কবি হিবা কামাল আবু নাদাকে

শাহনাজ পারভীন :

হে মানবতার কণ্ঠস্বর! তোমাকেই বলছি
এই যে গাজার উঠোন জুড়ে সাদা রাত
শরতের শিউলি মরে পঁচে গন্ধ ছড়াচ্ছে
অবিকল মানুষেরই মতো
লাশের গন্ধ যেমন বাতাস ভারী করছে
তেমনি শরতের শিউলিও
এখন এখানে একটি শিশুও অবশিষ্ট নেই
এখন এখানে একটি বালিকাও বেঁচে নেই
যে কুড়াতে পারে শরতের ফুল
এখানে এখন এমন প্রেমিক নেই
যার গলে শোভা পাবে পাপড়ি নিযুত
এখন এখানে এমন কোনো কবিও অবশিষ্ট নেই
যিনি লিখে রাখবেন এলিজি প্রেমের।

হে হিবা! প্রাণোচ্ছল কবিতা আমার!
তুমিই তো আমার কবিতার ঘ্রাণ,
তুমিই তো আমার কবিতার প্রাণ,
তোমাকে কেন্দ্র করেই লিখেছি প্রেমের প্রথম পদাবলী।
আমি তোমার প্রেমিক আজীবন।
তুমি কি আগের মতোই দেখতে পাচ্ছো,
আমাকে শুনতে পাচ্ছো ইথারের তারে!
মানুষের পাঁজর খসে পড়ার বিকট আওয়াজ,
বুলেটে বিদ্ধ হওয়া ফিলিস্তিনিদের আর্তচিৎকার?
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে
ইসরায়েলি বিমান হামলায়
শহীদ হয়ে তুমি রেহাই পেয়েছো।

তুমি তো মরে বেঁচে গেছো
তোমার বুকের তাজা রক্তে ফুটছে কোটি কোটি ফুল
যে ফুলের পাপড়িরা দিনকে রাত্রি করছে প্রতিদিন
জীবিতকে মৃত করছে হাজারে হাজার
মুহুর্মুহু বিমান হামলায় হিরোশিমা হয়ে যাচ্ছে গাজার অস্তিত্ব

তুমি কি জেনেছো, সাত হাজার নিহতের মধ্যে
নারী আর শিশুর সংখ্যা চার হাজারের বেশি
তুমি কি দেখতে পাচ্ছো, পুরো প্রান্তর জুড়ে লাশের সাঁড়ি,
আহতের আর্তনাদে গাজার হৃৎপিণ্ড থরথর করে কাঁপছে।

হে নাবা প্রিয়তমা আমার!
তুমি তো জেনেছিলে ইয়াহিয়া, ভুট্টো, টিক্কা খান,
এভাবেই সবুজ বাংলার স্বাধীনতা, মায়েদের সম্ভ্রম, শিশুদের স্বর্গীয় জীবন তছনছ করেছিলো একদিন।
তোমার একমাত্র উপন্যাস
“অক্সিজেন ইজ নট ফর দ্য ডেড”
শারজাহ পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলো
সেদিন কি ভেবেছিলে- এই হবে তোমার শেষ লেখা?

আমি জানি, তোমার দেহের অসংখ্য স্প্লিন্টার
যন্ত্রণায় দগ্ধ করে তুলছে তোমাকে
আমি জানি, তোমার সভ্যতা, স্বাধীনতা, ভিটেমাটির
নির্দয় ধুলিসাৎ তুমি মেনে নিতে পারো নি।
তুমি মেনে নিতে পারো নি-
তোমার পিতামহ, মা, বাবা, ভাই, বোনকে
নিষ্ঠুরভাবে লাশের মিছিলে চলে যেতে
ড্রোন হামলায় অতি নির্মমভাবে হাজার হাজার ফিলিস্তিন নিহত হওয়ার দৃশ্য তুমি মেনে নিতে পারো নি
তুমি তো জানো না, যেদিকে তাকাই শুধু লাশ আর লাশ,
গ্রাম, শহর, নগর, হাসপাতাল এখন মৃত্যুপুরী!
শরনার্থী শিবির, ঘরবাড়ি , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অ্যাম্বুলেন্স, এমনকি আইসক্রিমের আইচবক্স এখন গোরস্থান!

হে প্রিয়তমা কবি আমার!
আমাদের স্বপ্নকে চুরমার করে রক্তের ফোরাত বইছে অবিরাম
আমাদের প্রতিটি বাড়ির উঠোন এখন গণকবর
ভূমি, আলো, বাতাস, জল ছুঁতে আকাশ পাড়ি দিচ্ছি বিরামহীন
এই অবরুদ্ধ উপত্যকা এখন শোকের নগরী, নৃশংস
ধ্বংসযজ্ঞের বুর্জ প্রতিক।

হে প্রিয়তম নাবা, প্রেমিকা আমার!
তুমি তো মরে বেঁচে গেছো
আর আমরা জীবিতরা বেঁচে মরে আছি।