ওমর খৈয়াম বিশ্বসভ্যতায় ক্ষণজন্মা একজন মহাপুরুষ

ওমর খৈয়াম বর্তমানে জগদ্বিখ্যাত কিংবদন্তী ৷ তিনি তার বিজ্ঞানের খোলস ছেড়ে কবে দার্শনিকতার স্তরে উপনীত হয়েছেন আর সীমাহীন প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় রচনা করেছেন অমৃতসূধাস্বরূপ রুবাইয়াৎ যার অস্তিত্বে এখনো পন্ডিতগণ একমত হননি ৷ তার দর্শন উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে কালান্তরে;তার লক্ষণ মেলে আল্লামা ইকবালের পঙ্কতি ও তার ‘আসরারে খুদী’তে ৷ যেমনঃ

এক তু হ্যায় কে হক হ্যায় ইস জাহাঁ মেঁ
বাকী হ্যায় নমুদ সিমিয়াই ৷
(এ দুনিয়ায়, হে মানুষ তুমিই একমাত্র সত্য,বাকী সবই মরীচিকা ৷)

গিয়াসউদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম নামটি যেমন বড়, ঠিক তেমনি এ নামের মানুষটি অনেক বড় বড় কাজ করে গেছেন। হ্যাঁ, ওমর খৈয়ামের কথাই বলা হচ্ছে। ইসলামি স্বর্ণযুগের অসাধারণ এ প্রতিভা সম্পর্কে গুগল সার্চে বলা হচ্ছে-Omar Khayyam was a Persian astronomer, writer, poet and mathematician.Omar Khayyam documented the most accurate year length ever calculated. He made outstanding contribution on algebra. ১৮৫৯ সালে ফিটজেরাল্ড কর্তৃক অনূদিত ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পাশ্চাত্যের লোকরা তার কবিত্ব বা সাহিত্য প্রতিভা সম্পর্কে জানতেন না।

যারা মহাশূন্য, গণিতশাস্ত্র ও দর্শন নিয়ে কাজ করতেন, তার পরিচিতি শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে রুবাইয়াতের অনুবাদ তার অন্যান্য পরিচয়কে ছাপিয়ে কবি পরিচয়টিকে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়। প্রশ্ন জাগতেই পারে, রুবাই কী? রুবাই হলো চার লাইনের কবিতা এবং এর বহুবচন হলো রুবাইয়াৎ। তিনি এক হাজারের বেশি রুবাই লিখে গেছেন। তার পুরো সংকলনটিই হলো রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম। এতে আবেগ, উচ্ছ্বাস-ভালোবাসা, দর্শন, জীবন ও জগতের উদ্দেশ্যও গন্তব্য সম্পর্কে বলা হযেছে। তার লেখায় উপমা, তুলনা ও রূপকের ব্যাপক ব্যবহার আছে। অবশ্য ইসলামি স্বর্ণযুগের প্রায় সব কবি-সাহিত্যিকের লেখায় এ ধারা লক্ষ করা গেছে।

পৃথিবীর অনেক ভাষায় রুবাইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। তার কবিতায় প্রেম, প্রিয়া, শরাব এসেছে বারবার। তাইতো খৈয়াম বলছেন, (কবি নজরুল অনূদিত) ‘এক সোরাহি সুরা দিও একটু রুটির ছিলকে আর, প্রিয়া সাকি তাহার সঙ্গে একখানি বই কবিতার। জীর্ণ আমার জীবনজুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সঙ্গে, এই যদি পাই, চাইব নাকো তখ্ত আমি শাহানশার’। নজরুল ইসলাম প্রায় দু’শ রুবাই বাংলায় অনুবাদ করেন যার সবই সরাসরি ফারসি থেকে। রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম ইংরেজি সাহিত্যানুরাগীদের মননে দারুণভাবে জায়গা করে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে Encyclopedia Britannica বলছে, The Persian poet’s verses stand on its own as a classic of English literature. যেমন-(ক) এক পেয়ালা মদ, এক টুকরা রুটি এবং তুমি। (খ) নগদ যা পাওয়া হাত পেতে নাও, বাকির খাতা শূন্য থাক, দূরের বাজনা লাভ কী শুনে, মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক। (গ) ফুল ফোটে নিত্যমরার তরে। (ঘ) The moving finger writes পঙ্ক্তিগুলো পাঠক মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত এবং বিভিন্ন উপলক্ষ্য ও অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এগুলো মানুষের মনে গুনগুনিয়ে বাজতে থাকে।

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরোপের একাধিক লেখক বিচ্ছিন্নভাবে খৈয়ামের কিছু কিছু রুবাই ইংরেজি ও ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন, কিন্তু পাঠকমহলে খৈয়ামকে নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ তৈরি হয়নি। ইংরেজ কবি এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড যে কোনো কারণেই হোক ১৮৫৬ সালের আগে থেকে ফারসি ভাষাচর্চা শুরু করেন। ওই সময় তার জনৈক বন্ধু ফারসি ভাষায় লিখিত রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়ামের একটি কপি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করে তার কাছে পাঠালে তিনি এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ১১০টি রুবাইসংবলিত বইটির প্রথম সংস্করণে ২৫০টি কপি ছাপানো হয়েছিল। প্রথম দিকে তার এ অনুবাদকর্ম পাঠকমহলে কোনো সাড়াই ফেলতে পারেনি।

এমনকি বইটির দাম কমিয়েও পাঠক আকৃষ্ট করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে বইটির পরিচিতি ও কাটতি বাড়তে থাকে। খৈয়াম ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের কাছে পরিচিতি পেতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে ওই শতকের নব্বই দশকে এসে অনূদিত রুবাইয়াতের হাজার হাজার কপি হটকেকের মতো বিক্রি হতে থাকে। খৈয়ামের জনপ্রিয়তা ব্রিটেন, ইউরোপ অতিক্রম করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। সেই কোন ১৮৮৪ সালের কথা, আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ ও ৫৬টি ছবি/ড্রয়িং যুক্ত বইটি বোস্টন আর্টক্লাবে প্রদর্শিত হলে প্রতিদিন দর্শক সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রদর্শনীর ষষ্ঠ দিনে বইয়ের সব কপি নিঃশেষ হয়ে যায়।

ওমর খৈয়াম ইংরেজি ভাষাভাষী কবি, সাহিত্যকদেরও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছেন। ফিটজেরাল্ডের এ অনুবাদ টিএস ইলিয়ট, এজরা পাউন্ড, মার্ক টোয়েন, রুড ইয়ার্ড কিপলিংয়ের লেখনীতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আর এতে করে খৈয়াম তাদেরও প্রিয় কবি হয়ে উঠেন।

খৈয়াম পাশ্চাত্যের শুধু গান-বাজনা, নাটক, চলচিত্র, নৃত্য কলাকেই প্রভাবিতই করেননি, এমনকি সিগারেট, চুরুট, কলম, চকলেট, পারফিউম, টয়লেট সোপ, পোস্ট কার্ডের বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে ওমর খৈয়ামের ছবি, কবিতা, কথার ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠে, আর এসবের মাধ্যমে তিনি হয়ে যান সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কবি।

১৮৯২ সালে তার ভক্ত ও পাঠকরা লন্ডনে ওমর খৈয়াম ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এবং বছরে অন্তত দু’বার (মার্চ ও নভেম্বর) ক্লাব সদস্যরা একত্রিত হতেন। খৈয়াম উন্মাদনার ওই সময়গুলোতে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আমেরিকায়ও তার নামে ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে খৈয়াম ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্স, জামার্নি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে।

ওমর খৈয়ামের প্রতি ইউরোপ, আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের সুধীমহলে সৃষ্ট মোহ উনবিংশ শতাব্দীর শেষে শুরু হয়ে বিংশ শতাব্দী শুরুর দিকে তুঙ্গে উঠে, যা এখনো বিরাজ করছে। এই তো ১৯৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে ওমর খৈয়াম ক্লাব প্রতিষ্ঠা পায়। এসব ক্লাবে সদস্যরা খৈয়ামকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সদস্যরা বছরে অন্তত দু’বার একত্রিত হন। পাঠকরা তার জীবন, দর্শন ও কবিতা নিয়ে আলোচনা করে। এখনো খৈয়াম মোহে আচ্ছন্ন পাঠকমহল। তাইতো ২০০৯ সালে সাড়ম্বরে পালিত হলো সফল অনুবাদক, কবি এডওয়ার্ড ফিটজেরান্ডের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী এবং তার অনূদিত রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়ামের ১ম সংস্করণের দেড়শততম জন্মবার্ষিকী। খৈয়ামের রুবাইগুলো পৃথিবীর বহু দেশে, বহু বিখ্যাত লেখকরা অনুবাদক করেছেন, কিন্তু ফিটজেরাল্ডের অনুবাদই সেরা। ফারসি ভাষার বাইরের কেউ যদি রুবাইয়াত পড়তে চায়, তাহলে সবার আগে খুঁজে নেয় ফিটজেরাল্ডের অনুবাদ। তিনি ইংরেজি ভাষার নামকরা কবি ও লেখক হওয়া সত্ত্বেও তার অনুবাদক কর্ম তার সব প্রতিভাকে ছাপিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম ও এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড সমার্থক হয়ে গেছে।

রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়ামের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার কাছে ইংরেজি সাহিত্যের বড় বড় কবি, সাহিত্যিক ও গুরুত্বপূর্ণ বইপুস্তকও হার মানে। The Oxford book of Quotations-এর ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত সংস্করণে ১৮৮টিও বেশি রুবাই স্থান করে নেয়। এমনি শেকসপীয়র এবং বাইবেল থেকেও এত ব্যাপকসংখ্যক উদ্ধৃতি সেই বইয়ে জায়গা পায়নি। এ চতুষ্পদী কবিতাগুলো পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিশ্বের সাহিত্য রসিকরা এগুলোর রস্বাদনে প্রতিনিয়ত কেবল মুগ্ধই হচ্ছেন।

ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের পছন্দের The moving finger writes পঙ্ক্তিটি গুগলে ৭ কোটিরও বেশি বার সার্চ করা হয়েছে। গণঅধিকার আদায়ের কিংবদন্তি মার্টি লুথার ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম ইস্যুতে Beyond Vietnam: A Time to break silence শিরোনামে প্রদত্ত বক্তৃতায় ওমর খৈয়ামের এ কবিতাটি উদ্ধৃত করেছিলেন। এটি যেন মানুষকে সান্ত্বনা দেয়, নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার প্রেরণা জোগায়। তাই মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, মনিকা লিউনস্কিকে নিয়ে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন, মানমর্যাদা, রাষ্ট্রীয় পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তখন ১৯৯৮ সালে প্রদত্ত এক আবেগঘন বক্তৃতার শেষে তিনি এ একই কবিতা উদ্ধৃত করেছিলেন।

বিলাসবহুল টাইটানিকের সঙ্গে ওমর খৈয়ামের নামও জড়িয়ে আছে। এ জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ঘটনাতো আমরা সবাই জানি। সেই কোন ১১০ বছর আগেকার কথা। এটি তৈরির সময় এতে ভ্রমণ, মানুষের কাছে ছিল একটি অ্যাডভেঞ্চার, একটি স্বপ্ন, একটি মিশন, একটি বিস্ময়। তখন বলা হতো এ জাহাজ কখনই ডুববে না। কিন্তু গর্ব ও অহংকারের সে জাহাজ তার প্রথম যাত্রায় পানিতে ডুবে যায়। মৃত্যু হয় ১৫’শ এর বেশি যাত্রীর। অভিজাত ও বিলাসবহুল জাহাজের হতভাগ্য যাত্রীদের সঙ্গে ফিটজেরাল্ড অনূদিত ওমর খৈয়ামের একটি বইয়ের কপিও আটলান্টিকে মহাসাগরে ডুবে যায়। ১৯৮৫ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের সময়ও মহামূল্যবান সেই বইটির হদিস পাওয়া যায়নি।

ফিটজেরাল্ডের অনূদিত রুবাইয়াতের একটি কপি বাইন্ডিংয়ের জন্য ১৯০৯ সালে একটি ব্রিটিশ বুক বাইন্ডিং ফার্ম আদেশপ্রাপ্ত হয়। অজস্র মণি-মুক্তা ও পাথর খচিত এ বইটি ইতিহাসের সর্বকালের ব্যয়বহুল পুস্তকের অন্যতম। বইটি সাজাতে-গোছাতে টানা দু’বছর লাগে। এটি অলংকরণে রুবি, নীলা, টোপাজ, পান্না ইত্যাদি মহামূল্যবান জগৎবিখ্যাত পাথর ব্যবহার করা হয়। বইটির ফ্রন্ট কাভার পারস্যের ঐতিহ্য অনুসারে ময়ূর দিয়ে শোভিত করা হয়। ইংল্যান্ডে প্রদর্শনের পর একজন আমেরিকান এ ভলিউমটিনিলামে ক্রয় করেন এবং সেই আমেরিকান ক্রোতার কাছে পৌঁছানোর জন্যই এটি টাইটানিকে তোলা হয়েছিল।

