সাম্য’র বাংলাদেশ ভ্রমণ : যুবক অনার্য

ছোটগল্প

সাম্য আজ প্রথমবারের মতো পা রাখবে বাংলাদেশে।জনাব সিনহা, সাম্য’র বাবা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন এয়ারপোর্টে। জনাব সিনহা অসুস্থ তাই যাওয়া সম্ভব হলো না।

বাবাকে সাম্য জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।বাবাও সাম্য’র মাথায় কপোলে চুমু খেলো।

সাম্য
জ্বি বাবা
ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে রেস্ট কর।বিকেলে বেরুবো
ওকে,বাবা।

জনাব সিনহা বিছানায় শুয়ে পা দোলাচ্ছেন।ভাবছেন- সাম্যটা বড়ো হয়ে গেলো।সাম্য’র ডেলিভারি হয়েছে আমেরিকায়। চাইলে বাংলাদেশেও হতে পারতো। সাম্য’র মায়ের ইচ্ছেয় আমেরিকায় হয়েছে। সিনহা চেয়েছিলো বাংলাদেশেই হোক।কিন্তু এলিসের ইচ্ছে এড়িয়ে যাওয়া সিনহার জন্য সহজ নয়। তবে সিনহার ভাবতে ভালো লাগছে যে সাম্যকে এলিস দেশে আসতে দিয়েছে। সাম্য’র বয়স যখন ৩ বছর তখনই ওরা সেপারেশনে চলে গিয়েছিলো।তারপর থেকে সিনহা বাংলাদেশেই আছে।আমেরিকা যাওয়া হয় নি আর।

ভাবতে ভাবতে সিনহা ঘুমিয়ে পড়েছিলো।সাম্য আলতো করে কপালে হাত ছোঁয়ালো আর সংগে সংগেই সিনহার ঘুম ভেংগে গেলো। সাম্য’র দুই হাত সিনহা বুকের উপর অনেকক্ষণ চেপে ধরে রাখলো।তারপর দুই হাত গালে ছোঁয়ালো। মন ভরে দুই হাতের ঘ্রাণ নিলো।সাম্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে। বাবারা বুঝি এরকমই ‘বাবা বাবা’ হয়!

সাম্য দীর্ঘ জার্নি করে এসেছে।আজ একটু রেস্ট প্রয়োজন।বেশি ঘোরাঘুরি না করাই উত্তম।বাড়ির পাশেই ঢাকেশ্বরী মন্দির।সাম্যকে মন্দিরটা দেখিয়ে তারপর কিছুক্ষণ হেঁটে বাসায় ফিরে এলো।

সাম্য ওর রুমে বই পড়ছে। বইটির নাম ‘একটি দেশের মৃত্যুতে’।কিন্তু বইয়ে আজ মন বসছে না। ফেসবুক ইউটিউবও ভালো লাগছে না। আম্মুকে খুব মিস করছে। এই প্রথম আম্মুকে ছেড়ে রাত্রি যাপন।কখন ঘুমিয়ে পড়লো সাম্য- মনে নেই।ঘুমানোর ঠিক আগ মুহুর্তটা মানুষের কখনোই মনে থাকে না।

সিনহা প্ল্যান করে রেখেছে এই ক’টাদিন সাম্যকে কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে কীভাবে বাপ-বেটা কোয়ালিটি টাইম পাস করবে।বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা নিয়ে যাক।কিন্তু হাতে সময় কম।প্রথমে সাম্যকে নিয়ে যাওয়া হলো গ্রামের বাড়ি। ছোটো ছোটো ছেলেগুলি সম্পূর্ণ উলংগ হয়ে পুকুরে ঝাপ দিয়ে স্নান করছে- গ্রামের এই দৃশ্যটি সাম্য’র ভালো লাগলো সবেচেয়ে বেশি।শহরের মতো গ্রামের মেয়েগুলি পোষাক-আশাকে অতোটা খোলামেলা নয়- এটা ঠিক ভালো নাকি স্বাভাবিক নাকি এটাই সঠিক – এ নিয়ে সাম্য কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারলো না।

গ্রাম থেকে ফিরে সোজা কক্সবাজার – বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। সাম্য খুব প্রাউড ফিল করলো।যদিও জন্মসূত্রে সাম্য বাংলাদেশের নাগরিক নয় কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তার মন কেমন কেমন করে।রক্তের/নাড়ীর টান!

বিগত ১০/১২ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সমূহ যেমন পদ্মা সেতু মেট্রোরেল ইত্যাদি সাম্যকে জনাব সিনহা ঘুরিয়ে দেখালেন।সাম্য লক্ষ্য করেছে তার বাবা এসব উন্নয়নে খুব গদগদ।সাম্য যে উন্নয়নে খুশি হয়নি তা নয় কিন্তু সাম্য খুব বুঝতে পারছে বাংলাদেশের সমস্যা, drawbacks নিয়ে তা বাবা কিছুই বলছে না।কেমন যেনো এড়িয়ে যাচ্ছে।সাম্য বুঝতে পারছে না সমস্যার কথা এড়িয়ে বাবার লাভটা কি, নাকি বাবা বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশে কোনো সমস্যা নেই!

