ছোটগল্প : কমরেড মান্তু ও অন্যান্য দুর্ঘটনা

যুবক অনার্য :

মান্তুর নাসারন্ধ্রের শক্তি কম মানে ঘ্রাণ শক্তি কম।কিন্তু সে সম্প্রতি এমন কিছুর গন্ধ পাচ্ছে যা আসলে নাসারন্ধ্রের কাজ নয়।নাসারন্ধ্র বা ঘ্রাণশক্তি বেশি হলেই এই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে – বিষয়টি এরকম নয়।কী সেই ঘ্রাণ যা মান্তু পাচ্ছে সম্প্রতি!

রুনার সংগে মান্তর কথোপকথন এরকম:
রুনা,আজকাল এক ধরনের গন্ধ পাচ্ছি
— কেমন গন্ধ?
ব্যাখ্যা করা মুশকিল তবে পাচ্ছি
— খারাপ গন্ধ নাকি ভালো?স্মেলটা কি মিষ্টি নাকি বোঁটকা নাকি আমার মতন?
তোর মতো মানে?
— আমার মতন যৌনগন্ধা
মান্তু রুনাকে কপট ধমক দেয় কারণ মান্তু জানে রুনার কথার স্টাইলটা এরকমই।তারপর বলে-
বাজে বকিস না।গন্ধটা আসলে এসব শব্দ বা উপমা দিয়ে বুঝানো যাবে না
— মাসিকের গন্ধ না তো?
ধ্যাৎ কী যে বলিস আবোলতাবোল!
— আবোলতাবোল কেনো রে, অনেক ছেলেও কিন্তু মাসিকের গন্ধ পায়
এটা ওরকম বিষয় নয় রে গাধী
— কী রকম বিষয় রে গাধা?
বিষয় খুব জটিল
— তাহলে বাদ দে।মাথা ধরে যাচ্ছে।
ওকে বাদ দিলাম।

রুনার সংগে কথা বললেই রুনা শুধু যৌনতার দিকে টার্ন নেয়।মেয়েটা কেনো এমন করে মান্তু বুঝতে পারে না।

হুমায়ুন আহমেদের একটি বই মান্তু পড়েছিলো বহুদিন আগে।কতো আগে মনে নেই তবে খুব সম্ভবত নব্বইয়ের দশকেই হবে।বইটির কথা মনে হলেই তার নব্বইয়ের দশকের কথা মনে পড়ে যদিও বইটির কাহিনি এখন তার মনে নেই।মান্তুর মনে হয় বইটির কাহিনি যেমনই হোক, রাতভর চাঁদের আলোয় কতিপয় যুবক হাঁটছে রাত্রি যাপন করছে জেগে জেগে পথে পথে- এই রকম একটি ঘটনা সেই নব্বইয়ের দশকেই সম্ভব ছিলো।এখন কি এরকম সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই একদিন সে ঘ্রাণ পাওয়া শুরু করে।সেই ঘ্রাণ এখনো পাচ্ছে সে।পেয়েই চলেছে।

নব্বই দশকের অভিজ্ঞতা নিয়ে মান্তু একটি কবিতা লিখেছিলো।কবিতার শিরোনাম -‘ভালো থাকবার বয়স’।

‘ভালো থাকবার বয়স’

