মানুষ মানুষের জন্যে

সম্পাদকীয়

কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা আমাদের চোখের সামনে আমরা ঘটতে দেখি, যা’ আমাদের হতবাক করে দেয়। বিচিত্র মানুষের জীবন! কোনো নারীর গর্ভে সন্তান এসেছে শুনলে সকলেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। আবার এমন কিছু কিছু পরিস্থিতি আমাদের চোখের সামনে এসে দাঁড়ায় যা আমাদের কাঁদিয়ে ছাড়ে। যদি এমন কোনো নারী যে কিনা ভবঘুরে, রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে সন্তান প্রসব করেছে তাহলে সেই পরিস্থিতি আমাদের কীভাবে মেনে নিতে হয়! তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড়ে। প্রিয় সময়ে ‘পঞ্চগড়ে সেতুর নিচে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান প্রসব’ ঘটনাটি আমাদের জন্যে আশ্চর্যের একটি ঘটনা।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, পঞ্চগড় জেলা শহরের করতোয়া সেতুর নিচে দুপুরে সন্তান প্রসব করেন। সেই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন। এতে আমরা পরিস্কার বুঝতে পারছি যে, তার দেখাশোনার মতো কেউ নেয়। অর্থাৎ তার কোনো অভিভাবক হয়তো তার কোনো খোঁজখবর করছে না। তাছাড়া কোনো অস্ত্রপচার ও কারো সাহায্য ছাড়াই ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে।

আমরা সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি যে, সন্তান প্রসবের সময় তার কাছাকাছি কেউ ছিলো না। মহিলা যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো। বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পর নদীতে পাথর উত্তোলন করে আসা কয়েকজন লোক তাকে দেখতে পায়। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন তারা। খবর পেয়ে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওই নারী ও তার সন্তানকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এটা অত্যন্ত ভালো কাজ হয়েছে, একজন অসহায় মহিলার সাহায্যের জন্যে এলাকাবাসী ছুটে এসেছে এবং পুলিশকে খবর দিয়ে তাকে সাহায্য করেছে। যদি সেদিন মানুষ এগিয়ে না আসতো এবং সাহায্য না করতো তাহলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যেতে পারতো। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে জনগণ অনেক সময় দূরে থাকে। কারণ, বেহুদা কেউ হাত দিয়ে দায়িত্ব নিয়ে ফেঁসে যেতে চায় না। এ কারণে মানুষ ভয় পায়।

এখানে আরেকটি কথা বলা দরকার যে, ওই মহিলা যখন শহরে ঘুরে বেড়াতো তখন সবারই চোখে পড়েছিলো যে, মহিলাটি গর্ভবতী। তার নিকট আত্মীয় কেনো তাকে রক্ষার জন্যে এগিয়ে আসেনি সেটাই ভাবার বিষয়। তখন তার পরিচর্যার দরকার ছিলো এবং সাহায্যে হাসপাতালে অথবা বাড়িতে রেখে তার সেবা যতœ করা দরকার ছিলো। কিন্তু কেউ তার সাহয্যের জন্যে এগিয়ে আসেনি। আর তাই পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেতুর নিচে সন্তানের জন্ম দিয়েছে। তবে আশপাশের মানুষজন দেখে তার পুলিশকে খবর দিয়েছে বলে মহিলাটি রক্ষা পেয়েছে। মানুষ তো মানুষের জন্যেই। তাই মানুষ অন্তত এই টুকু দায়িত্ব পালন করে মানুষের পরিচয় তো দিয়েছে!