পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাঃ)

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার।আর এজন্যই আমরা তার প্রশংসা করি।তার নিকট সহায্য, ক্ষমা,প্রার্থনা এবং সর্বদা তারই উপর ভরসা রাখি।আমরা মহান প্রভুর নিকট আশ্রয় কামনা করছি।আমাদের নফসের অন্যায় আচরণ এবং খারাপ আমলের অনিষ্ট হতে।বস্তুতঃ মহান আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারেনা।

আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন পৃথবীতে এমন কেউ নেই যে তাকে হেদায়েত করবে।সুতরাং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কোন উপস্য নেই,তিনি একক এবং তার কোন শরিক নেই।আমরা আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-আল্লাহর বান্দা এবং প্রিয় রাসূল। মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে সুসংবাদদাতা ভীতি প্রদর্শক,আল্লাহ তায়ালার প্রতি আহবানকারী ও আলোদানকারী প্রদীপ রুপে সত্য ইসলামসহ প্রেরণ করেছেন।

হে মুসলিম ভাইয়েরা!আপনারা বেশি বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করুন এবং তার বন্ধু রাসূল (সাঃ)-এর উপর অনবরত দরূদ পাঠ করুন।সেই সাথে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসুন।
এমনকি স্বীয় জীবন থেকেও অত্যধিক মহব্বত করুন। যারফলে আপনারা সফলকামী হবেন।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
নবী মুমিনদের নিকট তাদের জীবনের চেয়েও প্রিয়।
মুমিনগণ জেনে রাখুন,মহান আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসূলগণের থেকে দৃঢ় অঙ্গিকার গ্রহন করেছেন যে,
তাদের জীবদ্দশায় যদি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-আগমন করেন,তবে তারা অবশ্যই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন এবং তিনি নবীগণকে আদেশ দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ উম্মতদেরকে রাসূল (সাঃ)-এর আগমনের সুসংবাদ দিবেন এমনকি এ সকল নবীদের সর্বশেষ ব্যক্তি হযরত ঈসা (আঃ)।

বনী ইসরাঈলদেরকে এসংবাদ দিয়েছিলেন যে, শেষ নবী তার পরক্ষণেই আসবে। যেমনিভাবে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ-স্মরণ করুন!

যখন মরিয়ম তনয় ঈসা (আঃ) বললেন,হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা। যিনি আমার পরে আগমন করবেন তার নাম আহমদ। অতঃপর যখন তিনি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করলেন,তখন তারা বললোঃ-এটা তো এক প্রকাশ্যে জাদু।
(সূরা ছফ-৬)।

হাদীস শরীফে হযরত ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি প্রিয়নবী (সাঃ)হতে বর্ণনা করেন,রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি তখনও খাতামুন-নাবিয়্যিন বা শেষ নবী রুপে লিপিবদ্ধ ছিলাম।যখন হযরত আদম (আঃ)ছিলেন মাটির খামিরায়।আমি তোমাদেরকে আরও বলছি যে আমার নবুয়তের প্রথম প্রকাশ হলো হযরত ইব্রাহিম (আঃ)এর দোয়া।
এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর ভবিষ্যৎবাণী আর আমার মায়ের প্রত্যক্ষ স্বপ্ন যা তিনি আমাকে প্রসবকালে দেখেছিলেন যে তার সামনে একটি আলো উদ্ভাসিত হচ্ছে,যার আলোতে তিনি সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত দেখতে পান। (শরহে সুন্নাহ)।

হযরত আব্বাস (রাঃ)-হতে বর্ণিতঃ-তিনি কাফেরদের মূখে রাসূল (সাঃ)-এর বিরোদ্ধে তিরস্কার মূলক কিছু কথা শুনলেন,তিনি রাগান্বিত হয়ে রাসূল (সাঃ)-এর কাছে ছুটে এসে ঐ তিরস্কার সম্পর্কে বললেন।
এটা শুনে রাসূল (সাঃ) মিম্বরে দাড়িয়ে বলেন, তোমরা বলো দেখি আমি কে???
সাহাবীরা উত্তর দিলেনঃ-আপনি তো আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।
তিনি বললেন আমি হলাম আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুক্তালিবের পুত্র মুহাম্মাদ।

আল্লাহতালা যে সমস্ত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন (জ্বীন ও ইনসান)-এর মধ্যে আমাকে সর্বোত্তম শ্রেণীতে সৃজন করেছেন।
সেই মানুষ শ্রেণী আবার দুই ধরনের (আরব ও আজম)।
আমাকে তার উত্তম দলে আরবদের মাঝে সৃষ্টি করেছেন।
আবার সেই দলকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করেছেন।
তাদের মধ্যে আমাকে উত্তম উত্তম গোত্র কুরাইশ বংশে সৃষ্টি করেছেন।

আবার তাদের সেই গোত্রও বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন,তন্মধ্যে উত্তম পরিবার (হাশেমী পরিবারে) আমাকে সৃষ্টি করেছেন।সুতরাং ব্যক্তি ও পরিবার হিসেবে আমি সর্বোত্তম।
(তীরমিযী)

উল্লেখিত দুটি হাদিস হতে জানা গেল যে প্রিয় নবী (সাঃ) নিজেই নিজের জন্ম ও বংশ পরিচয় তুলে ধরেছেন।
সুতরাং আমাদের জন্য তার জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনায় বাধা কোথায়???
এতদ্বসত্ত্বেও প্রিয় নবী (সাঃ)-এর জন্মে খুশি হওয়া ও আনন্দ প্রকাশ করা উত্তম কাজ।
অধিকন্তু ইহা মহান আল্লাহর নিকট উত্তম মর্যাদা লাভের উপায়ও বটে।

মহান আল্লাহ বলেন বলেনঃ-বলুন
আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানীতে।
সুতরাং, এর প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা তারা সঞ্চয় করেছে।
(সূরা ইউনুছ-৫৮)।

প্রিয় ভাইগন জেনে রাখুন!
নিশ্চয় প্রিয় নবী (সাঃ)যে দিনটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন ওই দিনটি আমাদের ও সকল মাখলুকাতের জন্য মহান ও বরকতময় দিন।
সে কারনে,এ মহান দিবসে নেক আমলের মাধ্যমে তথা রোজা পালন,দান-সদকা,জিকির ইত্যাদির মাধ্যমে সম্মান করা উচিত।
যেহেতু মহানবী (সাঃ)-নিজেও তার জন্মের নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের জন্য সোমবার রোজা রেখেছিলেন।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানা গেল যে মহান দিনে (১২ রবিউল আউয়াল)প্রিয়নবী (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন ঐ দিনকে তাজিম করা শরীয়ত সম্মত ব্যাপার।
যা প্রিয়নবী (সাঃ)এর আমল দ্বারাই প্রমাণিত হল।সুতরাং আমাদের উচিত যে দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) প্রিয়নবী (সাঃ)-কে বিশ্বে প্রেরণ করে আমাদের সকল সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহ তাঁর সীমাহীন নেয়ামত দান করেছেন।সে দিবসটিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ও শ্রদ্ধা করা।

মো. রফিকুল ইসলাম, শিক্ষার্থীঃ-ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।