শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব

মিজানুর রহমান রানা :

শিশু বয়সে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ একমাত্র ইসলাম ধর্মই হচ্ছে মানুষকে ইভটিজিং, যেনা, পাপ, পঙ্কিলতা, অন্যায়, অবিচার তথা দুর্নীতি, দুঃশাসন থেকে মুক্ত রাখার একটি সুগঠিত বর্ম। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মানুষকে লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতার পথ রুদ্ধ করে সুশৃঙ্খল ও ন্যায়ের পথে ধাবিত করে।

ইসলাম ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি। আর সেই শান্তি স্থাপনের কথা যদি আমাদের নতুন প্রজন্মকে ভালোভাবে রপ্ত করানো যায় বা জীবনের প্রারম্ভেই শিশুদেরকে শিক্ষা দেয়া যায় তাহলে মানুষে মানুষে হিংসা, দ্বেষ, অশান্তি, মারামারি, খুনাখুনি, ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ মারাত্মক অপরাধ করা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে অনায়াসেই।
পবিত্র আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘পড়ো তোমার রবের নাম, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে, পড়ো আর তোমার প্রভু মহামহিমান্বিত যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না’ (সূরা আলাকের ৫ আয়াত)।

উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, রব বা প্রভুর নাম পড় এবং পরবর্তীতে আরো বলা হয়েছে, প্রভু মহামহিমান্বিত এবং তিনি কলমের সাহায্যে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা মানুষ জানতো না।

মানুষের জানা-অজানা সবকিছুই মহান প্রভু আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। শিশুদেরকে আমরা যদি সেই জন্যে শিশুকাল হতেই ধর্মীয় শিক্ষাকে কাগজ-কলমে পুরোপুরিভাবে শিক্ষা দিতে পারি তাহলে শিশুরা একজন মহান প্রতিপালকের কথা জানবে। তাঁর ক্ষমতা, শক্তি এবং মানবীয় জীবনের পাপ, পূর্ণ, হিসাব-নিকাশ প্রভৃতি সম্পর্কে তারা অবগত হবে। ফলে কোন্টা ন্যায়, কোন্টা অন্যায় এবং কোন কাজ করলে সমাজের উপকার হবে কোন্ কাজ করলে সমাজের অপকার হবে সেটা তারা বিবেচনা করে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।

শিশুদেরকে যদি শিশু বয়সে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যায় তাহলে তারা ভালো-মন্দ সম্পর্কে অবগত হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার ভয়ে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে সচেষ্ট হবে। সুতরাং আমরা যদি আমাদের শিশুদেরকে বাল্যকাল হতেই ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করি তাহলে আমরা আমাদের শিশুদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত, জ্ঞানী, ধার্মিক ও ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন এবং সত্যকে আঁকড়ে ধরা এবং মিথ্যা ও অন্যায়কে পরিহার করার শিক্ষা দিতে পারব। মহান আল্লাহ্্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন যে, যদি আল্লাহ্র সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করা হয় তাহলে জ্ঞানী হওয়া যাবে।

তিনি পবিত্র কোরআনে আরো ঘোষণা করেছেন, ‘আসমান ও জমিনে এমন কোনো গোপন রহস্য নেই যে যা সুস্পষ্ট কোরআনে উল্লেখ নেই’ (সূরা নামল: আয়াত ৭৫)।

জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে আরো বলা হয়েছে, ‘যারা জানে (জ্ঞানী) আর যারা জানে না (জ্ঞানী নয়) তারা কি সমান?’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৯)

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘জ্ঞান হচ্ছে মুমিনের জন্মগত অধিকার, যেখানে এটা দেখ, গ্রহণ করো।’ ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্যে জ্ঞানচর্চা ফরজ বা অবশ্যকর্তব্য।’ – ইবনে মাজাহ।

অর্থাৎ পুরুষের যেমন শিক্ষার অধিকার আছে, তেমনি নারীরও শিক্ষার অধিকার আছে, যা উভয়ের জন্য অবশ্যই পালনীয়।

শিশুরা যদি বাল্যকালেই এসব ধর্মীয় শিক্ষা প্রকৃতভাবে গ্রহণ করে তাহলে সেই শিক্ষা কখনোই বিফলে যায় না। কারণ মানুষ ধর্মকে সবচে’ বেশি মান্যগণ্য করে এবং ধর্মের আলোয় আলোকিত শিক্ষাকেও মানবসমাজে বিতরণ করার চেষ্টা করে, মানুষের জন্যে হিতকর কাজ তথা মানবকল্যাণে সচেষ্ট থাকে। তাই প্রতিটি মানুষকে জ্ঞান অর্জনের জন্যে চিন্তা ও গবেষণা করা প্রসঙ্গে পাক কোরআনে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ্ নিজে সর্বজ্ঞ এবং মহাজ্ঞানী, তাই তিনি জ্ঞানীদের ভালোবাসেন, জ্ঞানীদের গবেষণার সহযোগিতায় তার কুদরতির হাত বাড়িয়ে দেন। কোরআনে সাড়ে সাতশ’ বিজ্ঞান বিষয়ক আয়াত দিয়ে সাড়ে সাতশ’ বিশাল বিশাল বিজ্ঞানগ্রন্থ রচনা করা হলে দেখা যাবে এ পর্যন্ত আবি®কৃত এবং অনাবি®কৃত বিজ্ঞানের কোনো সূত্রই এর থেকে বাদ পড়বে না। সৃষ্টিতত্ত¡, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষশাস্ত্র, রসায়ন, পদার্থ, খনিজ, উদ্ভিদ, প্রাণী, কৃষি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল সূত্র হলো আল কোরআন।

আজকের পরাশক্তি আমেরিকা-ইউরোপ যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের আঁধারে হাবুডুবু খাচ্ছিলো, তখন মুসলমানদের হাতে ছিলো জ্ঞানের মশাল, কোরআন ও হাদিসের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েই মুসলিম বিজ্ঞানীরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় নিবেদিত ছিলেন। মুসলিম বিজ্ঞানী মাশাআল্লাহ্ ও আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল নিহাওয়ান্দি জ্যোতিষ্কমণ্ডলী নিরীক্ষণ করে আল মুস্তামান নামে নিখুঁত ছক বানান। বিজ্ঞানী আবুল হাসান দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উদ্ভাবক। বিজ্ঞানী ইবনে ইউসুফ পেন্ডুলামের দোলনের সাহায্যে সময়ের পরিমাপ স্থির করে ঘড়ির উদ্ভাবন করেন।

আজকের সমাজে বলা হয়ে থাকে, তথাকথিত ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে জঙ্গী বানায়। এবার দেখুন উপরে উল্লেখিত মনীষীরা কি প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে জঙ্গী হয়েছে? উত্তর হবে, না। বরং তাঁরা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ এবং তৎসম্পর্কিত গবেষণা ও লব্ধ জ্ঞানের দ্বারা পৃথিবীতে তাঁদের প্রকৃত শিক্ষার অমূল্য স্বাক্ষর রেখে গেছেন, যা যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষের মনে কালোতীর্ণ হয়ে থাকবে।

আধুনিক যুগেও আমরা আমাদের সন্তানদের যদি ধর্মীয় শিক্ষা এবং ধর্মের আলোকে জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করাতে পারি তাহলে আমাদের সমাজের ক্রমোন্নতি ঘটবে নিঃসন্দেহে। বলা হয়, পোশাকে আধুনিক হলে চলবে না, মনকেও আধুনিক ও প্রকৃত শিক্ষায় উজ্জ্বল করতে হবে। আর সেই উজ্জ্বলতা সব ধর্মের মাঝেই বিদ্যমান আছে। হয়তো বিশেষ বিশেষ সময়ে আমাদের স্বার্থপরতার জন্যে ধর্মের উজ্জ্বল দিকটি গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করি। বরং ধর্মকে বর্ম করে স্বার্থ হাসিল করতে চেষ্টা করি। কোরআন-হাদিসকে বিজ্ঞানাগারে গবেষণা করে বিশ্বমানবতার কল্যাণে কাজে লাগাতে পেরেছি কয়জন? নিজেদের সন্তানদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় দীক্ষিত করতে হলে শিশুকাল থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা এবং ধর্মের নির্দেশিত পথে গবেষণা, জ্ঞানচর্চা, লেখাপড়ার সুযোগ প্রদান করলে সমাজে নানা অশান্তি যেমন খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ সব অপরাধ কমে যাবে।

প্রকাশিত :   রোববার, ১৪  এপ্রিল ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন