মরণফাঁদ বাউফলের সেবা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

সানাউল হক, বাউফল :

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সেই আলোচিত মরণফাঁদ খ্যাত নামক সেবা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অবশেষে তদন্ত শুরু করেছে পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন।

বুধবার ২৪-৫-২০২৩ খ্রিঃ দুপুরের দিকে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কর্তৃক ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম তদন্ত করতে এসে প্রথমে সেবা ক্লিনিকে সার্চ করেন।এসময় ডেট ওভার ৫টি ইনজেকশন সহ ফ্রিজে রাখা গরুর পচা মাংশ ও মাছ পাওয়া যায়। তদন্ত পরিচালনা ও তদন্তকারী প্রধান ছিলেন ডাক্তার কেননং।ডাক্তার কেননং বলেন,পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কর্তৃক ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আমাকে প্রধান করে পাঠানো হয়েছে। তাই দুপুরের দিকে এসে প্রথমেই ওই অভিযুক্ত সেবা ক্লিনিকে ঢুকে অপারেশনের কাজে লাগা ৫টি ইনজেকশন সহ একাধিক মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া গেছে। এবং ফ্রিজে থাকা পচাঁ মাছ মাংস পাওয়া গেছে।

পরে বাউফল হাসপাতালে এসে নিহত আখিনুর বেগম এর স্বামী শ্বশুর ও মা বাবা সহ তার পরিবারের লোকজনকে তদন্তের স্বার্থে এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।কিন্তু অপারেশন করা ডাক্তার আসেননি। তদন্তের ওপর ভিত্তি করে সিভিল সার্জন মহোদয় সেবা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রে একাধিক স্বজনরা জানান,বৃহস্পতিবার (১৮ই মে) সন্ধ্যার পরে শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে না জানিয়ে শুধু নিহত আখিনুর বেগম এর বাবা ও স্বজনরা সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গোপন বৈঠক শেষে মৃতঃআখিনুরের স্বামী মোঃ বাহাদুর বয়াতির সহিস্বাক্ষর নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা আখিনুর বেগম এর বাবা জালাল প্যাদার হাতে বুঝিয়ে দেন।

তবে এব্যাপারে জানতে জালাল প্যাদার কাছে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করে বলেন ঘটনা সত্য তবে ফোনে বলা যাবেনা সামনাসামনি বলবো।স্বামী মোঃ বাহাদুর বয়াতি বলেন, আমি সুস্থ নই, ঘটনার পর থেকেই আমি দিশেহারা হয়ে আছি। তবে আমার শ্বশুর জালাল প্যাদা বাদী হয়ে থানায় একটা হত্যার মামলা করার জন্য লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে এবং প্রশাসন ওই সেবা ক্লিনিক সিলগালা করে দিলে সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমার শ্বশুর স্বজনদের মধ্যে একটা রফাদফার চেষ্টা চালায় ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করা হয়।

কিন্তু আমার পরিবারের কাউকে কিছু না বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আমাকে আমার এক ভায়রা সহ শ্বশুর ও স্বজনরা বাউফলে নিয়ে গিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে যায়।পরে জানতে পারি আমার শ্বশুর ৫ লক্ষ টাকা সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝিয়ে নেন।স্বামী মোঃ বাহাদুর বয়াতি আরও বলেন যা-ই হয়েছে এখন যদি ওই টাকাটা মা হারা মেয়েটার ভবিষ্যতের জন্য বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,অথবা বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা আমাদের স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে ব্যাংকে একটা ফিক্স ডিপোজিট করে রাখে তাহলে আমাদের আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।

আর যদি এমন না হয় তাহলে আমি অচিরেই সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সহ ডাক্তার ও নার্সের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করব।নিহত আখিনুর বেগম এর শ্বশুর মোঃ ফরহাদ বয়াতি বলেন, আমি আমার ছেলের সাথে একমত। নইলে আমার ছেলেকে বাদী করে পুনরায় মামলা দায়ের করব।উল্লেখ্য: উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাহাদুর বয়াতির স্ত্রী আখিনুরকে প্রসবজনিত কারনে গত রোববার (১৪ই মে) বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

কর্তব্যরত নার্স নরমাল ডেলিভারী করার উদ্যোগ নেন।এরই মধ্যে এক দালাল ও হাসপাতালের নার্স আখিনুর ও তার স্বজনকে ভয় দেখিয়ে দ্রুত সেবা ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করার নির্দেশ দেন। ওই দিন সন্ধ্যার পর সেবা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে ডা. সোলায়মান নামের এক চিকিৎসক আখিনুরের সিজার করে একটি কন্যা সন্তানের জম্ম দেন। দীর্ঘক্ষণ পরেও আখিনুরের জ্ঞান ফিরে না আসায় অপারেশন থিয়েটারে থাকা টিম নিশ্চিত হন তার মৃত্যু হয়েছে।পরে তড়িঘড়ি করে সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অখিনুরের লাশ উন্নত চিকিৎসার নামে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

এরই ফাঁকে চিকিৎসক ও সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দেন।পরে আখিনুরকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা স্বজনদের জানান অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।এদিকে সেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একদিন ক্লিনিক বন্ধ রাখার পর অলৌকিক ক্ষমতার বলে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মঙ্গলবার (১৬ই মে) সকাল থেকে পুনরায় ব্যবসা করার জন্য খুলে বসলে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুপুরের দিকে অভিযান চালিয়ে জরিমানা সহ অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করে দেন।