ফিটজেরাল্ডের অনূদিত রুবাইয়াতের হাত ধরে ওমর খৈয়ামকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। অথচ তিনি রুবাইগুলো লিখেছিলেন অনেকটা খেলাচ্ছলে এবং ফিটজেরাল্ড পূর্বকালে তার (খৈয়াম) গণিতবিদ ও জোতির্বিজ্ঞানী পরিচয়টিই মুখ্য ছিল। তিনি বীজগণিতের যেসব উপপাদ্য ও জ্যোতির্বিদ্যার তত্ত্ব দিয়ে গেছেন, সেগুলো এখনো অঙ্কশাস্ত্র ও মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ (Treatise on Demonstration of Problems of Algebra) গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। তাইতো পশ্চিমারা বলছে He was the first to give a general method for solving cubic equations. তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সৌর বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন। ওমর খৈয়ামের আবিষ্কার সম্পর্কে গুগল সার্চ বলছে-বিখ্যাত এ জোতির্বিজ্ঞানী কর্তৃক উদ্ভাবিত জালালী ক্যালেন্ডারকে ভিত্তি ধরে অন্যান্য ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছে এবং বর্তমানে ব্যবহৃত গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অপেক্ষা এটি অধিক নিখুঁত। জোতির্বিজ্ঞানে তার অসামান্য অবদান বিবেচনায় চাঁদের একটি গহ্বরের (Crater) নাম তার নামে রাখা হয়েছে।

তিনি একজন দার্শনিকও ছিলেন। বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা কার্যক্রমের পীঠস্থান স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি পরিচালিত Stanford Encyclopedia of Philosophyতে তার দর্শন ও চিন্তাধারার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় তার অবদানগুলো যেভাবে চর্চা করা হয়, সে তুলনায় দর্শনশাস্ত্রে তার কাজগুলো এখনো আলোচনার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

ওমর খৈয়ামের ধর্ম বিশ্বাসকে অনেকেই অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছেন। কেউ কেউ তাকে ইসলামের প্রতি নিরাসক্ত হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। তার নামে নাইট ক্লাব, বিনোদন কেন্দ্র থাকলেই তো আর তাকে দায়ী করা যায় না। তার লেখায় শরাব, নারী বারবার এসেছে। কিন্তু তিনি নিজে শরাব স্পর্শ করেছেন, বলগাহীন জীবনযাপন করেছেন, আমোদ-ফুর্তিতে মেতে থেকেছেন এমন কোনো কিছুই তার জীবনাচরণ বিশ্লেষণে পাওয়া যায়নি। এমনকি তিনি নিজেই বলেছেন, তার জীবনযাপন যদি তেমন হতো, তা হলে তার সমালোচকরা তাকে রেহাই দিত না।

পারস্যের প্রখ্যাত স্কলার এবং আরব ভূখণ্ডের ইতিহাসবিদ আবুল হাসান আলী আল বায়হাকী (১০৯৭-১১৬৯) আরব ভূখণ্ডের বিভিন্ন ঘটনা ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তি সম্পর্কে লিখে গেছেন, যা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। তিনি ওমর খৈয়ামের মৃত্যুর দিনটি বর্ণনা দিচ্ছেন-খৈয়ামের শিষ্যরা তার কাছে জড়ো হয়েছেন, তিনি সবাইকে তার শেষ ইচ্ছার কথা জানালেন। দুপুরের নামাজ পড়লেন, কোনো কিছু পানাহার ছাড়াই পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন। যথাসময়ে আবার নামাজ আদায় করলেন। এরপর মাটিতে সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন। ওমর খৈয়ামকে শ্রদ্ধা জানাতে তার স্মরণে গুগল একাধিকবার তার জন্মদিনে ডুডল তৈরি করেছে। গণিত, মহাশূন্য ও সাহিত্যে তার অবদানের কথা তুলে ধরেছে। ২০১৯ সালে তার ৯৭১তম জন্মদিনে ডুডলে বলা হচ্ছে-গণিতশাস্ত্রে তার অসামান্য অবদান থাকলেও তিনি রুবাইয়াতের জন্যই বিখ্যাত হয়ে রইলেন।

