মনপুরা একই পরিবারে চার সদস্য মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী

রাকিবুল হাসান, মনপুরা ভোলা প্রতিনিধি :
ভোলার মনপুরা অলিউল্লাহ-হাসিনা দম্পতি তিন সন্তান ও পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী অলিউল্লাহ প্রতিবন্ধী হওয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন।প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্বামী নিয়ে চরম দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন যাপন করছেন প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা হাসিনা বেগম । সমাজের বিত্তবানদের একটু সহানুভুতি ও সহযোগিতা পেলে হয়তো তাদের এভাবে মানবেতর জীবন কাটাতে হতনা। তাদের ভিটে বাড়ী ছাড়া তেমন কোন জায়গা নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলার মনপুরা উপজেলা ৩নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়েনের উত্তর সাকুচিয়া গ্রামের অলিউল্লাহ ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে ।তাদের মাঝে ২ ছেলে মানসিক ১ ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধীর অভিশাপ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন।পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম অলিউল্লাহ রিক্সা চালিয়ে কোন রকম সংসার চালাতো । কিন্তু দীর্ঘদিন চোখের সমস্যা থেকে ২ টি চোখ ও নষ্ট হয়ে গেছে ।এখন আর রিক্সা চালাতে পারছে না। অর্থের অভাবে ছেলেরা ও নিজেই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। খুব অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন বলে জানান অলিউল্লাহ ।

৩নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাকির হোসেন মিয়া প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিলে কোন রকমে সংসার চলছে ।তবে প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি যে ভাতা পান ,তা দিয়ে ৬ জনের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন এই পরিবারটি ।

জানা যায়,অলিউল্লাহ -হাসিনার ৩৫ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের ঘরে এক-এক করে ৪টি সন্তানের জন্ম হয়।তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান।তাদের মাঝে দুইজন মানসিক ও একজন শরীরিক প্রতিবন্ধ।এক মাত্র মেয়ে মরিয়ম কিছুটা ভালো রয়েছে । পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারী অলিউল্লাহ দীর্ঘদিন শারীরিক প্রতিবন্ধী।চোখের সমস্যা থাকায় এখন আর ইনকাম করতে পারেনা ।সেও এখন চলাফেরা করতে পারে না । চার প্রতিবন্ধীদের কে সেবাযত্ন করতে হিমসিম খাচ্ছেন অলিউল্লাহর স্ত্রী হাসিনা বেগম ।

প্রতিবন্ধী ৩ ছেলে রাকিব(২৩), শাকিব(২০) ও শাহীন(১৪) এখন অনেকটা অসুস্থ।একই পরিবারের প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নেয়ায় সমাজে তারা অন্যান্য ছেলে-মেয়ের মতো চলতে পারে না, মিশতে পারে না। এই প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চরম দুচিন্তায় দিন কাটাছেন মা হাসিনা বেগম । মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়া এলাকার অন্য অন্য ছেলে মেয়েদের কে আক্রমন করে ।পাশের মানুষের অবিচারে ফসল নষ্ট করে । এতে হাতাশা ও উদকন্ঠ দিন পার করছেন মা হাসিনা বেগম ।

সংসারের ৬ জনের মুখে অন্ন তুলে দিতে অসহায় প্রতিবন্ধীদের মা হাসিনা বাধ্য হয়ে তাদের কে নিয়ে বাজারে ও গ্রামে ভিক্ষা করতে হয় । ভিক্ষা করে কোন রকমে সংসার চালান ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,অলিউল্লাহ একজন ভূমিহীন তবে চাষাবাদের জন্য কোন জমি নাই।সরকারি খাঁস জমিতে একটি টিন সেট ঘরে স্বামী-স্ত্রী বর্তমানে তিন প্রতিবন্ধী ও সুস্থ এক মেয়ে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন।

প্রতিবন্ধী সন্তানের মা হাসিনা জানান, একটি স্বাভাবিক সন্তান মানুষ করতে খুব কষ্ট করতে হয়। কিন্তু পরপর তিনটি প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।তাদের সেবা ও অন্ন যোগাতে যে পরিমান টেনশন করতে হয় আমার, এতে আমিও দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে পরছি। এবং সরকারি ভাবে অনেক কে ঘর দিচ্ছে ।যদি আমাদের জায়গা একটা ঘর পেতাম তা হলে এই প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্বামীদের কে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারতাম।

প্রতিবন্ধী অলিউল্লাহ বলেন, প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমাদের সাথে কেউ মিশতে চায় না।আমার সন্তান বাড়ির বাইরে তো যেতেও পারে না। প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিলেও প্রতিটি সন্তানকেই বাবার মমতা দিয়ে ভালোবাসি।

প্রতিবন্ধী অলিউল্লাহ দাবি করেন, বিনা সুদে কোন ব্যাংক সহায়তা করলে প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে কোন একটি দোকান বা গরু পালন করে বাকিটা জীবন ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।

তাদের প্রতিবেশী ও গ্রামের অনেকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের সরকারে ভাতার টাকা দিয়ে দিয়ে ৬ জনের পরিবার চালিয়ে যেতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন। পরিবারে উপার্জনের কোন ব্যক্তি না থাকায় কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে উপোস থাকতে হচ্ছে তাদেরকে। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন।যার ফলে এ পরিবারের দুঃখ-কষ্ঠের সীমা নেই। মানবিক কারণে হলেও এই পরিবারের সদস্যদের প্রতিবন্ধী রক্ষা করার জন্য সরকারী-বেসরকারী সাহায্য একান্ত প্রয়োজন।

ভয়েস অব লইয়ারস কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সঞ্জয় কুমার দে দুর্জয় বলেন,এই পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে এই প্রতিবন্ধীদেরকে আর্থিক সহায়তা করা হয় তাহলে হয়ত অসহায় প্রতিবন্ধীদের বেঁচে থাকাটা সহজ হবে। এজন্য মানবিক কারণে হলেও সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রবাসী ও বিত্তবানদেরকেও এ অসহায় পরিবারকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা বড়ই প্রয়োজন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল বলেন, প্রতিবন্ধীরা হচ্ছে সমাজের একটি অংশ। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে । ৪জন প্রতিবন্ধীকে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেয়া হয়েছে।সরকারী বেসরকারী অনুদান তাদেরকে দেয়া হয়েছে ভবিষ্যতেও দেয়া হবে ।তবে অসহায় এ পরিবারটি কে স্থানীয় ভাবে কিছু সহয়তা করলেও সরকারিভাবে বড় কোন সুযোগ-সুবিধা ও চিকিৎসার আওয়তা আনার জরুরি ।

এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) থাকা সমাজসেবা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন,বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এই পরিবারের তিনজনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সরকার যেভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে, তাঁর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারটির দীর্ঘদিনের অভাব অনটন ঘুচবে।

ক্যাপশনঃ-একজন নয়, দুজন নয়, একই পরিবারের চার সদস্যই প্রতিবন্ধী। চার জন প্রতিবন্ধী সদস্যের মধ্যে তিন সন্তান প্রতিবন্ধী। আর তাঁদের নিয়ে বিপাকে পড়ছেন প্রতিবন্ধী বাবা অলিউল্লাহ।