একদা আমাদেরও ভালো থাকবার বয়স ছিলো
আমরা এই যারা যারা ছিলাম
ভালো থাকবার বয়সে- আকাশে উড়িয়ে ঘুড়ি, দেখেছিলো -স্বপ্ন- স্বাধীনতার,বাকাট্টা ঘুড়ির মতো
একদা এইতো সেদিনের কথাই যদি বলি-
ভালো থাকবার বয়সে আমরা মুন্সিবাড়ির
বড়ই গাছটা যেখানে ঘরের ভেতর টিনের চালা ভেদ করে উপরে গিয়েছিলো উঠে
যার ডালে ধরে থাকতো বড়ই একই সংগে কুল
ও গোল রকমের
ঢিল মেরে সেই গাছে বড়ই চুরির কসরতে গিয়েছি কতো বেলা -বাড়ি ফিরে দুপুরে খাবারের কথা ভুলে।
আমরা এই যারা এ দেশে বৈশাখ এলে
পাড়া জুড়ে, জুড়ে দিতাম বৈশাখি মেলা আর রাতভর সাংস্কৃতিক নাচে আর গানে
ছিলো -কী যে উৎসব কী যে উল্লাস
সেইসব নাচগান ঘিরে!
এসবের মধ্য দিয়েই ছিলে এক বিকেলের তুমি
ভালো থাকবার বয়সে এসব সবকিছু থেকে যায়
দংশন করে সুদূর ভবিষ্যৎ তুমুল বদলে দিবে বোলে
দংশন করে আচমকা একদিন কোনোদিন
সবকিছু শেষ হয়ে গেছে – ঘুম ভেঙে দেখবো বোলে
দেখবো -তরুণ শেখ ইশতিয়াক- সে,
কোথায় যেনো গেছে চলে
দেখবো-এক বিকেলের তুমি”উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ”বোলে একদিন সাতসকালে গেছো চলে
একদিন ভালো থাকবার বয়সে আমরা জেনেছিলাম কেউ একজন যার কিনা যেতে হবে বহুদূর হেঁটে ঘুমিয়ে উঠবার প্রাক্কালে
জেনে,আমরাও গিয়েছি বহুদূর হেঁটে
হেঁটে হেঁটে তবু পারি নি দু’দন্ড ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিতে
এ রাষ্ট্র দেয় নি ঘুমোতে
বরং ঝুলিয়ে রেখেছে দেশদ্রোহিতার ট্যাগিং আমাদের কাঁধে–
ভালো থাকবার বয়সে এসব দেখতে হয়
হয় যে দেখতেই – স্মৃতি আর বিস্মৃতির দরোজা জানালা খুলে- আসলে ভালো থাকবার বয়সে আমাদের –
আমরা ছিলাম না মোটেই হয়তো বা ভালো!

কবিতার শেষে লাইনটি অসত্য কারণ নব্বইয়ের দশকে মান্তুদের যাপিত জীবন ছিলো অনাবিল অনবদ্য।কিন্তু কবিতায় তো কিছু ইমাজিনেশন থাকতেই পারে,তাই ওরকম অসত্য বলায় কোনো পাপ নেই।

আজ রাতেও মান্তুর ঘুম আসবে না।রুনার কথা মনে পড়ে।মনে পড়ে ঝিলমের কথাও।ঝিলম বলেছিলো-
তোর কি কোনো প্রব্লেম হয়েছে?
— কী রকম?
এই কিছুক্ষণ পর পর ঘ্রাণ শুঁকার মতো কেমন
কেমন করিস যেনো কিছু একটার গন্ধ শুঁকছিস
— কই, নাতো!

ঝিলমের কাছে মান্তু ঘ্রাণ পাওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে গেছে।ঝিলমকে ওসব বলার কোনো মানে নেই।সে অন্ধ সমর্থক।দল যদি অন্যায় করে সে সেই অন্যায়কেই ন্যায় হিসেবে দেখে।চোরের মা’র বড়ো গলা।

ঘুম না এলে ভাবা ছাড়া আর কিই বা করা যায়।
মান্তু ভাবে- এই যে সে ঘ্রাণ পাচ্ছে,পেয়ে কী লাভ; তার কাছে এর কি কোনো সমাধান আছে?

সারারাত না ঘুমিয়ে মান্তু ক্লাসে যায়।ক্লাসে ঘুম ঘুম ম্যাজমেজে ভাব।ভালোই লাগে না ক্লাস-ট্লাস তবে
রুমকিকে ভালো লাগে।নাট্যাভিনেতা আফজাল হোসেন – এর একটা বই পড়েছিলো ‘পারলে না রুমকি’।রুমকিকে ভালো লাগে কারণ রুমকি একটু লাজুক প্রকৃতির মেয়ে।রুনার মত নির্লজ্জ আর ঝিলমের মতো অন্ধ নয়।কিন্তু ভালো লাগে- রুমকিকে বলা হয় নি।ভালো লাগলেই বলতে হয় কিনা এটা মান্তুর কাছে অজানা।আর ভালো লাগলে বলতে হবে কেনো সেটাও মান্তু ক্লিয়ার নয়।তবে রুনাকে মান্তু একদিন প্রশ্ন করেছিলো:
একটি মেয়েকে যদি বলা হয় তুমি খুব সেক্সি তাহলে সেই মেয়েটা কি মাইন্ড করে নাকি খুশি হয়?
— খুশি হয় কিনা জানি না কিন্তু আমি খুব খুশি হই

মান্তুর কাছে রুনাকে কখনোই সেক্সি মনে হয় নি। মান্তু বলে:
তুই কি আসলেই সেক্সি
রুনার মুখে কোনো লাগাম নেই।বলে:
–আমার চাঁদ দু’টি ছোটো হলে কী হবে আমি কিন্তু অরিজিনাল সেক্সি মাল।তোর মতো গাধা এসব বুঝবে না।তুই একটা ১ নাম্বার গাধা।
মান্তু নিজেকে প্রশ্ন করে- আমি কি আসলেই গাধা?মান্তুর কিন্তু নিজেকে গাধা মনে হয় না।ঘ্রাণ পাওয়ার সংগে গাধা হবার কোনো সম্পর্ক আছে কি?
মান্তু মনে করে- সম্পর্ক নেই।

মান্তু শুধু রুনার সংগেই ঘ্রাণ পাওয়ার বিষয়টা শেয়ার করেছিলো।রুনা আবোলতাবোল কথা বললেও সে সিক্রেসি বজায় রাখতে পারে মেয়েরা যা কখনোই পারে না,তাই রুনাকে শেয়ার করলে কোনো সমস্যা নেই।মান্তু ঘ্রাণের বিষয় আর কারো সংগেই শেয়ার করেনি।এমনকি বাসায়ও কাউকেই বলেনি।কিন্তু ঘ্রাণ শুঁকার জন্য নাক টেনে ছুক ছুক ভঙিমা করার কারণে সে সকলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়:
কিরে তুই এমন করছিস কেনো?
— কই, কেমন করছি?
এই যে নাক টানছিস
— কিছু না। এমনিই।
বোললেও একটু পরেই সে যখন পুনরায় ছুক ছুক করে নাক টানে তখন আবার বলা হয়:
এই যে ছুক ছুক নাক টানলি, অস্বীকার করছিস কেনো, কি হয়েছে বল।

শেষ পর্যন্ত তাকে বলতেই হয় সে কিছুর ঘ্রাণ পাচ্ছে কিন্তু সেই ঘ্রাণ অনির্দেশ্য অনির্বচনীয়। বাসার লোকজন মহা টেনশনে পড়ে যায়।মান্তুকে ইএনটি
ডিপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়।
কাজ হয় না। নিওরোলজি ডিপার্টমেন্টে দেখিয়েও কাজ হয় না।দিন দিন মান্তু অসুস্থ হয়ে উঠছে আরো বেশি- বাসার সবাই এমনটাই মনে করে।কিন্তু মান্তু চিৎকার করে রিয়েক্ট করে : না না আমি অসুস্থ নই আমি আসলেই ঘ্রাণ পাই অজানা অচেনা ঘ্রাণ।মান্তু প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে ওঠে। মান্তু যতো বেশি উত্তেজিত হয় বাসার লোকজন তাকে ততো বেশি মানসিক রোগি ভেবে নেয়।ধীরে ধীরে মান্তু নিস্তেজ হয়ে পড়ে।আজকাল সে কারু সংগেই কোনো কথা বলে না। আপন মনে নিজের মধ্যে ডুবে থাকে যেনো বা ডুবে তলিয়ে যায় অচিন গহীনে।সারাদিন নিজের ঘরে শুয়ে-বসে বই পড়ে আর নাক টেনে ঘ্রাণ নেয়।কী সেই ঘ্রাণ!সেই ঘ্রাণ সম্পর্কে মান্তু শুধু একজনকেই বলেছে।

মান্তু চুল দাড়ি কিছুই শেভ করে না।সেগুলো বেড়ে উঠেছে তো উঠছেই।একদিন মান্তু সারা ঘর পারফিউমের একটি বোতল সম্পূর্ণ স্প্রে করে ফুরিয়ে ফেলে।চিৎকার করে বলে: না না আমি আর ঘ্রাণ চাই না।আমি আর নিতে পারছি না।না-আ-আ-আ…
তারপরই সে ঘরের সমস্ত কাচের জিনিস ভাঙতে থাকে।বাসার লোকজন এসে তাকে নিবৃত্ত করে।এইভাবে আর কতোদিন!মান্তুকে জোর করে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।সাইকিয়াট্রিস্টকে মান্তু শুধু একটি কথাই বলে – স্যার, আমি কিন্তু পাগল নই।আমি যে ঘ্রাণ পাই এটা কিন্তু মিথ্যে নয়।মান্তু কিসের ঘ্রাণ পায় কেমন ঘ্রাণ পায় তা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে চেপে গেলো।তার ধারণা সেই ঘ্রাণের স্বরূপ বললে ডাক্তার তাকে সত্যিকারের পাগল ভেবে বসবেন।
চিকিৎসায় মান্তুর কোনো কাজ হলো না।ক্রমশ শারীরিক ভাবে সে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লো।কিছুই খেতে পারে না।খাবারের মধ্যেও সেই ঘ্রাণ।মান্তুকে হস্পিটালাইসড করা হলো।হস্পিটালাইসড করার ৩ দিন পর ঘটে গেলো এক অদ্ভুত ঘটনা।দুইটি ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক পরষ্পরের ঘরবাড়ি আর উপসনালয় আগুনে পুড়িয়ে দিলো।মান্তু ঠিক এই গন্ধের কথাই রুনাকে বলেছিলো।মান্তু বলেছিলো:
রুনা আমি যে ঘ্রাণ পাচ্ছি তা বিপজ্জনক।খুব বেশি বিপজ্জনক।
— কী রকম?
মানুষেরা হয়ে উঠেছে চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়াশীল
।ভিন্ন মত ভিন্ন ফিলোসফি কেউ সহ্যই করতে পারছে না।অচিরেই ঘটে যাবে ব্যপক কোনো ধ্বংসযজ্ঞ।আর যে বিষয়টি ভিত্তি করে ঘটবে ম্যাসাকার আমি তোকে উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই।তোর ধৈর্য থাকলে বলতে পারি নইলে বাদ দে।
— ধৈর্য থাকবে না কেনো!আমি একটু শরীরবাদী বোলে আমাকে তুই অপদার্থ ভাবিস না।আমি কিন্তু পদার্থই তবে মাংসল আর রসযুক্ত।

মান্তু নিজেই খুব অবাক হয়, যে-মেয়েটা এভাবে অবলীলায় অসভ্য কথা বলে তাকেই কেনো যে এমন সিরিয়াস বিষয় শেয়ার করছে- মান্তু নিজেই বুঝতে পারে না।মানুষের মনোঅরণের রহস্যগুলি সত্যিই অমীমাংসিত।

রুনা
— বল
শুনছিস?
— শুনছি,বলতে থাক
ধর
— কী ধরবো?
থাক ধরতে হবে না
— আচ্ছা তোর ওইটা ধরলাম।
ছিঃ তোর লজ্জা লাগে না?
— না লজ্জা লাগে না।যৌনতা লাগে।

এমন একটি সিরিয়াস মুহুর্তেও রুনা যে কেনো অসভ্যতা করছে- ভেবে মান্তুর একটু রাগ হয়।তবু রাগ পাত্তা না দিয়ে মান্তু বলে:
ধর মসজিদবাদীরা মন্দির আর মন্দিরবাদীরা মসজিদ পুড়য়ে দিলো।পরে আবিষ্কার হলো মন্দির ও মসজিদ উভয়বাদীর উপাস্য মূলত এক ও অভিন্ন।
যদি তাই হয় তাহলে তো right হলে দুটোই right আর wrong হলে দুটোই wrong; vice versa, তাইনা?
— আমার তো তাই মনে হচ্ছে।কিন্তু যারা পুড়ালো তারা তো এসব যুক্তি খাবে না।প্রত্যেকেই বলে আমারটাই right বাকিদেরটা wrong.
এমন ভাবে বোলেই তো পুড়িয়ে দেয়।
— তা বটে।তবে তুই এসব কথা এই ঘ্রাণ ট্রান হাবিজাবি অন্য কাউকেই বলতে যাসনে যেনো।বললেই তোকে খতম করে দেবে- হয় রাষ্ট্র নয় মানুষ।সরি মানুষ না, অমানুষ।
হুঁ, আমি এটা জানি।শুধু তোকেই বললাম।কিন্তু জানিস আমার এসব বলে দিতে ইচ্ছে করে
— বলে তো লাভ নেই
না বলাটাও তো কাপুরুষতা
— তাহলে বল বীরপুরুষ হ আর মর।মান্তু তুমি মরো তুমি কচু খাও
আমি যে মরতেই চাই

উপাসনালয় পোড়ানোর ৩ দিন পর মান্তুকে একদল আততায়ী এসে হাসপাতালেই খুন করে উধাও হয়ে গেলো।

প্রকাশিত :  মঙ্গল বার, ০৯  এপ্রিল ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন