম! এভাবে সকাল ও গোধূলীর মধ্যে একটা নিবীড় বন্ধুত্ব দ্রæত গড়ে উঠল।