ক্যান্সারে আক্রান্ত অসহায় রানু বেগম টাকার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরার পথে

গাজী মোঃ মহসিন :
টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না মরণব্যাধি রোগ ক্যানসার আক্রান্ত রানু বেগম। দিন দিন যন্ত্রণায় বিষণ্ন হয়ে উঠছে ৪৫ বছর বয়সী এ নারীর জীবন। অভাব অনটনের সংসারে স্বামী সন্তান থেকেও যেন কেউ নেই তার উপার্জন করার। ভিটে মাটি বিক্রি করেও অসুস্থ রানু বেগমের চিকিৎসা করাতে চেষ্টার কমতি ছিল না বোন সাহারা বেগমের।

অসহায় এ পরিবারটির দিন কাটছে অন্যের সহযোগিতায়। বোনের কাছে থেকে দু-বেলা দু’মেঠো খাবারের ব্যবস্থা হলেও মিলছে না রানুর চিকিৎসার অর্থ। এতদিন পৈত্রিক ভিটে মাটি বিক্রি করা টাকা ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু ৪ লক্ষাধিক টাকা খরচ করার পর এখন তার স্ত্রীর চিকিৎসার অর্থ যোগানে ব্যর্থ বোন সাহারা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড লোধেরগাঁও গুচ্ছগ্রামে থাকেন রানু বেগম। ঐ বাড়িতেই মনির হোসেনের সাথে গত প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে বিয়ে হয় রানু বেগমের। তাদের অভাব অনটনের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে ফটিকছড়িতে থাকার সুবাদে প্রথম স্ত্রীর কোন খোঁজখবর রাখেন না। এদিকে রানু বেগমের বড় ছেলেও বিয়ে করে চট্টগ্রামে থাকেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে একাকিত্ব সময় পাড় করছেন এই অসহায় নারী।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহায় সম্পত্তি বিক্রি করায় এখন আর নিজের জমিজমা না থাকায় বোনের ঘরেই দিন কাটাচ্ছেন। জরায়ু ক্যানসার আক্রান্ত রানু বেগমের চিকিৎসার অর্থাভাব কাঁদাচ্ছে পুরো পরিবারকে। শুরুতে প্রাথমিক চিকিৎসা হলেও পরে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লা ও ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বর্তমানে দরিদ্র এই পরিবার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে অক্ষম। বোনের চিকিৎসার জন্য অর্থ যোগানের ব্যবস্থা করার চ্যালেঞ্জের সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ ও মানসিক যন্ত্রণা।

রানু বেগমের বোন সাহারা বেগম বলেন, আমার অসুস্থ বোনের মুখে হাসি নেই। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। ওনার চিন্তায় আমার নিজের মেরুদণ্ড যেন অচল হয়ে পড়েছে। ডাক্তার যখন ক্যানসার আক্রান্তের খবর জানালেন, তখন থেকে আমার পরিবারে দুর্দশা নেমে এসেছে। এর পর পর একটা বিপদ লেগে আছে। জমিজমা, টাকা-পয়সা কিছুই নেই এখন। আমি নিজেও কোন তেমন একটা স্বাবলম্বী নই। আমার বোন নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও দিনমজুর হিসেবে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন বিগত বছরগুলোতে। ক্যানসার ধরা দেয়ার পর আর কোন কাজ করতে পারেন নি। সবার কাছে আমি সহযোগিতা চাই। সরকারের কাছে, সমাজের ধনী ও দানশীল মানুষরা এগিয়ে এলে আমার বোনকে বাঁচানো সম্ভব।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বেঁচে থাকার আহাজারি ক্যানসার আক্রান্ত রানু বেগমের চোখে-মুখে। তিনি বলেন, আমি বাঁচতে চাই। আমার পরিবারের মাঝে আবারো সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে চাই। মরণঘাতী ক্যানসারে আমার জীবনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারটিও আজ নিঃস্ব। শুধু টাকার অভাবে সামনে আর কোনো চিকিৎসা করাতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি পরিবারের কাছে একটা বোঝা হয়ে আছি। আমাকে বাঁচানো হোক, আমার খুব ইচ্ছে বেঁচে থাকার।

স্থানীয় কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায়। দীর্ঘদিন ধরে বোনের ঘরে বসবাস করছে।ক্যানসার রোগ তো নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিরাট ধাক্কা। এর মধ্যে রানু বেগম তার সাধ্যমত চিকিৎসা খরচ চালিয়েছেন। তাদের পরিবারে চিকিৎসা করাবে, এমন সামর্থ্যবান কেউ নেই। তার ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে পরিবারটির সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন নিরুপায় এ পরিবারের পাশে সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে দুই-তিন লাখ টাকা যোগাড় করা সম্ভব হবে। এতেই হয়তো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন তিনি।


স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, রানু বেগম আসলেই খুব অসহায়। তার চিকিৎসা ক্ষেত্রে এতদিন অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠতে আরো ২-৩ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। এবং সমাজের ধর্ণাঢ্য, দানশীল ব্যক্তি বা সামাজিক সংগঠনের কাছেও সহযোগিতার অনুরোধ জানান।

এদিকে ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বৃত্তবান ও হৃদয়বান মানুষদের কাছে আর্থিক সহযোগিতার আকুতি জানিয়েছে অসহায় রানু বেগমের মেয়ে। ক্যানসারমুক্ত একটি সুস্থ, সুন্দর ও সুখময় জীবন উপহারে তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য বা আর্থিক সহযোগিতা করতে চাইলে এই (০১৮১৮-৯৬১২৬৩) নম্বরে যোগাযোগ করুন। অথবা বিস্তারিত তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের (০১৮৩০- ৮৮৫০০০) এই নম্বরেও যোগাযোগ করতে পারেন।