দোহারে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের অভিযানে সরকারি খাল দখলমুক্ত

বিশেষ প্রতিবেদক : দোহারে প্রিয় সময় ডট কম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দোহার পৌরসভার ইমারত নির্মাণ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে এবং সরকারি খাল দখল করে উত্তর জয়পাড়া (কুঠিরপাড় মসজিদ সংলগ্ন) এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার ১,২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা আক্তার গংদের বিরুদ্ধে। এমন সংবাদ প্রকাশের পরে কাজ বন্ধ করে স্থাপনা ভেঙে সরকারি খাল দখলমুক্ত করলো দোহার উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১১মার্চ) দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র এ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তিনি স্থাপনার কিছু অংশ ভেঙে দেয় এবং এক দিনের মধ্যে বাকি স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন।

এছাড়া দোহার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ইমারত নির্মাণের কাজ করার অপরাধে, কাজ বন্ধ রেখে সকল কাগজপত্রসহ পৌরসভা হাজির হতে নোটিশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বুধবার (১০ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর জয়পাড়া সরকারি খালের বেশ কিছু অংশ দখল করে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, তাদের ক্রয়কৃত ৬ শতাংশ জমি থেকে সরকারি রাস্তায় কিছু অংশ চলে যায়। বর্তমানে রাস্তা বাদে উক্ত জমিতে পৌনে ৪ শতাংশ জমি মালিকানা রয়েছে। বর্তমানে যে স্থাপনাটি নির্মিত হচ্ছে এটি ক্রয়কৃত জমি বাদ দিয়েও সরকারি খালের বেশ কিছু অংশ দখল করা হয়েছে। এছাড়া তার পূর্বের টিনসেড দোকানগুলো ভেঙে ভবণ নির্মাণ করলেও ভবনের পেছনে অস্থায়ী টিন সেডের স্থাপনা রয়েছে। এর অধিকাংশই সরকারি জমির আওতাধীন রয়েছে বলে জানান তারা।
জানা যায়, ওয়ারিশদের একজন মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার বোন বেগম আয়েশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ায় তাদের দাপটে স্থানীয় অনেকেই সরাসরি কথা বলতে সাহস পান না। তবে অনেকেই চাপা ক্ষোভ নিয়ে জানান, ইতোমধ্যে দোহার উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অনেক সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। এ ব্যপারেও প্রশাসনের ধারাবাহিক ভূমিকা থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা।

এ বিষয়ে দোহার পৌরসভার ১,২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জয়পাড়া মৌজার এস.এ ৩২২ নং দাগে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেছিলেন আমার মা। আমার মায়ের মৃত্যুর পরে ওয়ারিশ সূত্রে ঐ জমির মালিক হয়েছি- আমি-সহ ওমর ফারুক, আমের আলী, কুলসুম বেগম ও সাজেদা। এসময়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন তিনি।

উক্ত জমির ওয়ারিশদের একজন বেগম আয়েশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ কুলসুম বেগম বলেন, আমরা কোনো সরকারি জমি দখল করিনি। তবে কতটুকু জমিতে আমাদের নির্মাণ কাজ চলছে সে সম্পর্কে আমি জানি না। তিনি আরও বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা আমার পেছনে লেগেছেন। সরকারকে নিয়ে সরকারি খালের সীমানা নির্ধারণ করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের কোনোও প্রশ্নে উত্তর না দিয়েই স্থান ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, কেউ যদি ১ ফুটও সরকারি খাল দখল করে কোনোরূপ স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ বিষয়টি আমি জানার পরে সাথে সাথে সরেজমিনে গিয়ে স্থাপনা ভেঙে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি এবং একদিনের মধ্যে সব সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছি।

দোহার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই তারা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ কাজ করছে। তারা এর আগে পৌরসভায় ইমারত নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলো। পৌর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা আছে সরকারি খালের পাশ দিয়ে ২০ ফুট চওড়া রাস্তা হবে। নিয়ম অনুযায়ী সরকারি রাস্তার পাশে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন সাপেক্ষ রাস্তার দু’পাশে ১০ ফুট করে অতিরিক্ত জায়গা রেখে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু উক্ত জমিটি সরকারি রাস্তা ও খাল সংলগ্ন হওয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ তখন সেখানে কাজ করার অনুমোদন দেয় নি। বর্তমানে তারা পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে তাদেরকে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভায় আসার জন্য নোটিশ দিয়েছি।