স্বরূপকাঠির সুলতানপুরের মেয়ে প্রিয়াংকা হালদার তিনটি বিসএস-এ সফলতা অর্জন

স্বরূপকাঠি প্রতিনিধি :

সত্যিকারের শিক্ষা থাকলে কর্মের অভাব হয় না। যার বাস্তব প্রমান দিয়েছে স্বরূপকাঠির সুলতানপুর গ্রামের আশুতোষ হালদারের কন্যা প্রিয়ংকা হালদার। এক এক করে তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাসক হিসেবে সরকারি স্বরূপকাঠি কলেজে কর্মরত। ৪১ তম বিসিএস এ সহকারী বন সংরক্ষক পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন আবার এবং বর্তমানে ৪৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভার জন্য মনোনীত। সবই সম্ভব হয়েছে পিতা আশুতোষ হালদার এর সততা, আদর্শ এবং কঠোর পরিশ্রম ওর তার বড় ভাই উজ্জ্বল হালদার এর সহযোগিতায়।

জানা যায় পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলা সুলতানপুরের প্রিয়াংকার হালদার। বাবা আশুতোষ হালদার পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ১৯৬৭ সাল থেকে স্বরূপকাঠির বাজারে ব্যাবসা করে আসছেন। তার দুই ছেলে এবং একটি মেয়ে। স্বরূপকাঠি ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে তার বাড়ি । প্রিয়াংকার এই সাফল্যে সুলতানপুরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

প্রিয়াংকার বাবা আশুতোষ হালদার বলেন, মেয়ে আমার ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলেন। সংগীতকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় লেখা পড়া করেছে। ওর স্কুল জীবন গ্রামেই কেটেছে। আমার আর্থিক অসচ্ছলতা সঠিক গাইড গাইডলাইনের অভাবে ওর এএসসি রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। পরে আরেফিন স্যারের সহযোগিতায় বরিশালে অমৃতলাল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয় এবং ভালো রেজাল্ট করে। উচ্চ শিক্ষার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে বড় ভাইয়ে সাথে ঢাকা যায়।

সেখানে ২০১১-১২ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়। সিজিপিএ- ৩.৬৪ নিয়ে বিএসসি এবং সিজিপিএ- ৪.০০ নিয়ে এমএসসি কমপ্লিট করে। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ৪০তম বিসিএস থেকে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে স্বরূপকাঠি কলেজে কর্মরত আছে।প্রিয়াংকা হালদার এর চাচা পরিতোষ হালদার বলেন, আমার ভাইজি লেখাপড়া করে যে বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে সেজন্য ওর চাচা হিসাবে গর্বিত আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

প্রিয়াংকার বড় ভাই উজ্জ্বল হালদার বলেন,ওর জন্য আপনারা সকলে দোয়া করবেন, ওর সাফল্যের পেছনে সর্বপ্রথম বাবা মায়ের অবদান বেশি ছিলো। এর পরে ওর ইচ্ছে ছিলো বড় কিছু হওয়া, মুলত ওর ধৈর্য ইচ্ছেশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রম করেছে বলেই এই সফলতা। আমি ওর বড় ভাই হিসেবে আর্থিক সাপোর্ট দিয়েছি মাত্র ।ওর জন্য সকলে দোয়া করবেন। ছোট ভাই আসিম বলেন,আমার এক মাত্র ছোট বোন যে বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে সেজন্য আমি গর্ববোধ করছি। ও যেন দেশ ও দশের জন্য কাজ করে যেতে পারে আমি ওর সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি।

প্রিয়াংকার এই সাফল্য নিয়ে কথা হয় তার সাথে সে জানান, আমি খুব সাধারণ ঘরের মেয়ে। আমার বাবা মা, তিন ছেলে-মেয়েকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছেন। আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত একটা অঞ্চল থেকে উঠে এসে এই জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা খুব সহজ ছিলো না।

অন্যের দেখাদেখি প্রথম বিসিএস ভাবনা মাথায় আসলেও আমার পারিপার্শ্বিকতা, প্রতিকূলতা এবং অসচ্ছলতা বিসিএস যাত্রার মূল কারণ ছিলো।তবে আমার জেদ, ধৈর্য ও পরিশ্রম আমার সফলতার নেপথ্যে। আর যেহেতু স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পেশায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ থাকে, তাই আমার কাছে এর বিকল্প ছিলো না।

বর্তমানে আমি ৪০তম বিসিএস থেকে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত আছি। এটাই আমার প্রথম বিসিএস, প্রথম চাকুরী, প্রথম চাকুরি। সম্প্রতি ৪১ তম বিসিএস থেকে সহকারী বন সংরক্ষক (ফরেস্ট্রি ক্যাডার) পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি। এরমধ্যে ৪৩ তম বিসিএস এরও রিটেন রেজাল্ট ভালো হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ভাইভা। সিদ্ধান্ত নেইনি ভাইভা দেবো কি না।

প্রিয়াংকা আরো জানায়, পরম সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে ভাল আছি। প্রিয়াংকা হালদার নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বেলন, লক্ষ্য স্থির করুন, সময়কে কাজে লাগান, প্রতিকূলতা থেকে মনে শক্তি যোগান। ধৈর্য, চেষ্টা, রুটিন ও জেদ – এই চারটা জায়গায় যে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে, সফলতা তার কাছে এসে ধরা দিবে।

স্বপ্ন যদি হয় বিসিএস, পড়ার টেবিলের সামনে বড় করে লিখে রাখুন “আমি ক্যাডার হবো, আমিই পারবো।