শিবচর বাজারে আগাম তরমুজ, দাম চড়া

মাজহারুল ইসলাম (রুবেল), শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধিঃ

বসন্ত প্রায় শেষ। ক’দিন বাদেই গ্রীষ্মকাল শুরু হবে। ভ্যাপসা গরমে তৃষ্ণা নিবারণে ও প্রশান্তির জন্য তরমুজের একটি ফালি যথেষ্ট। মাদারীপুর শিবচর উপজেলার হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ। রসাল ফল হিসেবে তরমুজের চাহিদা ব্যাপক। মৌসুমের নতুন ফল কিনতে দোকানে ভিড় করছেন অনেকে। গ্রীষ্মকালের এই ফল নিয়ে ঘরে ফেরেন হাটবাজারে আসা অধিকাংশ মানুষই। তবে বেশি দামের কারণে সব শ্রেণির মানুষ কিনতে পারছেন না।

মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) উপজেলার হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্বল্প দামের তরমুজ কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। ছোট আকারের তরমুজ ১২০-১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে ১২০-১৫০ টাকার নিচে তরমুজ নেই। মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তরমুজের আকার অনুযায়ী দাম বেশি হওয়ায় কিছু মানুষ খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তরমুজ কেনা বেশ কষ্টকর হয়ে উঠছে দিন দিন।

কাদিরপুর এলাকার ভ্যানচালক খলিল মিয়া বলেন, ‘বাজারে মৌসুমের নতুন ফল তরমুজ উঠেছে। কেনার ইচ্ছায় দোকানে গিয়ে দাম শুনে খাওয়ার ইচ্ছা চলে গেছে। একটি তরমুজ কিনতে দেড়শ থেকে দুইশ’ টাকা লাগবে। সারাদিনে আমাদের আয় যা হয়, তা দিয়ে চাল-ডাল কিনবো নাকি তরমুজ কিনে খাবো!’

তরমুজ বিক্রেতা সবুজ হোসেন বলেন, আমাদের অঞ্চলে তরমুজের আবাদ তেমন হয় না। কয়েকটি এলাকাতে আবাদ হলেও এই সময়ে বাজারে আসে না। এখনই দাম মোটামুটি ঠিক আছে। আর বাড়লে সমস্যা হবে। আমরা পাইকারি কিনে আনি। দাম কমলে খুচরা বাজারেও দাম কম হবে।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় জানান, বরিশালের তরমুজ দিয়েই শিবচরের চাহিদা মেটে। শিবচর অঞ্চলে ফাল্গুন মাস থেকেই সচরাচর গরম পড়তে শুরু করে। এ অঞ্চলে গরম বেশি পড়ায় তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকে। লাভবান হতে ব্যবসায়ীরা মৌসুম জুড়ে তরমুজ ব্যবসায় ঝুঁকছেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, তরমুজে খুব সামান্য ক্যালরি আছে। তাই তরমুজ খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। মৌসুমী এই ফলটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হলো ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি খেলে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত অসুস্থতা কমে। এ ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে না। তরমুজের আরও একটি গুণ হলো এটি চোখ ভালো রাখতে কাজ করে। তরমুজে ক্যারোটিনয়েড থাকায় এ ফলটি চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। একইসঙ্গে চোখের নানা সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে তরমুজ।

কেজি দরে ও কেটে তরমুজ বিক্রি বন্ধের নির্দেশ

তরমুজের দাম নিয়ে অরাজকতা বন্ধে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। বৈঠকে তরমুজ কেজি দরে ও কেটে বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রকিবুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রকিবুর রহমান খান জানিয়েছেন, পিস হিসেবে তরমুজ কিনে বরিশালে ভোক্তা পর্যায়ে তা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। তারপরও আমরা চাইছি ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে।

এ কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মধ্যে তরমুজ পিস হিসেবে কিনে ভোক্তাদের কাছে পিস হিসেবেই বিক্রি করতে হবে। কেজি দরে বিক্রি করা যাবে না। এছাড়া তরমুজ কেটে বিক্রি করা যাবে না। পাশাপাশি আড়ৎদাররা মূল্য তালিকার বাইরে বাড়তি মূল্য আদায় করতে পারবেন না। এসব সিদ্ধান্ত অমান্য করলে জেলা প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।