‘হুজুগে বাঙালি’ বদনাম কবে ঘুচবে?

মিজানুর রহমান রানা :

জাতি হিসেবে আমরা যে হুজুগে বাঙালি তা প্রমাণ করার আর অপেক্ষা রাখে না। কারণ ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এর ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করে আসছি বলে, এক সময় বাঙালির উপাধি হয়ে যায় ‘হুজুগে বাঙালি’।

আমরা হুজুগে পড়ে গুজবে বিশ্বাস করি এবং তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সংক্রমিত করে দেই। চিলে কান নিয়ে গেছে মনে করে চিলের পেছনে দৌড়াই। সত্য-মিথ্যা যাচাই করি না। বাতাসের ফিসফিসানি শুনেও আমরা মনে করি ঝড় এসেছে। তাই মনে করেও দৌড়াতে দৌড়াতে হয়রান পেরেশান হয়ে পড়ি।

কেউ কিছু বললেই তা অকপটে বিশ্বাস করতে থাকি। আমাদের ইনবক্সে যদি কেউ লিখে পাঠায়, এই বাক্যটা শেয়ার করলে তুমি বিপুল পরিমাণ উপকার পাবে, আর না করলে তোমার ক্ষতি হবে, তাহলে আমরা বাছবিচার না করেই তা ছড়িয়ে দিতে থাকি। সেটা মিথ্যা না সত্যি তা যাচাই করার জ্ঞান আমাদের কিঞ্চিত কম আছে।

কেউ যদি অন্য কারো ছবি দিয়ে বলে এটা লঞ্চডুবির সুমন বেপারীর ছবি। তাহলে অন্যের ঘাড়ে দোষ দিয়ে তা ভাইরাল করি। আসলে তা সত্য কি মিথ্যা তা যাচাই করার সময় কম আমাদের। তাতে কার লাভ, কার ক্ষতি হোক তাতে আমাদের কিইবা যায় আসে!

এদিকে বাংলার এক মেধাবি সন্তানের মুখে করোনার টিকা আবিস্কারের খবর শুনে আমরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে থাকি। কারণ আমাদের দেশপ্রেমে ভাটা পড়েছে। আমরা দেশের ঠাকুর ফেলিয়া বিদেশের কুকুরে নমস্কারে বিশ্বাসী।

আমরা আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর মৃত্যুর খবরে তিরস্কার করি। উল্লাস করি। গালি দেই। এদিকে যে বিএনপি-জামাতের নেতাদের মৃত্যু শুরু হয়েছে সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। জেনে রাখা ভালো, মৃত্যু সবার জন্যে সত্য। মৃত্যু কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এটা সবার জন্যেই সমভাবে প্রযোজ্য। কেউ মৃত্যুর বাইরে নয়। তবুও কেনো মৃত্যু নিয়েও আমরা হুজুগে মেতে উঠি?

আমরা চাঁদে অনায়াসে মানুষের ছবি দেখতে পাই। কিন্তু আমাদের ঘরের মানুষের দুঃখ, কষ্ট-বেদনা, সুখ-দুঃখ দেখতে পাই না। আমাদের সন্তানদের সাফল্যকে তিরস্কার করি। পুরো পৃথিবীর মানুষ আজ এক করোনার ভয়াল থাবায় জর্জরিত। মানুষ মরছে অবিরত। তবুও আমাদের হুঁশ নেই। আমরা মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় বেরুই। তারপরও বলি, করোনা-টরোনা কিছুই নেই। সরকার আমাদের ঘরবন্দি করে রাখতে চায়। বাইরে বেরুই। চায়ের দোকানে আড্ডা মারি। সচেতনতার বালাই নেই।

হায় হুজুগে বাঙালি, তোমাদের এ খ্যাতির (!) বিড়ম্বনা কবে ঘুচবে?