হাইমচরে আতংকের মাঝে ভয়ংকর সাঁকো দিয়ে রাস্তা পারাপার

সাহেদ হোসেন দিপু :

৭০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো, সেই সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে ইতিপূর্বে ৩জন লোক মৃত্যুবরণ করেছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য লোক। হাত, পা ভেঙে পঙ্গু ও অকর্ম হয়ে সংসারের ভোজা হয়েছেন বেশ কিছু লোক। এলাকাবাসী এ সাঁকোর নাম দিয়েছেন মৃত্যুকুপ। তবুও ব্রিজ কিংবা কালভার্ট নির্মানে কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। যার ফলে স্থানীয় লোকজনের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ। ঐ সাঁকোর পরিবর্তে ব্রিজ নির্মান না হওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছে সরকারের উন্নয়ন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের মধ্যচরের পরিচিত ও আলোচিত চেয়ারম্যান বাজার। যে বাজারে যেতে নদীর পাড় থেকে রয়েছে ইটের রাস্তা। রয়েছে অটো রিক্সার ব্যবস্থাও। ইটের রাস্তাটি চেয়ারম্যান বাজার হয়ে ইশানবালা ঘাট পর্যন্ত থাকলেও চেয়ারম্যান বাজার পর্যন্তই এর সুফল। কারন চেয়ারম্যান বাজারের পাশে রাস্তার মাঝ খানে রয়েছে একটি খাল। খালের উপর রয়েছে ঝুকিপূর্ন বাঁশের সাঁকো। যে সাঁকোতে পার হতে গেলে নিছের দিকে তাকালে হাত পায়ের শক্তি অচল হয়ে যায়, দোয়া দুরুদ পরে পার হতে হয় সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে ৩৯ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪শত শিক্ষার্থীর যাতায়াত করে স্কুলে যেতে হয়। ভয়ংকর এ সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে অনেক ছাত্র ছাত্রী গুরুতর আহত হওয়ার মতও ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সাঁকো পার হওয়ার ভয়ে স্কুলে আসতে পারেনি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। প্রাক প্রাথমিক, প্রথম শ্রেনী ও ২য় শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে ক্লাস করছেন না। এই ভয়ংকর সাঁকো দিয়ে প্রতিনিয়ত ৪থেকে ৫শত লোক জীবনের ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি মানুষের কাছে এ সাঁকোটি ভয়ংকর ও আতংকের নামে মৃত্যুকুপে রুপান্তরিত হয়েছে।

স্থানীয় আমিন, শাহাদাত হোসেন অলি, পল্লী চিকিৎসক মনিরসহ কয়েকজন পথচারি ক্ষোব প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো দিয়ে দীর্ঘ অনেক বছর দরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ সাঁকো অনেক ঝুকিপূর্ন ভয়ংকর। এখান থেকে পড়ে তিনজন লোক মারা গেছে। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা সহ অনেক লোক আহত হয়েছে। এত বড় বড় দূর্ঘটনা হওয়ার পরেও এখানে কোন ব্রিজ করা হয়নি। আমাদের আর কত লোক মারা গেলে ব্রিজ হবে। সেই যে একবার এসে মাটি পরিক্ষা করে গেছে আর আসার কোন খবর নেই।
আমরা যারা এখানে বসবাস করি তারাই জানি এ সাঁকোটি কতটা ভয়ংকর। তাছাড়া নদীর পাড় থেকে ঈশানবালা ঘাট পর্যন্ত সরকার ইটের রাস্তা বানিয়েছে। এখানে অটোও চলে কিন্তু ব্রিজ না থাকায় অটোগুলো ঘাট পর্যন্ত যেতে পারছে না। সাঁকোটি পার হতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। আমরা চাই আমাদেরকে ভয় ও ঝুকিমুক্ত একটি ব্রিজ অথবা কালভার্টের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। আপনারা মিডিয়ার লোক আপনাদের লেখনির মাধ্যমে যেন আমাদের এ সমস্যাটি সমাধান হয়।

দক্ষিণ নীলকমল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিয়াকত আলী জানান, আমাদের স্কুলে সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসে। সর্বদাই আতঙ্কে থাকতে হয় কখন কার হতাহতের সংবাদ আসে। চলতি বছর আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী এ সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে।

তাই, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন খালের উপর সাঁকোর পরিবর্তে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সুদৃষ্টি কামনা করছি।

নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সউদ আল নাছের বলেন, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলে চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন সাঁকোটি শিক্ষার্থী ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে দুটি ওয়ার্ডের যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজতর ও উন্নত হবে। তাই ঝুকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর জায়গায় একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য জায়গার খতিয়ানসহ পিআইও অফিসে আবেদন করেছি। সল্ট টেস্ট করানো হয়েছে। এখনো কাজের কোন অগ্রগতি দেখছি না। আপনাদের মত আমিও চাই এখানে একটি ব্রীজ হোক।

উপজেলা সহকারি উপ প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান জানান, নীলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন বাশের সাঁকোর জায়গায় একটি ব্রিজ নির্মানের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। গত এক বছর পূর্বে ঐখানের সল্ট পরিক্ষা করানো হয়েছে। কবে কখন এখানে ব্রিজের অনুমোদন আসে বলা যাচ্ছে না। ব্রীজ নির্মানের অনুমোদনের কোন অগ্রগতি দেখতেছি না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, ঝুকিপূর্ন সাঁকোর জায়গায় যাতে দ্রুত একটি ব্রীজ নির্মান করা জায় সে লক্ষ্যে আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করবো। এখানে ব্রীজ নির্মান করতে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।