খিলক্ষেতে যুবকের লাশ

সম্পাদকীয় …

শিক্ষিত বাইশ বছরের যুবক মারা যাওয়া মানেই একটি সম্ভাবনার মৃত্যু হওয়া। হতে পারে সে একদিন বড় কোনো ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতো, হতে পারতো ডাক্তার অথবা দেশের সম্পদ। দেশের জন্যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে দেশের সেবা করতে পারতো। কিন্তু তার আগেই সেই যুবকের জীবন প্রদীপ নিভে গেলো। সেই সাথে নিভে গেলো একটি পরিবারের স্বপ্ন প্রদীপ। পরিবারকে অন্ধকারে ফেলে দিলো। চলছে সেই পরিবারে এখন কান্না আর কান্না। প্রিয় সময়ে ‘খিলক্ষেতে যুবকের লাশ উদ্ধার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এক নিরীহ যুবকের করুণ মৃত্যুর কথা। রাজধানীর খিলক্ষেতের মস্তুুল ব্রিজ সংলগ্ন বালুর মাঠ থেকে জনি মিয়া (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, চার ভাই-বোনের মধ্যে জনিই সবার। সুতরাং জনিই ছিলো সেই পরিবারের ভরসার একটি জায়গা। তাকে নিয়ে সেই পরিবারের বড় স্বপ্ন ছিলো। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে। আর পরিবারের দারিদ্রতা দূর করতেই হয়তো সুযোগ বালুর গদিতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ নিয়ে পরিশ্রম করে যাচ্ছিলো। যেন পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে পারে। অথবা নিজের খরচটা অন্তত অর্জন করে নিজেই যেন চলতে পারে। আর যাতে পরিবারের উপর হাত পেতে টাকা চাইতে না হয়। সেই সাথে অভিজ্ঞতাও অর্জন করছিলো। এই যুবকটি ঢাকার একটি বেসরকারী পলিটেকনিক্যালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করতো। সুতরাং তার সামনে বিশাল ভাবনা ছিলো, পরিবারের সবার দুঃখ ও অভাব দূর করবে। বড় হয়ে ভালো কোনো চাকুরি করে পরিবারকে দারিদ্রমুক্ত করবে। কিন্তু সেই আশা নষ্ট হয়ে গেলো মাত্র বাইশ বছর বয়সেই। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ছিলো বলে আমরা মনে করছি। তাছাড়া তার বুদ্ধিও যথেষ্ট ছিলো। অল্পতেই বুঝতে শিখেছে। কেননা সে করোনাকালীন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ অলস সময় বসে না থেকে বাড়ির পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার উপর গড়ে উঠা দুলাল এন্টার প্রাইজ নামে একটি বালুর গদিতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ নেয়। প্রতিদিন ঐ বালুর গদির হিসাব-নিকাশের কাজ করে চলেছে।

একদিন বালুর গদি থেকে থেকে লোকজনের চিৎকার শুনা যাচ্ছিলো। বালুর গদি বাড়ির পাশেই ছিলো। পরে ওই বালুর গদির এক পার্টনার রাকিব মিয়া নামে একজন এসে জনি মারা যাওয়ার খবর দেয়। আর তার দেহটি বালুর উপর পড়ে রয়েছে। সে সময় যুবকটির মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন ছিলো বলে সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। নিহতের নানী আম্বিয়া খাতুনের ভাষায়, ‘তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ আমরা আশা করবো, নিহতের পরিবারের দাবি অনুযায়ী যেন খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হয়। আর আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

২৩ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ০৭ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, শুক্রবার