শাহামাহমুদপুরে চাচা-ভাতিজার সম্পত্তির দ্বন্দ্বে হামলা-মামলার শিকার বৃদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর সদরে সম্পত্তিগত ঝামেলায় চাচা-ভাতিজার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বে প্রতিবেশীর উপরও হামলা মামলার ঘটনা ঘটার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড দাসেরগাঁও বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, গত কয়েকমাস ধরে শহীদ উল্যাহ বেপারীর সাথে তারই আপন ভাতিজা প্রবাসী দিদারের সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা চলছে। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এলাকায় কয়েকবার শালিসও করেন। পরবর্তীতে উক্ত সমস্যা সমাধান হলেও মৃত স্বামীর সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে দিদারের মা কয়েকবার তার দেবর মোঃ শহীদ উল্যাহ বেপারীর কাছে অনুরোধ করেন। শহীদ উল্যাহ বেপারী কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি বাদী হয়ে স্থানীয় শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দুই পক্ষকে নিয়ে কয়েকবার শালিস করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

প্রবাসী দিদারের মায়ের অনুরোধে সেই শালিসে একই বাড়ির প্রতিবেশী বৃদ্ধ আবু তাহের বেপারীও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেই উপস্থিতিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃদ্ধ আবু তাহেরের। শেষ পর্যন্ত গত ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার বাড়ির মসজিদে এশার নামাজের পর শহীদ উল্যাহ বেপারী ও আবু তাহেরের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শহীদ উল্যাহ বেপারীর হাতের কালো লাইট দিয়ে তাহের বেপারীর উপর আঘাত করলে হাতের আঙ্গুলের উপর পড়ে মারাত্মক আঘাত পায়। পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন আঙুলের হাড় অনেকটা ভেঙে গেছে এবং চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়ি চলে আসেন। এমন ঘটনার কথা জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী বাড়ির কয়েকজন পুরুষ মহিলা।

ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর শহীদ বেপারীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে আবু তাহেরসহ ৪ জনকে আসামী করে চাঁদপুর আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। অথচ আবু তাহের বেপারী বাড়ির মানুষের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কোন আইনি ব্যবস্থা না নিলেও শহীদ বেপারী একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এতে সমাজের কাছে আবু তাহের বেপারীর মান সম্মান ক্ষুন্ন হয় এবং তার উপর আক্রমণের বিচারের দাবিতে ঘটনার ১৩ দিন পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার আবু তাহের বেপারী বাদী হয়ে শহীদ বেপারীসহ আরো দুইজনকে আসামী করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শহীদ বেপারীকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় এবং তিনি জেলহাজতে আছেন।

এ ব্যাপারে আবু তাহের বেপারী বলেন, শহীদ বেপারীর ভাই-ভাতিজাদের সম্পত্তিগত সমস্যা নিয়ে আমি বাড়ির লোক হওয়ায় আমাকে শালিসগুলোতে ডাকতো। কিন্তু শহীদ বেপারী আমাকে সবসময় ভুল বুঝে আল্লার কাছে দোহাই দিতো। ঘটনার দিন তিনি এশার নামাজ পড়তে গিয়েও নামাজের কিছুক্ষণ আগে মসজিদে বসে বসে আল্লার দোহাই দিতে থাকে। নামাজ শেষে মসজিদের বাহিরে এসেও গালমন্দ করতে থাকলে ওনাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে থাকা বিদেশী লাইট দিয়ে আমাকে আঘাত করেন। ঠেকাতে গিয়ে আমার আঙ্গুল ভেঙে যায়। পরদিন তার স্ত্রী আমার নামে চাঁদপুর কোর্টে একটি মিথ্যা মামলা দেন এবং সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্তের জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাই।

ঘটনার সত্যতা জানতে শহীদ বেপারীর ঘরে গেলে তার স্ত্রীকে না পেয়ে তার পুত্রবধু খাদিজা ও রোকসানা সাংবাদিকদের জানান, আমার শশুর নামাজ পড়তে গিয়ে তাদের নামে নাকি আল্লার কাছে দোহাই দিলে মসজিদের বাহিরে এলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় তাহের বেপারী আমার শশুরকে মারধর করেন। আমার শাশুড়ির উপরও আঘাত করেন।

এদিকে বাড়ির বেশিরভাগ মানুষই শহীদ বেপারীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে মিথ্যা বলে দাবি করেন। তারা বলেন, আসলে ঐ দিন তেমন কোন মারাত্মক ঘটনা ঘটেনি। উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হলে ভালো হবে।