বাবা কষ্ট পাবেন- ভেবে সাম্য বাবাকে আর ঘাটায় না।

এর মধ্যে সাম্যর র রুটিনে পরিবর্তিন এলো।প্রথম প্রথম সে ১১ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তো।কিন্তু ক’দিন ধরে রাতের বেলা ঘুম আসছে না।সারারাত জেগে থেকে ভোরে যখন ফজরের আজান হয় তখন ঘুমোতে যায়।আজানের অর্থ না বুঝলেও ফজরের সময় আজান শুনতে তার খুব ভালো লাগে।

রাত জেগে আর কী করা।বই ফেসবুক ইউটিউব। যে সকল চ্যানেলে বাংলাদেশের অনুষ্ঠান হয় এখন সে সেসব চ্যানেলই প্রেফার। বাংলা গান বাংলা নাটক ফানি ভিডিও ম্যাগাজিন বাংলাদেশের রাজনীতি মিটিং মিছিল রাজপথ।হিরো আলম নামে একজন অদ্ভুত পিকিউলিয়ার লোককেও দেখা গেলো। এই ভদ্রলোক বেশ troll এর শিকার হচ্ছেন কিন্তু তিনি গায়ে মাখছেন না।ধৈর্য আছে বটে।কয়েকটি চ্যানেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে অনুষ্ঠান দেখে সাম্য কেমন যেনো ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।তবে একটি নিউজ পড়ে/দেখে সাম্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। ফেসবুক আইডিতে একজন স্টুডেন্ট একটি পোস্ট আপ্লোড করায় তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।সাম্য বুঝতে পারলো- এদেশে কথা বলা নিষেধ।যে-কোনো সত্য উচ্চারণ এখানে অপরাধ। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সাম্য বাবাকে জিজ্ঞেস করে বসলো – বাবা এটা কীভাবে সম্ভব সত্য বলার কারণে একজন স্টুডেন্টকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো!

বাবা বললেন – ওসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা।যেমন বলছিস যেমনটা দেখেছিস- এর নেপথ্যে আরো অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে – এতোসব কিছু তুই বুঝবি না বাবা। এসব বাদ দে সাম্য কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো।নিজেকে সংযত করলো।সাম্য বেশ বুঝতে পারছে বাবা কেনো বলছেন- ওসব ব্বিচ্ছিন্ন ঘটনা।দেশে বাবার সংগে বাবার বাড়িতে আর এক মুহুর্তও নয়।সময়ের আগেই সাম্য চলে যাবে।নেক্সট উইকে ফ্লাইট।জনাব সিনহা বুঝতে পারছে না সাম্য কেনো আগেভাগেই চলে যাচ্ছে কিন্তু সাম্যকে ঘাটাতেও সাহস পেলো না।

সাম্যর সেই ঘোর এখনো কাটেনি। সে তার ফেসবুক আইডিতে এক বাক্যে একটি পোস্ট আপ্লোড করলো- “প্রিয়তমা স্বদেশ আমার, তুমি কি নিজের ভাষায় বলতে পারো কথা গাইতে পারো গান!”

দুইদিন পর। সাম্য বাসার সামনেই ফুটপাতে পায়চারি করছিলো।আম্মুর জন্য কী কী কিনবে ভাবছিলো।এমন সময় একটি ভক্সওয়াগন এসে থামলো সাম্য’র ঠিক এক গজ দূরে। গাড়ি থেকে মুহুর্তে নেমে এলো চারজন যুবক। চারজনের চোখেই কালো সানগ্লাস।অসাধারণ দক্ষতায় সাম্য’র মুখে রুমাল বেধে উধাও হয়ে গেলো ভক্সওয়াগন। ৪৮ ঘন্টা পর বুড়ি গঙ্গায় ভেসে উঠেলো সাম্য’র লাশ।

সাম্যদের ৬ তলা বিল্ডিংয়ের সামনের সড়কে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটি লাশ। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা। লোকটির নাম সিনহা চৌধুরী। পুত্রশোক সইতে না পেতে ছাদ থেকে লাফ দেবার পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন।

যা হবার হয়ে গেছে। জনাব সিনহা বেঁচে থাকলে প্রশ্ন করা যেতো- বুড়িগঙ্গায় ভেসে উঠেছিলো সাম্য’র লাশ- এটাও কি ছিলো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা!

প্রকাশিত :   সোমবার, ১৫  এপ্রিল ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন