জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি

মো.জাকারিয়া খান জাহিদ,স্টাফ রিপোর্টার :

জামালপুরে যমুনাসহ শাখা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এক মাস ধরে চলা বন্যায় পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

এদিকে, গতকাল (২৪ জুলাই) শুক্রবার সকালে মাদারগঞ্জ উপজেলার নাদাগাড়ী এলাকায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০০ ফুট ধসে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাইদ জানান, বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ও জগন্নাথগঞ্জঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

তবে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি না পেলেও আগের অবস্থাতেই রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাইসহ শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

টানা তৃতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির ফলে এক মাস ধরে পানিবন্দি রয়েছে জেলার ১০ লাখ মানুষ। দুর্গত এলাকায় খাদ্য, শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যের চরম সংকট চলছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা ত্রাণে দুর্গত এলাকার চাহিদা মিটছে না। নলকূপ বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুর্গতদের। এ ছাড়া দুর্গতদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, জেলার সাত উপজেলার আটটি পৌরসভা ও ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে জেলার ১৩ হাজার হেক্টর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, গো-চারণভূমি, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গ্রামীণ হাটবাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ও বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে,গতকাল(২৪ জুলাই) শুক্রবার সকালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনয়নের নাদাগাড়ী অংশে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০০ ফুট ধসে অন্তত ১০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করে ৫০টি বসতঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, তৃতীয় দফার বন্যায় যমুনা নদীর পানি গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হঠাৎ করে ব্যাপক হারে বেড়ে গেলে গতকাল (২৪ জুলাই) শুক্রবার ভোরে বাঁধের নাদাগাড়ী অংশটি বিকট শব্দে ভেঙে যায়। মুহূর্তেই প্রবল পানির স্রোতে ওই এলাকার ৫০টি কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ভাঙনের শিকার হয়।