জনাব খবির ও একজন ত্রাতা : যুবক অনার্য 

জনাব খবির কল্পনা করছেন- জনৈক নাগরিক। তার ফেসবুক আইডিতে দেশের পক্ষে একটি পোস্ট আপ্লোড করলেন অনিবার্যভাবে যা চলে গেলো অন্য একটি দেশের বিপক্ষে।মধ্য দুপুর। প্রধান সড়ক  জনৈক সেই নাগরিক হেঁটে চলেছেন প্রধান সড়ক কেটে বেয়ে।কয়েকজন অমানুষক।এই অমানুষদের দেশ ও জনৈক সেই নাগরিকের দেশ এক ও অভিন্ন।অমানুষদের হাতে লাঠি।জনৈক সেই নাগরিককে পিটানো শুরু করলো।এবং পিটিয়েই চললো।হাতের লাঠি টুকরো হয়ে গেলো। তবু পিটুনি থামছে না।জনৈক নাগরিক নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলো।কতিপয় সেই অমানুষ সিগ্রেটের ধোঁয়া উড়িয়ে “আমি তো মরে যাব আমি তো মরে যাবো, চলে যাবো, রেখে যাবো সবই আছোস কি কেউ সঙ্গের সাথী, সঙ্গে নি কেউ যাবি? আমি মরে যাব” গাইতে গাইতে নির্বিকারভাবে হেঁটে হেঁটে অদৃশ্য হয়ে গেলো।সমগ্র দেশ কিংবা দেশের সমগ্র মানুষ প্রকাশ্য দিবালোকে এরকম একটি খুন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো এরকম একটি খুন হতে দিলো সমগ্র দেশ কিংবা দেশের সমগ্র মানুষ টু শব্দটিও করলো না।
জনাব খবির কল্পনা করছেন- একটি কক্ষ।একটি নারী।উন্নত বক্ষ।ভারী নিতন্ব।চিতালো ঠোঁট (চিতালো বলে কোনো শব্দ আছে কিনা খবির মনে করতে পারছেন না)।নারী আর খবির মুখোমুখি।জীবন বাবু ও বনলতা সেন স্টাইল।গল্প শুরু হলো।চা সিগ্রেট।যে এই বক্ষোন্নত নারী মিহিন তলপেট আর আরো আরো নান্দনিক জিনিসপাতি,তার চিতালো ঠোঁট, ঠোঁটে সিগ্রেট।গল্প চলমান শিল্প সাহিত্য ফিল্প চিত্রকলা আরো আরো কতো সব কলাটলা- চলছেই।এই নারী যার নিতন্ব ভারী নির্জন উরু,খবির কি ছুঁয়ে দেবে তাকে- ধীরে ধীরে অনাবৃত করে ফেলবে যাবতীয় তার,আর ছিবড়ে ফেলবে জৈবিক ছুরি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে!
খবির কল্পনা করছেন- জনৈক জাজ।তার ল্যান্ড ফোন বেজে উঠলো।জনাব জাজ কয়েক হাজার বার জ্বি  স্যার জ্বি স্যার বোলে রিসিভার রেখে দিলেন।।প্রতি বার জ্বি স্যার জ্বি স্যার বলার আগে ওপাশের কথা ছিলো:
   অমুক মার্ডারার আমাদের লোক,ছেড়ে দাও।
   অমুক প্রতিবাদকারী আমাদের লোক নয়,
   ঝুলিয়ে দাও।
   অমুক চাঁদাবাজ ও ঋণ  খেলাপি আমাদের
   লোক,ছেড়ে দাও।
   অমুক ফেসবুক আক্টিভিস্ট আমাদের লোক নয়,
   ঝুলিয়ে দাও।
   অমুক খুনি শিক্ষার্থী আমাদের লোক, ছেড়ে দাও।
   অমুক প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থী আমাদের লোক নয়,
   ঝুলিয়ে দাও।
   অমুক শেয়ার বাজার কেলেংকারির মাস্টারমাইন্ড,
   অমুক ধর্ষক শিক্ষক আমাদের লোক, ছেড়ে দাও।
   অমুক প্রতিবাদকারী শিক্ষক আমাদের লোক
   নয়,ঝুলিয়ে দাও।
   অমুক….অমুক….
এই শুনছো,এই
জনাব খবির শুনতে পাচ্ছেন না তাই জবাবও দিচ্ছেন না
এই, শুনছো, এই
খবির শুনতে পাচ্ছেন না
এই শুনছো,এই
তৃতীয় দফায় ধ্যান ভগ্ন হলো।
হ্যাঁ শুনছি, বলো
বাজারে যেতে হবে, মনে আছে?
হ্যাঁ,আছে।
খবির ব্যাগ নিয়ে বাজারে গিয়ে মাছের কাটা কিনে নিয়ে এলেন।মাছের কাটা যে কেনা গেলো এও এক পরম সৌভাগ্য।খবিরপত্নীও বড়োই খুশি।আহা মাছের কাটা- অমৃত।কিছুদিন পর হয়তো মাছের কাটা কেনাও সম্ভব হবে না।মাছের কাটা- আহা কী যে অমৃত!
মাছের কাটা রান্না করে খেয়ে খবিরপত্নী ঘুমিয়ে পড়েন।
খবির কল্পনা রোগে ডুবে যান।এটা কি আসলেই রোগ? জনাব খবির কল্পনা না করলে লিখবেন কীভাবে। যার কল্পনাশক্তি যতো বেশি সে ততো বড় লেখক।
খবির কল্পনা করেন – বিদেশি ফোনে একজন দেশি গায়ক দেশের সর্বচ্চ পদক ছিনিয়ে নিলেন।
যথারীতি সমালোচনার ঝড় কিন্তু অই দেশি গায়ক যিনি বিদেশে ফোন করেন,তার কাচা আধা পাকা ও পাকা একটি বালও কেউ ছিড়তে পারলো না।
কল্পনা চলছেই- তৃতীয় শ্রেণির একটি উপন্যাস লক্ষ লক্ষ কপি বইমেলায় সেল হয়ে গেলো মেলা শেষ হলেও সেই যে উপন্যাস- তৃতীয় মানের- সেল হতেই থাকলো।প্রকাশকগণ খুঁজতে শুরু করলেন তৃতীয় শ্রেণির উপন্যাস, তাই খুঁজতে শুরু করলেন তৃতীয় শ্রেণির লেখক। তৃতীয় শ্রেণির উপন্যাসে তৃতীয় শ্রেণির লেখকে আর রুচির দুর্ভিক্ষে দেশ ছেয়ে গেলো।পাঠকগণও আজ বুঝি বড্ড তৃতীয় শ্রেণির!এর মাঝ মধ্যিখান দিয়েই খবির কল্পনা করেন- জনাব খবির প্রথম শ্রেণির একটি লিখে ফেললেন উপন্যাস।কিন্তু কোনো প্রকাশকই রাজি নন খবিরের উপন্যাস প্রকাশে। জনাব খবির কিস্তিতে লোন নিয়ে ছেপে ফেললেন প্রথম শ্রেণির উপন্যাস। উপন্যাসের নাম- একটি দেশের মৃত্যুতে।বইটি এক কপিও বিক্রি হলো না। তাই খবির একটি সুবিধাজনক কল্পনা বেছে নিলেন। কল্পনা করলেন – বইটি নিষিদ্ধ হলো। বই নিষিদ্ধ মানেই হাজার হাজার কপি সেল।’একটি দেশের মৃত্যুতে’ বেস্ট সেলার হলো।মাছের কাটার পরিবর্তে মাছ অধিকন্তু মাংসও জুটে গেলো খবিরের রুগ্ন সংসারে।
এই শুনতে পাচ্ছো, এই
রাত ভোর হয়ে গেছে,কল্পনা চলছেই।
১ বারের ডাকে ধ্যান ভগ্ন হলে সেই ধ্যান খুবই দুর্বল, তাই খবির ১ বারের ডাকে সাড়া দিতে নারাজ।
মিনিমাম ৩ বার হওয়া চাই
৩ বারের পর তিনি বললেন – শুনছি,বলো।
মনে আছে ছেলের ইশকুল থেকে বলেছে ছেলেকে ডিভাইস দিতে হবে?
হ্যাঁ, আছে।
তাহলে চুপ করে আছো কেনো! ক’দিন আগেই তো বলেছি।সাড়াশব্দ নেই কেনো?
কেনো নেই তুমিও জানো।
জানি, তো?
তো আবার কি মাছের কাটা জোটাই মুশকিল
ডিভাইস জুটবে কি করে!
তাহলে কি ইশকুল বাদ?
হুঁ।
 মাছের কাটা খেয়ে একটা জীবন পার করে দিতে খবিরপত্নীর আপত্তি নেই কিন্তু ছেলের লেখাপড়া বাদ মেনে নিতে তার কষ্ট হয়।
নীরবে তিনি অশ্রু ঝরান।গরীবের জন্য লেখা পড়া নয়।
জনাব খবির তার ছেলেকে নিয়ে কল্পনা করতে চাইলেন।
তিনি দেখলেন( কল্পনায়) অজস্র বালক ডিভাইস না পেয়ে ইশকুল বাদ দিয়ে দিলো।দেশে লেখাপড়া না করার দুর্ভিক্ষ আর মহামারি লেগে গেলো। দেশ অচল হয়ে পড়লো।
কল্পনা চলছে- হঠাৎ একজন এলেন ত্রাতা হয়ে।
তিনি দেশকে আবার সচল করে তুললেন।দেশে শান্তি ফিরে এলো।
খবিরের ছেলে ইশকুল বাদ দিয়ে দিলো।সমস্যা নেই, একজন ত্রাতা তো আসছেনই।
আপাতত দেশ ত্রাতাহীন। সমস্যা নেই, একজন ত্রাতা আসবার আগে ত্রাতাহীন হওয়াই তো নিয়ম।
একদিন খবির তার স্ত্রী  ও ছেলে সেই ত্রাতার আবির্ভাবের উদ্দেশে মিছিলে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে এলেন।
ত্রাতা আসার আগ পর্যন্ত দেশটা দেশের মধ্যে থাকবে তো!