ওমর খৈয়াম হাজার বছর আগের মানুষ। তিনি সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় দৌর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে বিচরণ করে গেছেন এবং জ্ঞানের ওই শাখাগুলোকে সমৃদ্ধ করেছেন। পৃথিবীর বোদ্ধাগণ তার বহুমুখী প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তার সম্পর্কে বলছেন-তিনি ছিলেন বিস্তৃত জ্ঞান ও বৈচিত্র্যময় শিক্ষার একজন ব্যক্তি। যে ক’জন ক্ষণজন্মা বিশ্বসভ্যতায় অশেষ অবদান রেখে গেছেন, খৈয়ামতো তাদেরই একজন।

ওমর খৈয়াম ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মে পারস্যের বিখ্যাত বাণিজ্যিক শহর নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইব্রাহিম খৈয়াম ছিলেন সে শহরের বিখ্যাত চিকিৎসক। ইতিহাসের কোথাও তার মায়ের নাম উল্লেখ না থাকার কারণে যা আমাদের অজানাই থেকে গেল। ওমর খৈয়ামের পুরো নাম ‘ঘিয়াথ আদ দীন আবু ফাতাহ ওমর ইবনে খৈয়াম নিশাপুরি’। নামের প্রথম অংশ ‘ঘিয়াথ আদ দীন’ অর্থ বিশ্বস্ত কাঁধ বা যাকে বিশ্বাস করা যায়। তার কোনো পুত্রসন্তান ছিল কিনা সে ব্যাপারে ইতিহাসে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নাই। তথাপি ‘আবু ফাতাহ’ অর্থ ফাতাহের পিতা। ‘ইবনে খৈয়াম’ অর্থ খৈয়ামের পুত্র (অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, ওমর তার বাবার কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে নামের শেষে ‘খৈয়াম’ যুক্ত করেন)। এবং ‘নিশাপুরি’ অর্থ নিশাপুরে জন্ম। কিন্তু তার নামের ব্যাপারে বিতর্ক আছে কারণ, ‘খৈয়াম’ শব্দের অর্থ ‘যে ব্যক্তি তাঁবু তৈরি করে’। একদিকে শোনা যায়, তার বাবা ধনী চিকিৎসক ছিলেন। অন্যদিকে কেউ দাবি করছেন ওমরের বাবা খৈয়াম ছিলেন একজন তাঁবু তৈরির কারিগর। এখানে বিপরীত পক্ষের যুক্তি এরূপ যে, ইংরেজিতে অনেক মানুষের নাম ‘স্মিথ’ হলেও তারা আক্ষরিক অর্থের মতো কামার নয়।

ওমর খৈয়াম ভাগ্যবানই ছিলেন বলা চলে। কারণ তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্মগ্রহণ করেন। সে যুগে ইসলাম ছিল সকল ধরনের গোঁড়ামি, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা বিবর্জিত আর মুসলমানরাও ছিল মুক্তমনা ও জ্ঞানপিপাসু। ওমরের বাবা ইব্রাহিমও তেমনই একজন মুসলিম ছিলেন, যিনি ছেলের জন্য জরাথ্রুস্টর ধর্মে বিশ্বাসী এক শিক্ষক বামান্যর বিন মারযবানকে নিয়োগ দেন। এই বামান্যরই কিশোর ওমরকে গণিত, বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষা দেন। ইবনে সিনার ছাত্র বামান্যরের কাছেই ওমর খৈয়াম ইবনে সিনার দর্শন শিক্ষা লাভ করেন। সব কিছুই চলছিল ঠিকঠাকভাবে কিন্তু আঠারোতে পা দিতেই যেন পা পিছলে পড়তে হলো। ১০৬৬ সালে, অর্থাৎ যে বছর ওমর আঠারো বছরের কিশোরে পরিণত হন, সে বছরই তার পিতা এবং শিক্ষক উভয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য সে বছর একটি ভালো ঘটনাও ঘটে। সে বছরের শেষ দিকে আকাশে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে হ্যালির ধূমকেতু। আর তা দেখে ওমরের মনে ডালপালা ছড়িয়েছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের কৌতূহল।

‘আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা’- উনিশ শতকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এই কবিতা লিখেছেন। আর ওমর খৈয়াম প্রায় হাজার বছর আগেই এই কবিতার বাণী নিজের জীবনে প্রতিফলিত করেছিলেন। পিতা এবং পিতৃতুল্য শিক্ষকের মৃত্যুতেও ভেঙে না পড়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। প্রথমে কিছুদিন নিশাপুরেই টুকটাক কাজ করেন। ১০৬৮ সালে তিনি সমরকন্দে চলে আসেন। সেখানে তিনি তার বাবার বন্ধু ও সে শহরের গভর্নর আবু তাহিরের অধীনে কাজ শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ওমরের অসাধারণ গাণিতিক জ্ঞান দেখে তাকে সরকারি অফিসে চাকরি দেন তাহির। এর কয়েক মাস পরই ওমর রাজার কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। এই সময়ে তিনি বীজগণিত চর্চা করতে থাকেন।

বীজগণিত দিয়েই নিজের গবেষণা জীবন শুরু করেন খৈয়াম। প্রথমেই তিনি অনুধাবন করেন, প্রচলিত গ্রীক পদ্ধতিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান সম্ভব নয়। তাই নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন ওমর। ১০৭০ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সেই তিনি এর সমাধান করে ফেলেন। সে বছর তিনি তার জীবনের অন্যতম সেরা কাজ, ‘ডেমনস্ট্রেশন অব প্রবলেমস অব অ্যালজেবরা অ্যান্ড ব্যালেন্সিং’ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বৃত্ত, প্যারাবোলার মতো কণিক ব্যবহার করা সহ ত্রিঘাত সমীকরণের একাধিক সমাধান পদ্ধতির উল্লেখ করেন। তবে তার সমাধানে ঋণাত্মক সংখ্যা এবং ঋণাত্মক রুট উপেক্ষিত ছিল। কেননা ঋণাত্মক সংখ্যা তখনো ইসলামিক গণিতবিদগণের মাঝে প্রচলিত হয়নি। তবে এই অসাধারণ কীর্তিতেও অতৃপ্ত ছিলেন ওমর। তিনি সবসময় চাইতেন, বীজগাণিতিক সমস্যার সমাধান বীজগাণিতিক কোনো সূত্র বা পদ্ধতি ব্যবহার করেই করতে। জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ত্রিঘাত সমাধান করে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আর এই অসন্তুষ্টি থেকেই রচনা করলেন ‘ট্রিটিজ অন ডেমনস্ট্রেশন অব প্রবলেমস অব অ্যালজেবরা অ্যান্ড ব্যালেন্সিং’। এখানে তিনি সম্পূর্ণ বীজগাণিতিক উপায়ে ত্রিঘাত সমাধান করেন। আর তার এই কাজই তখন তাকে প্রথম সারির গণিতবিদ হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। ওমর খৈয়ামের মৃত্যুর প্রায় পাঁচশো বছর পর্যন্ত ত্রিঘাত সমীকরণের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। ১৫৩৫ সালে নিকোলো টার্টাগিলা ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধানের সাধারণ সূত্র তৈরি করলে বীজগণিত ওমর খৈয়াম যুগ থেকে এক কদম এগিয়ে যায় মাত্র।

১০৭৩ সালে ওমর খৈয়ামের জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়। সেলজুক সাম্রাজ্যের সুলতান মালিক শাহ তাকে সেলজুকের রাজধানী ইস্ফাহানে আমন্ত্রণ জানান একটি অপরিবর্তনীয় এবং চিরস্থায়ী বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করে দিতে। উল্লেখ্য, তখনকার সময়ে পঞ্জিকাগুলো স্থায়ী ছিল না এবং ঘন ঘন বছরের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করা হতো। সুলতানের ডাকে সাড়া দিয়ে আরো কয়েকজন বিজ্ঞানীকে সাথে নিয়ে ১০৭৪ সালে সেলজুক গমন করেন ওমর খৈয়াম। সুলতান মালিক শাহ ওমরকে ভালো বেতন এবং সব রকম সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা দিলেন। প্রথমেই ওমর তাকে দিয়ে একটি অবজারভেটরি (মানমন্দির) তৈরি করিয়ে নিলেন। যেখান থেকে অন্তত ৩০ বছর আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৩০ বছরের লক্ষ্য এজন্য ঠিক করা হয়েছিল যে এ সময়ে শনি গ্রহ তার কক্ষপথে একবার ঘূর্ণন শেষ করবে। পর্যবেক্ষণে খৈয়াম ১০২৯.৯৮ দিনে ২.৮২ বছর হিসাব করলেন। সে হিসাবে এক বছরের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৬৫.২৪২২ দিন। বর্তমানে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেছে ৩৬৫.২৪২১৮৯ দিন বা ৩৬৫.২৪২২ দিন। ওমর খৈয়াম যা বহু বছর আগে যা হিসাব করেছিলেন, তাই আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করলো । ওমর তার বর্ষপঞ্জির কাজ শেষ করেছিলেন ১০৭৮ সালে। পরের বছর থেকেই সুলতান মালিক শাহ নতুন বর্ষপঞ্জি হিসেবে ওমরের বর্ষপঞ্জি চালু করেন যা ২০ শতক পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।

ওমর খৈয়াম একজন অসাধারণ কবি ছিলেন। আসলেই কী ছিলেন? তার ‘রুবাইয়াত’ পড়লে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। কিন্তু কেউ কেউ যে বলে থাকেন, রুবাইয়াতের একটি লাইনও ওমরের লেখা নয়। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদই ‘রুবাইয়াত’কে ওমরের কবিতা বলে উল্লেখ করেছেন। এটি একটি কবিতা নয়, শত শত কবিতার সংকলন ইতিহাসবিদ সাঈদ নাফসির মতে, ‘রুবাইয়াতে’ প্রায় দুই হাজার চতুষ্পদী কবিতা আছে, যেগুলোর সব বর্তমানে পাওয়া যায় না। তবে সর্বনিম্ন সংখ্যাটিও বলে, ওমর প্রায় বারোশো এর মতো চতুষ্পদী কবিতা লিখেছেন। তার এই কবিতার সংকলন উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অবহেলিতই ছিল। ১৮৫৯ সালে এডওয়ার্ড ফিটজগেরাল্ড এই কবিতা সংকলনের ইংরেজি অনুবাদ ‘রুবাইয়াত অব ওমর’ প্রকাশ করলে ওমরের কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার কবিতাগুলো পশ্চিমা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। এমনকি তার নিজ দেশের চেয়েও বেশি। কাজী নজরুল ইসলামের বাংলা অনুবাদে ‘রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম’ বইটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয়।

সৈয়দ মুজতবা আলী এর ভূমিকায় লিখেন, ‘জীবনবাদী ওমর খৈয়াম নজরুলকে খুব আকর্ষিত করেছিলেন। এ অনুবাদে অত্যন্ত চমৎকার ভাষাভঙ্গি ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য অনুবাদকারের চেয়ে নজরুলের অনুবাদ অনুভূতির পরশে, যথাযথ শব্দের পারিপাট্যে উজ্জ্বল থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’ ওমর একজন বই প্রেমিক ছিলেন এবং প্রচুর পড়াশোনা করতেন। হাতের কাছে যে বই পেতেন, নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেটাই তুলে নিয়ে পড়া শুরু করতেন। কখনো কখনো গাছের নিচে বসে বই পড়তে পড়তে সেখানেই ঘুমিয়ে যেতেন। এমনকি নিরবে নিভৃতে বই পড়তে পাহাড়ে বা জঙ্গলে চলে যেতেন। মূলত তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানপিপাসু মানুষ। বই পড়ে সেই পিপাসা মিটাতে চেষ্টা করতেন। তবুও বই পড়ার পিপাসা কখনো তার মেটেনি।

তিনি জানতেন বই পড়ার গুরুত্ব, সেটা বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন…

‘রুটি – মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়।’

ওমর খৈয়ামের জীবনের অনেক দিকই আমাদের অজানা। তার অনেক কাজও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হারিয়ে গিয়েছে কালের স্রোতে। তার দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, তিনি বিয়ে করেছিলেন এবং তার একটি সন্তানও ছিল। ১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর ওমর খৈয়াম তার জন্মস্থান নিশাপুরে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর আগে এমন একটি বাগানে তাকে সমাহিত করার কথা বলে গিয়েছিলেন, যেখানে বছরে দু’বার ফুল ফোটে। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়েছিল। দীর্ঘকাল তার কবরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৯৬৩ সালে প্রতœতাত্ত্বিক খননে তার কবর খুঁজে পাওয়া যায় এবং তা নিশাপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে সে স্থানটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। সেখানে খোঁদাই করে লেখা আছে…

‘এক সুরাহী সুরা দিও, একটু রুটি ছিলকে আর

প্রিয় সাকি, তাহার সাথে একখানা বই কবিতার,

জীর্ণ আমার জীবন জুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সাথ,

এই যদি পাই চাইব না কো তখৎ আমি শাহানশার!’

(অনুবাদ : কাজী নজরুল ইসলাম।)